পূর্ব পরিচিত জনৈক ব্লগার ম্যাসেজ দিয়ে খুব সুন্দর একটা প্রশ্ন করেছেন। জানতে চেয়েছেন অতীতের মত কেন এখন দুই মহিলা, দুই পরিবার এবং দুই দলের বিরুদ্ধে সমান ভাবে কলমবাজি করছিনা। কেবল শেখ কন্যা ও তার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে আমার নামের প্রতি নাকি সুবিচার হচ্ছেনা। ১/১১'র তত্ত্বাবধায়ক আমলে ফেসবুকের প্রসার দূরে থাক বাংলা ব্লগের প্রভাবও ছিল সীমিত। সে সময়টায় আমার সাথে যারা নিয়মিত ছিলেন তাদের কিছুটা অবাক হওয়ারই কথা। উদ্দিনস্ গং ও তাদের শাসনের আসল অটোপসি বাজারজাত না হওয়া পর্যন্ত বরবারই সে সময়টার সমর্থক থেকে যাবো। কারণ ক্ষমতার দিগন্তরেখায় ওদের আগমন না ঘটলে স্বদেশী রাজনীতিবিদ ও এর উচ্ছিষ্ট-খোর আমলা, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, রেন্ডির ছাওয়াল বুদ্ধি ব্যবসায়ী, ছাত্র, শিক্ষক, বিচারক, আইনজীবী সাংবাদিকদের কাপড়ের তলায় আকাটা বাল কতটা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল তা কোনদিনই জানা হতনা। বিশেষ করে আমার মত ম্যাঙ্গোদের। শেখ হাসিনার চেকের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, বাকের ভাইয়ের খাটের তলার কোটি টাকা, আমানুল্লাহ আমানের বিল গেইটসের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, শেখ সেলিমের মোঘল সাম্রাজ্য, মেম্বার চেয়ারম্যানদের রিলিফ চুরি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য সরবরাহ লোপাট, নাজমুল হুদার সস্ত্রীক জমি ডাকাতি, এসব গৌরবময় অধ্যায় কি কোনদিন আলোর মুখ দেখতো তাদের আগমন না ঘটলে? স্বার্থের লড়াইয়ে উদ্দিনরা হয়ত নিজেদের বলি দিয়েছেন, কিন্তু এ ফাঁকে রাজনীতিবিদ নামের একদল চোরের পরিধেয় বস্ত্র উন্মোচন করে কিছুটা হলেও উপকার করে গেছেন। যার কারণে আমরা এখন যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল বুঝতে পারি এ দেশে রাজনীতি কেন এত জরুরি, কেন এত সংঘাতময়। এ পুত ও দুর্গন্ধময় রাজনীতিরই অবিচ্ছেদ্য খেলোয়াড় শেখ হাসিনা।
প্রয়োজনে মাথায় হিজাব, দরকারে মদিনা সনদ, ক্ষণিকের দ্যুতি ছড়াতে মুখে মা দুর্গা, ক্ষমতার সিঁড়ি মসৃণ করতে তত্ত্বাবধায়ক, একই পথ পিচ্ছিল করতে শাসনতন্ত্র সংশোধন, মুখের ভাষায় পায়ুপথের গন্ধ, দেশের রাজনীতি তথা অর্থনীতিকে চোরাগলিতে নিয়ে যাওয়ার একক কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন এই হিংস্র ও ভয়াল মহিলা। একই কাতারে খালেদা জিয়াকে দাড় করিয়ে সুশীল সাজার সুযোগ নেই এ মুহূর্তে। আজকের ক্রাইসিস শেখ হাসিনার একক সৃষ্টি এবং এর পুরো দায়-দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। যানবাহনে যাত্রীদের জীবন্ত কাবাব বানিয়ে ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করার সম্ভাবনা এ মহীয়সীরই আবিষ্কার। মানব বি-বি-কিউ'র স্বাদ কেবল তিনি একা ভোগ করবেন আর বাকিরা দূর হতে তালি দিয়ে ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা হয়ে বেঁচে থাকবে এমনটা আশাকরা হবে অবাংলাদেশি বাস্তবতা। রাজনৈতিক ক্ষমতা হাতে পেয়ে ভাগ্য চাকায় চাবি লাগানোর যে তন্ত্রমন্ত্র তা অনেক আগেই আবিষ্কার করে গেছেন উনার স্বনামধন্য পিতা শেখ মুজিবর রহমান। একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের মূল নায়কও এই বহুমুখী স্বৈরশাসক। পিতা নামের মুকুট মাথায় নিয়ে এতটাই বিমোহিত ছিলেন জানতে চাননি কম্বল চোরদের পরিচয়। খুন, গুম আর বিনা বিচারে নাগরিকদের জবাই করে দম্ভ করার সংস্কৃতি এ দেশে কোন কালেও চর্চা হয়নি। শেখ মুজিব সেই শাসক যার হাত ধরে বিস্তার লাভ করেছে এ অন্ধকার দিক। স্বাধীনতা প্রাপ্তির চার বছরের মাথায় মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে একদলীয় জগদ্দল পাথর চাপিয়ে দিয়েছিলেন জাতির বুকে। সে পথ পরিষ্কার করতে গিয়ে জাতিকে বরণ করতে হয়েছিল সামরিক স্বৈরশাসকদের। এরশাদের মত জাত চোর ক্ষমতার গদিতে নয় বছর আসীন ছিল তার দায়-দায়িত্ব কি আওয়ামী লীগের নয়? আজকে কথায় কথায় আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে প্রতিপক্ষ বিএনপির জন্ম নাকি সেনা-ছাউনিতে। কেন এবং কার কারণে দলটার জন্ম হয়েছিল এ প্রশ্ন কি কোনদিন করে দেখেছেন আওয়ামী গং'রা? দেশকে চুরি চামারির চারণভূমি বানানোর একক লাইসেন্স কেউ দেয়নি শেখ মুজিবকে। চুরিই যদি আমাদের বেঁচে থাকার অন্যতম মাধ্যম হয়ে থাকে তাহলে সে চুরিতে সবার সমান অধিকার থাকাটা ছিল গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচারে বাংলাদেশের আসমান জমিনের সবকিছুতে তাদের অধিকার ঈশ্বর প্রদত্ত এবং এ অধিকার নিয়ে যারাই প্রশ্ন তুলবে হয় তারা স্বাধীনতা শত্রু অথবা চেতনার পরিপন্থী এবং তাদের সশরীরে নির্মূল করা তাদের জন্মগত অধিকার। বাবার অসমাপ্ত বাকশাল মিশন সমাপ্ত করার 'পবিত্র' দায়িত্ব নিয়ে এ যাত্রায় ক্ষমতা জবরদখল করেছেন শেখ হাসিনা। এবং জোর গলায়ই বলছেন আগামী চল্লিশ বছর ক্ষমতা ধরে রাখার।
বেগম খালেদা জিয়া এবং তার দলও ধোয়া তুলসীপাতা নয়। ক্ষমতার মানসসরোবরে তারা কিভাবে অবগাহন করেছিলেন তার ইতিহাস এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়ার কথা না। পার্থক্যটা হচ্ছে খালেদার খাম্বা চুরির তুলনায় হাসিনার ব্যাংক, বীমা, সেতু, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, গ্যাস সহ দেশীয় অর্থনীতির সবকটা প্রতিষ্ঠানকে চুরির ভাগার বানানোর অপরাধ হিমালয় সমান। তাই খালেদা জিয়ার ব্যর্থতা ও অপরাধ দিয়ে শেখ হাসিনার অপরাধ পবিত্র করার অবকাশ নেই। একবিংশ শতাব্দীর গোঁড়ায় দাড়িয়ে আমরা এসব অন্যায় ও অপরাধ কোন ভাবেই মেনে নিতে পারিনা। এবং তা যদি হয় আগামী চল্লিশ বছরের জন্য। হাসিনার কৃত অপরাধের শাস্তি চাওয়া মানেই খালেদার পক্ষাবলম্বন নয়। শেখ হাসিনা তার বাবার মতন আবারও আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। প্রতিপক্ষকে শারীরিকভাবে নির্মূলের অভিযানে নেমেছেন। এ মুহূর্তে আমাদের প্রধান কাজ হবে জাতির বুক হতে এ হায়েনাকে নামানো। হতে পারে খালি বুকে খালেদা গং'রা চেপে বসবে এবং নতুন করে রচনা করবে দেশ শাসনের কলঙ্কিত অধ্যায়। আমরা কলমবাজরা শেখ হাসিনার বিদায়ের সাথে থেমে যাচ্ছিনা। একই কলম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরবো নতুন ডাকাতদের বুকে। অন্তত এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি আমার সহ-ব্লগারকে।