জনাবা শেখ হাসিনা, ওয়াচডগের খোঁয়াড়ে আপনাকে স্বাগতম। মুল ইন্টারভিউতে যাওয়ার আগে খোঁয়াড় সম্পর্কে একটা ভূমিকা না দিলে আপনার প্রতি অবিচার করা হবে। প্রথমেই বলে নেই এ খোঁয়াড় যেহেতু বাংলাদেশে অবস্থিত নয় তাই দেশটার কিছু সহজাত নিয়ম কানুন মানতেও আমরা বাধ্য নই। এই যেমন কথায় কথায় ক্ষমতাসীনদের মাননীয়া, মহামান্যা বলে সম্বোধন করার সংস্কৃতি। জনাব/জনাবা হচ্ছে ইংরেজি মিঃ এবং মিস/মিসেসের বাংলা ভার্সন। আপনার জানা থাকার কথা বিশ্বের সবচাইতে ক্ষমতাধারী রাষ্ট্রপ্রধানের বাস এ দেশে। এমন মহা-শক্তিশালী একজনকে এ দেশের তথ্য মাধ্যম জনাব বলেই সম্বোধন করতে অভ্যস্ত। তাতে তিনি নিজে যেমন অপমানিত বোধ করেন না, তেমনি উনার দলীয় অথবা আমলাতান্ত্রিক সমর্থকরাও লাঠিসোটা নিয়ে মারতে আসেন না। আশা করবো আপনিও জনাবা শব্দটার সাথে আপোষ করবেন এবং কথায় কথায় মাননীয়া/মহামান্যা বলার বিরক্তি হতে আমাকে মুক্তি দেবেন। এবার আসা যাক মূল পর্বে।
- তা কেমন আছেন আপনি?
- ভূমিকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি ভাল আছি। তবে একটা দিক এখানে না তুললেই নয়। বাংলা ভাষায় আমার যতটুকু জ্ঞান আছে তাতে বুঝি খোঁয়াড় সাধারণত পশুদের সাময়িক বন্দী রাখার জন্য তৈরি হয়। তা আপনি কি আমাদের পশুর কাতারে ফেলে এখানে আপ্যায়ন করছেন?
- হা হা হা, আপনার বাংলা জ্ঞানের প্রশংসা না করলেই নয়। তবে জানেন কি কদিন আগে এ দেশের সুপ্রিমকোর্ট সমকামীদের বিয়ে বৈধ করেছে। দুদিন পর মানুষ আর পশুকে যদি সমান আসনে বসিয়ে সবকিছুর বৈধতা দেয় অবাক হবোনা। আমেরিকা স্বাধীন দেশ। পশুর পাশাপাশি খোঁয়াড়ে মানুষ আটকানোতেও এ দেশে বাধা নেই। কারণ এ দেশে খোঁয়াড় বলতে কোন স্থাপনা নেই। আশাকরি নাম নয়, কাজ দিয়েই আমাদের বিচার করবেন।
- তা যা বলেছেন। প্রাসঙ্গিক ভাবে কবি গুরুর একটা গানের কথা মনে পড়ে গেল।
- রক্ষা করুন! এখানে আপনাকে থামাতে হচ্ছে শ্রোতাদের সময়ের কথা ভেবে। তারা আপনার মুখ হতে দেশের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক প্রসঙ্গ নিয়ে কথা শুনতে চায়। গান এখানে কাঙ্ক্ষিত নয়। আপনি গান শোনাতে চাইলে আমাদের গানের বিভাগ আছে সেখানে যোগাযোগ করতে পারেন।
- কবি গুরুর কোন দেশ নাই, জাতি নাই। তার গান শুনতে বিশেষ কোন সময়েরও প্রয়োজন হয়না। তার জন্য চাই বাংলার প্রতি বিশেষ ভালবাসা। আর তার গান শুনতে যারা বাধ সাথে তারা দেশের শত্রু, মানবতার শত্রু।
- তা আপনি বলতেই পারেন। কথায় বলে মানুষ অভ্যাসের দাস। তাই মানবতার শত্রু সম্পর্কিত আপনার মন্তব্য আমি সহজ ভাবেই নিচ্ছি। আপনার মুখের সাথে বাংলাদেশি তথা বাংলার সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রায় সবাই পরিচিত। ধন্যবাদ আপনাকে। এবার প্রসঙ্গ বদলানো যাক। জীবনের কোন এক সময় আপনি বলেছিলেন ষাট বছর বয়সে রাজনীতি হতে অবসর নিবেন। এমনকি বিবিসির বাংলা বিভাগের এক সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন দেশের রাজনীতিকে আপনি ঘৃণা করেন, কিন্তু মা-বাবা সহ পরিবারের বাকি সবার হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে এই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন। প্রশ্ন, আপনার বয়স কি ষাট পেরোয়নি? হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেয়া কি শেষ হয়নি?
- আপনার দুটো তথ্যই মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি বলবো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পরিবারকে হেয় করার অপকৌশল মাত্র। আমি ততদিনই রাজনীতি করবো যতদিন এ দেশের মানুষ চাইবে। তার বাইরে একদিনও রাজনীতি অথবা ক্ষমতায় আমাকে দেখবেন না।
- আমার বুঝা যদি সঠিক হয় আপনি বলছেন যতদিন এ দেশের মানুষ চাইবে। তা আপনি কিভাবে বুঝছেন যে জনগণ আপনাকে রাজনীতিতে দেখতে চাইছে? বিশেষ করে ক্ষমতার রাজনীতিতে?
- আপনি আন্ধা আর কালা হলে তা দেখা অথবা বুঝার কথা নয়। জনগণের ভালবাসায় সিক্ত হয়েই আমি ক্ষমতার রাজনীতি করছি। চোখ খুলে চারদিক তাকালেই তা বুঝতে পারবেন।
- হতে পারে আপনার দেশের জনগণের ভালবাসা সবটাই ঐশ্বরিক, তাই আমার মত প্রবাসীর বুঝতে অসুবিধা হয়। আমরা সাধারণত রাজনীতিবিদদের প্রতি জনগণের সমর্থন নির্বাচনী ম্যান্ডেট হতে বের করে আনি। এ ব্যাপারে জনগণের রায়ই তাদের ভালবাসার প্রতিফলন। তবে এ ভালবাসা আপনার দেশের মত প্লেটোনিক নয়। প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতা দেখালে নির্বাচনেই জনগণ রাস্তা দেখায়। তা আপনি কোন ব্যারোমিটারে জনসমর্থন অথবা ভালবাসা মেপে থাকেন?
- আমি বঙ্গবন্ধুর সন্তান। বঙ্গবন্ধুই দেশ, বঙ্গবন্ধুই জাতি। এ দেশের আকাশ বাতাস যতদিন টিকে থাকবে ততদিন জনগণের ভালবাসাও থাকবে। আর যদি নির্বাচনী ম্যান্ডেট বলেন তা হলে বলতে হয় আমার দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা পৃথিবীর যে কোন দেশের জন্য রোল মডেল হবার যোগ্য। আমি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই ক্ষমতায় আছি।
- জনগণ বলতে এখানে আপনি কাদের বুঝাতে চাইছেন তা বোধগম্য হচ্ছেনা। যা হোক সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আমাদের বিরতিতে যেতে হবে। যাওয়ার আগে একটা একান্ত ব্যক্তিগত প্রশ্ন: আপনি কি সব সময় আপনার পিতাকে বঙ্গবন্ধু বলেই সম্বোধন করে থাকেন? কেউ কোনদিন আপনার মুখ হতে বাবা অথবা আব্বা ডাক শুনেছে বলে মনে হয়না। বিরতির পর একটু খুলে বলবেন কি রহস্যটা?
- চলবে
https://www.facebook.com/watchdog.bd