দুদিন পর ১৫ই আগস্ট। মৃত্যু-দিবস ও জন্মদিবসের বেড়াজালে আটকে জাতিকে ঘোলা পানি খাওয়ানোর মোক্ষম একটা উপলক্ষ। রিলিজিয়াস কালট সংস্কৃতির সাথে যাদের পরিচয় আছে তাদের হয়ত মনে আছে ডেভিড কোরেস অথবা জিম জোন্সের কথা। একজন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াকো শহরে এবং অন্যজন গায়ানার গহীন জঙ্গলে মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে একদল মানুষের ভগবান সেজে রাজত্ব করেছিলেন। উপলক্ষ ছিল স্বঘোষিত ধর্ম। ডেভিড কোরেশের সাথে সরকারের বিরোধ ছিল আইনগত। কিন্তু আইনকে ধর্মের ফাঁদে আটকে কৃত অপরাধ ঢাকতে ব্যবহার করেছিলেন অন্ধ অনুসারীদের। ধরা দেয়ার আগে আগুন লাগিয়ে গোটা রাজত্বকেই মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিলেন। নিজে মরলেন এবং সাথে নিলেন আরও ৮০ জনের জীবন। যার ২০ জনই ছিল অবুঝ শিশু। জিম জোনসের ব্যাপারটা ছিল আরও ভয়াবহ। সমাজ সংসার হতে বিতৃষ্ণ একদল আমেরিকান ঠাঁই নিয়েছিল গায়ানার গহীন জঙ্গলে। জিম জোন্স ছিল তাদের ভাগ্যদেবতা। কেয়ামত কবে হবে তা নাকি তিনি জানতেন। তাই আগেভাগে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করার জন্য অনুসারীদের তাগাদা দিয়েছিলেন। তারই ফলশ্রুতিতে ৯০৯ জন আমেরিকান পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। এ গণহত্যার প্রথম শিকার ছিল গোত্রের সবকটা শিশু। ধর্ম ও অন্ধ বিশ্বাস মানুষকে কতটা পাগল বানাতে পারে তার নির্মম উদাহরণ ওয়াকো ও গায়ানার জোনসটাউন। যদিও এ ধরনের পৈশাচিক গণহত্যা আমাদের এখানে এখনো ঘটেনি, কিন্তু একদল রক্তমাংসের আদমকে বিবেকের সবকটা জানালা বন্ধ করে উন্মাদ বানানোর সব প্রক্রিয়াই ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকি কেবল বিরাট একটা শো-ডাউনের। আগস্ট মাস তেমনি একটা শো-ডাউনের প্রেক্ষাপট। একদল মাসের শুরুতে কাঁদার সানাই বাজিয়ে জাতিকে গোটা মাস কাঁদতে বাধ্য করে। অন্যদল জন্মদিন পালন নিয়ে মুখোমুখি হয় বিশাল এক দৈত্যের। ভাবটা এমন আমরা যেন ডেভিড কোরেশ অথবা জিমি জোনসের উত্তরসূরি। ভগবান সেজে আমদের ভাগ্যের আগাম বার্তা দেন উনারা। একটা জাতি নষ্ট হয়ে পচে গলতে শুরু করেছে। সমস্যার পরিসর মাটির পৃথিবী পেরিয়ে মার জরায়ু পর্যন্ত প্রবেশ করতে শুরু করেছে। অথচ আমাদের শুনতে বাধ্য করা হচ্ছে শোকের সানাই, নিতে বাধ্য করা হচ্ছে আলিশান কেকের মিষ্টি স্বাদ। মানুষ আপন পিতার মৃত্যুতেও শোকাভিভূত হয়ে সপ্তাহ অতিবাহিত করেনা। অথচ গোটা জাতিকে বলা হচ্ছে মাস ভরে কাঁদতে। কান্নাকাটির সিম্ফোনিতে জাতিকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে তেনারা নিবিড় ভাবে চালিয়ে যান ভাগ্য গড়ার কলকব্জা। এক মাসের জন্য জীবন থমকে যেতে বাধ্য করা হলেও থমকে যায়না বন্দুকের নল। থেমে যায়না টেন্ডার বাণিজ্য। থমকে দাঁড়ায়না ব্যাংক লুট। অস্ত যায়না সন্ত্রাসী রাজত্বের। অথচ কোথায় কে জন্মদিনের কেক কাটলো তা নিয়ে চলে কারবালার মাতম।
আমাদের সমস্যার শিকর অনেক গভীর। এ গভীরতা কেক কাটার ছুড়ি দিয়ে উপড়ে ফেলার মত নয়। কেবল আগস্ট মাস নয়, জাতি হিসাবে আমাদের কাঁদতে হয় গোটা বছর। অপশাসন ও কুশাসনের জালে আটকে একদল লুটেরা আমাদের ভাঁওতা দিচ্ছে। আগস্ট মাসের ম্যারাথন শোক সে ভাঁওতাবাজিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ।