অপরাধ ও শাস্তি...এ কেবল ফেওদর দস্তয়েভস্কির বিখ্যাত উপন্যাসের টাইটেলই নয়, এ সভ্য দুনিয়ার সভ্যতার প্রাথমিক উপাদান। আদম ও শ্রম শোষণের পোশাক রফতানি করে অর্থনীতির চাকায় আমরা প্রয়োজনীয় হাওয়া লাগিয়েছি। তার উপর ভর করে অর্থনীতি যতটা না গতি পেয়েছে তার চাইতে ঢের বেশী গতি পেয়েছে আমাদের মুখ। মধ্য আয়ের দেশে পা রেখে এখন স্বপ্ন দেখছি আরও বড় বড় উচ্চতা অতিক্রম করার। কিন্তু হায়, অর্থনীতির চাকা সচল হলেও একই গতিতে পিছিয়ে পরছে আমাদের মানবিক বিকাশ। মানুষ হিসাবে দাবি করলেও আমাদের মধ্যে এমন অনেক কিছুই নেই যা সে দাবির প্রতি সমর্থন যোগাতে পারে। অপরাধ ও শাস্তি তার অন্যতম। রাজিন ও রাকিব হত্যা নিয়ে কোথাও না হোক অন্তত ভার্চুয়াল দুনিয়ায় অনেক আলোচনা, সমালোচনা হয়েছে। আমরা একবাক্যে অপরাধীর শাস্তি দাবি করেছি এবং এখনো করছি। তবে সে দাবির ধরণটাও খতিয়ে দেখার দাবি রাখে। শাস্তি হিসাবে আমরা বেশিরভাগ মানুষই দাবি করছি অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড। এবং তা এখনই। এক কথায়, স্থায়ী হয়ে যাওয়া সরকারী স্পনসরে অবৈধ হত্যা। হত্যার বদলে হত্যা, খুনের বদলে খুন! এমনটাই আমাদের অপরাধ ও শাস্তির মানচিত্র। জাতি হিসাবে আমারাও তা মেনে নিয়েছি। তা হলে রাজিন আর রাকিবকে যারা হত্যা করলো তাদের সাথে আমাদের পার্থক্যটা কোথায় রইল? সামান্য চুরির অপরাধে একজন কিশোরকে তিলে তিলে হত্যা করা হল এবং বিচারে আমরা দাবি করছি আরও দ্রুত একটা হত্যাকাণ্ডের।
এখানেই আসেে আমাদের আইন ও বিচার ব্যবস্থার করুন চিত্র। রাজিনের লাশ মাটির উপর রেখেই খুনিরা ফয়সালা করে পুলিশের সাথে। সামাজিক মাধ্যমের চাপে পড়ে আইনের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু মানুষ ঘাটাঘাটি করলেও রাজিন হত্যাকাণ্ড এক সময় থিতিয়ে আসবে। আইন ও বিচার ব্যবস্থার হাত ধরেই খুনিরা সমাজে ফিরে আসবে। দাপিয়ে বেড়াবে। এবং জন্ম দিবে নতুন হত্যাকাণ্ডের। স্বভাবতই হাতের বদলে হাত, খুনের বদলে খুন কোনভাবেই নিশ্চিত করবেনা আমাদের নিরাপত্তা। আমাদের সমস্যার গোঁড়া নষ্ট রাজনীতির জরায়ুতে। ওখানেই জন্ম নেয় রাজিন ও রাকিবের খুনিরা। আর তাদের লালন পালনের মাধ্যমে নিজদের ভাগ্য গড়ার জন্য আছে আমাদের আইন রক্ষাকারী বাহিনী...আছে নিম্ন ও উচ্চ আদালতের বিচারক গন। শিশু রাজিন, কিশোর রাকিব অথবা ব্লগার নীলাদ্রি হত্যার বিচার হয়ত দুয়েকজনের জেল-হাজতের মাধ্যমে দফারফা হবে, কিন্তু এ ফাঁকে জন্ম নেবে নতুন রাজিন, নতুন রাকিব এবং নতুন নতুন নীলাদ্রি।