হোক তা ১৫ই আগস্টের শোক অথবা শেখ হাসিনার সমুদ্র জয়, দেশকে লাল সালামের বিপ্লবী সমুদ্রে ভাসাতে উপলক্ষের অভাব নেই এখন। অলিগলি, রাজপথ, চৌরাস্তার মোড়, পেচ্ছাবখানা, প্রসবখানা, মক্তবখানা, লঙ্গরখানা, বেশ্যাখানা, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, বাজার-বন্দর...এক ইঞ্চি জায়গা বাদ থাকেনা যেখানে সংগ্রামী সালামের লাল ঝাণ্ডা উড়তে দেখা যায়না। অমুক ভাই, তমুক নেতা, সংগ্রামী নেতা, জেলখাটা নেতা, আমার নেতা, তোমার নেতা, প্রাণপ্রিয় নেতা, বঙ্গবন্ধুর বাম হাত, শেখ হাসিনার ডান হাত, জয়ের শুভাকাঙ্ক্ষী, পুতুলের ভক্ত, শেখ কামালের শোকে মুহ্যমান, শেখ জামালের শোকে শোকাহত, শেখ রাসেলের রক্তে রক্তস্নাত...এমনি বহুমাত্রিক হাজার বানীতে ভাসতে থাকে জননী জন্মভূমি। কাঁদতে বলা হয় আমাদের। শোকের মাতমকে বহমান পদ্মা-মেঘনা-যমুনার ঢেউয়ে ভাসিয়ে দিতে অনুরোধ করা হয়। কেবল তখনই নাকি একদিনের শোক পরিণত হয় অনন্তকালের মহাযাত্রায়। শিহরিত হই আমরা। দেশপ্রেমের ভাণ্ডারকে নতুন করে প্রণাম করি। জন্ম সার্থক ভেবে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। বানীর ভেতরও বানী থাকে, যা বাহির হতে দেখা যায়না। তার জন্য ঢুকতে হয় ভেতরে। অন্তত বাংলাদেশের বেলায়।
জেলখাটা একজন দাগী আসামী কেন শেখ হাসিনাকে লাল সালাম দিচ্ছে তার জবাব আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে খুব সোজা। যোগ্য নেত্রীর যোগ্যতাকে স্বীকার করে নিচ্ছে মাত্র। আসলেই কি তাই? লাল সালামের বিপ্লবীর কাঁধে গোটা তিনেক খুনের মামলা, গোটা পাঁচেক ধর্ষণ মামলা, গঞ্জের হাটে গরুর হাট দখল করার নীলনকশা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থন লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। এসবের জরায়ুতেই জন্ম নেয় লাল সালাম...শোকের মাতম, রক্ত প্রতিজ্ঞা। অবাক হয়নি মায়ের গর্ভে গুলিবিদ্ধ সুরাইয়ার ঘাতকও যোগ দিয়েছে এ মিছিলে। কারণ তাকেও যে বাঁচতে হবে! আর বেঁচে থাকতে চাইলে তাকেও টেন্ডার বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করতে হবে। পথের কাঁটা প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের গালে থাপ্পড় মারতে হতে। সুরাইয়ার মাকে ধর্ষণের আওতায় আনতে হবে। থানা-পুলিশকে হাতের মুঠোয় রাখতে হবে...কারণ সে যে ক্ষমতার অতন্দ্র-প্রহরী... বঙ্গবন্ধুর সৈনিক... শেখ হাসিনার ডানহাত... জয়ের বামহাত...