তবে এবারের ইস্যু লতিফ সিদ্দীকি অথবা ব্লগার নির্মূল নয়, ইস্যু সানি লিওন! সাবেক পর্ণ তারকা ও ইদানীংকালের বলিউড নায়িকা সানি লিওনকে এ দেশের মাটিতে পা ফেলতে দেবেনা হেফাজতে ইসলাম। চট্টগ্রাম ভিত্তিক এই দলের থিংক ট্যাংকরা নিজদের বিশ্বাসকে রক্ষা করতে এখন পর্ণ তারকাদের পর্যন্ত হুমকির আওতায় আনছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সানি লিওন কে এবং কি জন্য বিখ্যাত এসব খবর কি করে অলিগলি রাজপথ পেরিয়ে মাদ্রাসার দুয়ার পর্যন্ত আঘাত হানলো? তাহলে তেনারাও কি...?
প্রাসঙ্গিক ভাবে একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। অনেক বছর আগের ঘটনা। গ্রীষ্মের ছুটিতে সে বছর আমি বিলাতে। থাকি সাউথ ডেভনের ছোট শহর পেয়িংটনে। ইংলিশ রিভিয়েরার কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা পেয়িংটন এবং টর্কিতে এ সময়টায় দূরদূরান্ত হতে টুরিস্টরা ভিড় জমায়। সে বছরও কম যায়নি। সামার জব করছি গ্যাঞ্জেস নামের একটা বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে। দুপুর তিনটা হতে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ব্রেক। সে সময়টা আমার মত অনেকেই বীচে দৌড়ে যায় বিভিন্ন আকর্ষণে। বিকিনি পরিহিতা ললনা ও ক্যাসিনো গুলো তার অন্যতম। তেমনি একদিনের ভর দুপুর। বন্ধু জেমসের সাথে ক্যাসিনোতে সময় কাটাচ্ছি। বীচের দিক চোখ ফেরাতে অদ্ভুত একটা দৃশ্য চোখে পড়লো। ভলিবল খেলেছে একদল তরুণী। অন্যদের চাইতে তাদের পার্থক্য হচ্ছে খেলোয়াড়দের সবাই উদাম। শরীরের উপরের দিকে কোন কাপড় নেই। ক্ষণিকের জন্য হতবাক হয়ে গেলাম। এ অঞ্চলে টপ-লেস ললনাদের আগে কোনদিন দেখেছি বলে মনে করতে পারলাম না। খবরটা রেস্টুরেন্টে ফিরে দিতেই হুড়মুড় করে বেরিয়ে পড়লো সবাই । বসের আপন চাচা ময়না মিয়ার বয়স আশির মত। কাজ করেন না। ভাতিজার উপর চলেন। সারাদিন আল্লাহ আল্লাহ করেন এবং আমার মত বাকিদের ধর্মীয় নসিহত করেন। তো এই চাচা দৌড়ালে্ন সবার আগে। বিকেল গড়াতে ফিরে এলেন এবং আতংক ছড়িয়ে সবাইকে জানান দিলেন হাশরের আর নাকি বেশি বাকি নেই। দিন যায়... গ্রীষ্মের তাপে ভাটা লাগার সময়। বীচের ভিড় এ বছর বেশকিছুটা দীর্ঘায়িত হল। কারণও ঐ টপ-লেস ললনার দল। লোকাল মিডিয়া ফলাও করে প্রকাশ করলো নতুন এই এডভেঞ্চারের কাহিনী। খবরে জানা গেল এসব ললনাদের বেশীর ভাগই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান টুরিস্ট। সে যাই হোক...সময়ের প্রবাহে স্থানীয় লোকজনও অভ্যস্ত হয়ে গেলে খোলামেলা পোশাকে সুন্দরীদের দেহ প্রদর্শনীতে। কিন্তু যার অভ্যাসে কষ্ট হল তিনি হলেন আমাদের সবার ময়না চাচা। প্রতিদিন ভলিবল দেখতে তিনি বীচে যান এবং ফিরে এসে কলিকালের এসব ঘটনা কেয়ামতের আলামত হিসাবে চিহ্নিত করেন। কোরান হাদিসের রেফারেন্স টেনে সম্ভাব্য শাস্তি সম্পর্কে বয়ান করেন। একদিন বলেই ফেললাম...চাচা, বিধর্মীদের এসব অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড দেখতে আপনাকে প্রতিদিন কেন বীচে যেতে হবে? উওরে জানালেন, আসলে মেয়ে মানুষ দেখতে নন, বরং কেয়ামত কতদূর তার একটা হিসাব নিকাস কষতে সেখানে যান।
ঈমানি জোর কমে গেলেই সবকিছুতে ধর্ম গেল ধর্ম গেল'র আওয়াজ পাওয়া যায়। ইসলাম ধর্মের ভীত কি এতই নড়বড়ে যে একজন বিধর্মী দেহ-ব্যবসায়ীর আগমনে তা কেঁপে উঠবে? ইমেজ সংকটে ভুগছে আজকের ইসলাম। পৃথিবীর দেশে দেশে হত্যা, খুন আর জুলুমবাজির আনন্দমেলা বসিয়ে ধর্মের জয়গান গাওয়া হচ্ছে। দুদিন আগে ইরাক সিরিয়ার কসাই বাহিনী আইএস ঘোষনা দিয়েছে অপ্রাপ্ত বয়স্কা কিশোরীদের যৌন দাসী বানানো ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েজ। তাই হিংস্র হায়েনার দল কিশোরী যুবতীদের খাঁচায় পুরে ধর্ষণ করছে পাথর যুগের মত। আর আমরা তোতা পাখীর মত বুলি আওড়াচ্ছি...এ সত্যিকার ইসলাম নয়! অথচ কোনটা যে সত্যিকার ইসলাম তা প্রমাণ করার জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না। স্বভাবতই বাকি বিশ্ব ধরে নিচ্ছে আফগানিস্তানের তালিবানই হচ্ছে জীবন্ত ইসলাম, আরবের আল-কায়েদাই হচ্ছে সাচ্চা ইসলাম, আফ্রিকার বোকো হারেম, ফিলিপিন্সের মোরো এবং বাংলাদেশের আনসারুল ইসলামই হচ্ছে অধুনা ইসলাম। তাই সানি লিওনের আকর্ষণীয় শরীরের দিকে লোলুপ দৃষ্টি না দিয়ে হেফজতীদের উচিৎ হবে নিজেদের অস্তিত্বের দিকে নজর দেয়া। কারণ দিন দিন একঘরে হয়ে পরছে এক কালের পরাক্রমশালী এই ধর্ম। এক কথায় ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী...