ঘটা করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মত মানুষ নন আমাদের ছ্যার ছ্যার। ঘাড়ের উপর মাথা, দুটি করে হাত-পা আর সাপের মত লকলকে একটা জিহ্বা ছাড়া বর্ণনা করার তেমন কিছু নেই শরীরে। এ নিয়ে এলাকার বখাটেরা হাসি তামশা করে। বলে জোরে বাতাস বইলে নাকি ছ্যার ছ্যার চেয়ারম্যান রাস্তায় বের হননা। উড়ে যাওয়ার ভয় পান। কেয়ামত শেখের পাল্লায় পড়ে গঞ্জিকা সেবনের অভ্যাসটা রপ্ত করেছিল সেই যৌবন কালে। আজও তা ছাড়তে পারে নি। কল্কির দমের সাথে গতরের সবকটা হাড্ডির একটা অনৈতিক সম্পর্ক আছে তা ছ্যার ছ্যারকে না দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। মনুষ্য শরীরের সবকটা বাঁক খালি চোখে দেখা যায় তার উদোম শরীরে। পুরানো ঢাকার তাঁতিবাজারে থাকাবস্থায় জীবন্ত কংকাল হয়ে বেশ ক'বার খেপে গিয়েছিল পাশের মেডিক্যালে। ডাক্তাররা আশ্বাস দিয়েছিল ওজন আরেকটু কমাতে পারলে কংকালের চাকরিটা স্থায়ী করার। তা আর হয়ে উঠেনি। তার আগেই যুদ্ধ বেধে যায়। প্রথম বিবি তখন ছয় সপ্তাহের পোয়াতি। চাকরি নেই। থাকার মত তেমন একটা জায়গাও নেই। প্রথমে ভেবেছিল রাজাকার বাহিনীতে নাম লিখিয়ে ভাগ্য ফেরানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি বন্ধু কিয়ামতের কারণে।
বুদ্ধিটা শেখের ব্যাটার। বিবি সহ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কোলকাতার দিকে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয় কিয়ামত। বালিগঞ্জ ও ভবানিপুরের মত এলাকায় বাসা নিয়ে সস্ত্রীক বাস করলে নাকি ভাগ্যের চাকা খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ওসব এলাকায় বাংলাদেশ নয়ছয় লীগের অনেক হোমরাচোমরা আশ্রয় নিয়েছে। বিবিকে দিয়ে তাদের পকেট খসানোর এটাই নাকি মোক্ষম সুযোগ। ইন্দিরা গান্ধির কাঁচা পয়সায় দেদার মৌজ ফুর্তি চলছে। গলায় সোনার চেইন আর পরনে মিহি সুতার ধূতিতে অনেককেই নাকি চেনা যাচ্ছেনা। সাথে আনন্দ ফুর্তির অনেক উপকরণ। অভাব শুধু বিশ্বস্ত মেয়ে মানুষের। সুযোগটা কাজে লাগানোর উপদেশ দিল কিয়ামত শেখ। নয়ছয় লীগের লোকাল এজেন্ট ইলসা হাজীর সাথে পরিচয় এ সূত্রেই। তার কাছে পাওয়া গেল অর্থ কামানোর আরও মোক্ষম অস্ত্র, পোয়াতি ইস্যু। নয়ছয় লীগের নেতাদের ব্ল্যাক-মেইল করার জীবন্ত উপকরণ। এবং তাই করেছিল ছ্যার ছ্যার। চুটিয়ে বিবি ব্যবসার ফলে দুটি উপকার হয়েছিলো তার, প্রথমত বেশকিছু কাঁচা পয়সা হাতে এসেছিল, দ্বিতীয়ত নয়ছয় লীগের অনেক হোমরাচোমরাদের কাছাকাছি আসতে পেরেছিল। সবচেয়ে বড় উপকারটা পেয়েছিল যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফেরার পর। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট! - চলবে