পুলিসের মস্তকবিহীন লাশ...
দিগন্তরেখায় স্কাইস্ক্রেপার গুলোর আভা ভেসে উঠতে বুঝে নিলাম গন্তব্য স্থল খুব বেশি দূরে নেই আমরা। ড্রাইভার ঘটা করে ঘোষণা দিল আর মাত্র ২৫ মিনিট। সান ফ্রানসিসকো প্লাজায় প্রথম স্টপেজ। চাইলে নামতে পারি। লা পাস পৌছার কথা দুপুর ১টায়, অথচ এখন বাজে বিকাল প্রায় ৫টা। পশ্চিম দিকে সূর্য হেলে গেছে। কর্ম দিবস শেষে অনেকে ঘরে ফিরছে। রাস্তায় যানজট চোখে পড়ার মত। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে অনেক উঁচুতে লা পাস শহরের অবস্থান। পেরু হতে ট্রেন অথবা বাসে করে পৌঁছতে চাইলে এন্ডিসের চড়াই উৎরাই পাড়ি দিতে হয়। পৃথিবীর এ অংশে বছর জুড়ে টুরিস্টদের বিরামহীন ভিড় থাকে। তাই আশা ছিল শহরে ঢুকার মুখে হয়ত বিশাল কিছু থাকবে যা পর্যটকদের স্বাগত জানাবে। কিন্তু এন্ডিসের বুক চিড়ে বলিভিয়ার রাজধানী লা পাসের দোরগোড়ায় পৌঁছে যে দৃশ্য দেখলাম তাতে অবাক না হয়ে পারলামনা। বিশাল আয়তনের আবর্জনা স্তূপ। আকাশে ক্ষুধার্ত শকুন আর চিলদের ভিড়। মাটিতে বেওয়ারিশ কুকুরের মিছিল, এবং প্রকৃতির সাথে একদল কিশোরের বাচা মরার লড়াই। আবর্জনার স্তূপে ওরা খাদ্যের সন্ধান করছে। কিছুটা এগোতেই ট্রাফিক থেমে গেল। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ড্রাইভার জানাল সামনের আবর্জনা স্তূপে কিছু একটা পাওয়া গেছে। সেনাবাহিনী ঘেরাও করে রেখেছে গোটা এলাকা। ঝামেলা ছাড়তে হয়ত সময় লাগবে। নিয়তির কাছে নিজকে সপে দিয়ে স্থবির হয়ে বসে রইলাম জানালার পাশে। প্রায় আধাঘণ্টা পর আবার চলতে শুরু করলাম। বাইরের ঘটনা নিয়ে যাত্রীদের ভেতর হরেক রকম কানাঘুষা শুরু হল। আসল ঘটনা সামনে আসতে কিছুটা সময় নিলো। স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর হোমরাচোমরা কারও লাশ পাওয়া গেছে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। সবাই সন্দেহ করছে আদিবাসী ইনকাদের কেউ শরীর হতে মাথাটা আলাদা করে রেখে গেছে এখানে। মাথাটা পাওয়া যাচ্ছেনা। পুলিশ হত্যার ঘটনা নাকি বলিভিয়ানদের কাছে অপরিচিত কোন ঘটনা নয়। সহ্যের শেষ সীমা অতিক্রম করলে ওদের অনেকেই বেওয়ারিশ লাশ হয়ে বিদায় নেয় পৃথিবী হতে।
পাঠক, আপনি কি খুব কষ্ট পাবেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর জনৈক হাতি-মার্কা অফিসারের লাশ যদি যাত্রাবাড়ীর আবর্জনার স্তূপে পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে? আর তা যদি হয় ঐ শূয়রের বাচ্চার যে কিনা কালিহাতি হত্যাকাণ্ডের পর সদম্ভে ঘোষণা দিয়েছে..."গুলি চালাও...কিছু হলে দায়-দায়িত্ব আমার"? নাকি আমার মত আপনিও আইনের শাসন নিয়ে আহাজারি করবেন এবং স্বপ্ন দেখবেন আকাশ হতে আবাবিল জাতীয় পাখী ছুটে এসে শায়েস্তা করে গেছে এসব *মারানীদের? ইদানীং আমার স্বপ্ন ও কল্পনা গুলো লাগাম হারিয়ে ফেলেছে। সুস্থ চিন্তার আমাকে আমি নির্বাসনে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছি। এবং এর ধারাবাহিকতায় আমি প্রায়শই কল্পনা করি...অনেকদিন পর দেশে গেছি। মা আর মাটির নোনা স্বাদ নিতে ছুটে চলছি দাদাবাড়ির দিকে। ঢাকা হতে বের হওয়ার কোন এক পরিত্যক্ত কোনায় হাজার হাজার টন আবর্জনা। বাসের জানালায় বসে ছবির মত দেখছি এ দৃশ্য। হঠাৎ করে স্থবির হয়ে গেল চলার গতি। কেউ একজন জানাল সামনে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। সময় লাগবে। স্থানীয়দের কেউ একজন জানিয়ে গেল সামনের আবর্জনায় পুলিশের আইজির লাশ পাওয়া গেছে। গলিত লাশ নিয়ে কুকুর আর শকুনের লড়াই চলছে...আর আমিও যন্ত্রের মত হরহর করে বাস থেকে নেমে গেলাম। হাতে একটা আলমের ১নং পচা সাবান। মস্তক-বিহীন আইজির শরীরের খুব কাছে এসে বিড়বিড় করে বলে গেলাম...বাপধন, তোমাকে যে-ই মেরে থাকুক, এর দায়-দায়িত্ব সবটাই আমার... কারণ শয়নে স্বপনে তোমাকে আমি লাখ লাখ বার খুন করেছি...আর এই রইল আলমের পচা সাবান। পারলে কাউকে দিয়ে হাত হতে রক্ত আর শরীর হতে দুর্গন্ধ গুলো দূর করিয়ে নিও...