আমাদের ক্রিকেট তখনো আন্তর্জাতিক লেভেলে প্রবেশ করেনি। অনেকের মত আমিও ফুটবল নিয়ে মজে থাকি। মোহামেডান আবাহনী ম্যাচ নিয়ে উত্তেজিত হই। খেলা শেষে আনন্দ উচ্ছ্বাস মেতে উঠি অথবা মনের কষ্ট মনে চেপে নতুন দিনের অপেক্ষায় থাকি। মফস্বল হতে ঢাকায় এসে প্রথম যে কাজটা নিয়মিত করতে শুরু করি তা হল মাঠে গিয়ে ফুটবল দেখা। কি রৌদ্র, কি বৃষ্টি, কি ঝড়...কি তুফান কোন কিছু আটকাতে পারেনি ৩-৪ ঘণ্টার এই বিনোদন। কালের পরিক্রমায় ডিস/ক্যাবল টিভি এসে হানা দিল শয়নকক্ষে। সাথে ফুটবলও পা বাড়াল আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায়। ম্যান ইউনাইটেড, বায়ার্ন মিউনিখ, জুভেন্টাসের মত দল গুলো হতে শুরু করে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স ও ইতালির জাতীয় দলগুলোর খেলা সরাসরি দেখার সুযোগ পেলাম। দিন গড়িয়ে মাস এবং মাস গড়িয়ে বছর ঘুরতে অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম ফুটবল নামের যে খেলা দেখার জন্য দিনের পর দিন স্টেডিয়ামে সময় ব্যয় করেছি, রোদে সিদ্ধ হয়েছি, বৃষ্টিতে ভিজেছি তা আসলে ফুটবল ছিলনা...ছিল গাছ হতে ছিটকে পড়া দশা সই একটা জাম্বুরা নিয়ে বাইশ জনের কাড়াকাড়ি, মারামারি, কিলাকিলি..। .তো 'প্রধানমন্ত্রীর' বিশ্বজয়ের পুরস্কার উত্তর মার্চপাষ্ট দেখে কেন জানি কলেজ জীবনের দিনগুলোর কথা মনে হয়ে গেল এবং ঢাকার রাজপথ যাদের পদভারে সমুদ্র হয়ে গেল তাদের মনে হল মোহামেডান-আবাহনী খেলার উত্তেজিত দর্শক। মনে হল সভ্যতার উনবিংশ শতাব্দীর বাসিন্দা এরা। একবিংশ শতাব্দীতে পা রাখতে এখনো অনেক পথ বাকি।
বাচ্চু মেম্বারের ফোনটা পেয়ে অবশ্য এসব চিন্তা দূর হয়ে গেল। মেম্বার জানাল গাবতলি হাটের ইজারা, হাড়িদোয়া নদীর চাঁদাবাজি, বিষনন্দী গ্রামের হিন্দু জমি দখল, গোটা তিনেক ডাকাতির মামলা, নাবালিকা ধর্ষণ সহ আওয়ামী রাজত্ব কায়েম রাখতে ঢাকা যাওয়া তার জন্য ছিল বাধ্যতামূলক। উপজেলা আওয়ামী লীগের এই অতিকায় নেতার জন্য নেত্রী নিউ ইয়র্কে 'চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ' না 'কুলাঙ্গার অব দ্যা আওয়ার' পুরস্কার হাতিয়ে নিয়েছেন সেটা বড় নয়, বড় হচ্ছে ৫৫ হাজার বর্গমাইলে তাদের পশুত্ব টিকিয়ে রাখা। পুরস্কার মানে সে পশুত্বকেই মেনে নেয়া... বিনা ভোটের হাসমতীয় উপাখ্যানের স্বীকৃতি দেয়া... মাতাল এমপির মাতলামির উপঢৌকন দেয়া... সর্বোপরি বাচ্চু মেম্বারের সামনে চেয়ারম্যান হওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করা।
হে জননী জন্মভূমি, যুগে যুগে এসব সন্তানদের জন্ম দিয়ে তুমি ধন্য হও!!!