সিরিয়া ক্রাইসিস শুরু হয়েছে কেবল। চারদিকে ধ্বংসের উৎসব। প্রচার মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হচ্ছে আসাদ ডাইনাস্টির সর্বশেষ আসাদের নির্মমতা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোর সাথে যাদের পরিচয় আছে তাদের জানা আছে পৃথিবীর এ অঞ্চলে কোন না কোন ভাবে এক ব্যক্তি অথবা এক পরিবারের শাসন চলছে এবং তা যুগ যুগ ধরে। জনগণও খাপ খাইয়ে নিয়েছে (!) একনায়কতন্ত্র ও রাজতন্ত্রের সাথে। গোত্র ভিত্তিক অসম শাসনের যাঁতাকলে যেসব গোত্র নিষ্পেষিত হয় কেবল তারাই রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। শিয়া, সুন্নি ও কুর্দিদের জগাখিচুড়ির দেশ ইরাকে সাদ্দাম হোসেন সংখ্যালঘু সুন্নিদের প্রতিনিধি হয়ে ছড়ি ঘুরিয়েছিলেন শিয়াদের উপর। লিবিয়ার অবস্থা ছিল আরও শোচনীয়। Qadhadhfa নামের খুবই নগণ্য একটা গোত্রের প্রতিনিধিত্ব করে বাকি অনেক গোত্রের সাথে অন্যায় ও অমানবিক আচরণ করে গেছেন কর্নেল গাদ্দাফি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অঞ্চলটায় আমি বাস করি তার জনগণ বহির্বিশ্ব নিয়ে মাথা কমই ঘামায়। মেক্সিকান ইমিগ্রেন্ট ও আদিবাসী আমেরিকানদের প্রতিদিনের জীবন-যুদ্ধের সাথে বিদেশী সমস্যা কোনভাবেই খাপ খায়না। তাই মধ্যপ্রাচ্য হোক আর ইউরোপ হোক, পৃথিবীর কোন অঞ্চলের সমস্যাই এ অঞ্চলে গুরুত্ব পায়না। শহর ডেমোক্রেটদের এক কর্মশালায় আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হল। উদ্দেশ্য, সিরিয়া ক্রাইসিস নিয়ে আলোচনা। ইউএনএম হতে বিষয়ের উপর বেশকজন বিশেষজ্ঞ উপস্থিত। হরেক রকম ধারণা এলো বিভিন্ন জনের মগজ হতে। এবার আমার পালা। মধ্যপ্রাচ্যের যে কোন দেশে মার্কিন ইনভেশন আগামী ১০০ বছরের জন্য হলেও বিবেচনার বাইরে রাখার প্রস্তাব করলাম। আসাদ স্বৈরাচার, এ সিরিয়ার সমস্যা, বড়জোর আঞ্চলিক সমস্যা, তা কোনভাবেই আমাদের (মার্কিনীদের) সমস্যা নয়। দেশে দেশে একনায়ক উৎখাত করার দায়িত্ব নিতে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা কতটা করুণ হতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ আজকের ইরাক ও লিবিয়া। এটাও মনে করিয়ে দিয়েছিলাম সিরিয়ায় আসাদ চক্রের বিরোধীরা যারা মার্কিন সাহায্য চাইছে দুদিন পর তারা ধর্মীয় উন্মাদনায় নিজেদের সজ্জিত করবে এবং এমন একটা সময় আসবে যখন খোদ মার্কিন তথা অন্য ধর্মের জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে। যেমনটা হয়েছিল আফগানিস্তানে। রুশ আগ্রাসন হতে মুক্তি পেতে আফগান বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে শক্তিশালী করেছিল আমাদের সরকার। যুদ্ধ শেষে আমরা যখন চলে এলাম একই গেরিলাদের জরায়ুতে জন্ম নিলো ওসামা বিন লাদেনের মত দৈত্য। এক অর্থে আজকে আমাদের সরকার যাদের নির্মূল করার জন্য পৃথিবীর দেশে দেশে বিলিয়ন ডলার খরচ করছে তাদের আমরাই জন্ম দিয়েছি আমাদের ট্যাক্সের টাকায়। প্রেসিডেন্ট ওবামাকে আমি ভোট দিয়েছিলাম এবং ডেমোক্রেট পার্টিতে নাম লিখিয়েছিলাম এ কারণে যে ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট ইরাক ও আফগানিস্তান হতে সৈন্য ফিরিয়ে এনে যুদ্ধের ইতি টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। একই প্রেসিডেন্ট মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কোন যুদ্ধে জড়াবেন এটা কোন ভাবেই কাম্য হতে পারেনা। তাই সিরিয়ান সমস্যা সিরিয়ানদেরই সমাধা করতে দিন। আর যদি বাইরের কারও প্রয়োজন হয় তার জন্য আছে মধ্যপ্রাচ্যের বাকি দেশ। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের মোড়লগীরি কমিয়ে আভ্যন্তরীণ সমস্যার দিকে নজর দেয়ার সময় হয়েছে...
আমি বিশ্বাস করি রাশিয়ার মত তলাহীন বিশ্বশক্তি যতই পেশী প্রদর্শনী করুক না কেন, প্রেসিডেন্ট ওবামার কলম হতে নতুন কোন যুদ্ধের সিদ্ধান্ত আসবেনা। এ দেশের জনগণও তা মেনে নেবে না।