পৃথিবীর দেশে দেশে ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারদের উত্থান পতন বিশ্লেষণ করলে তাদের সময় গুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম, ক্ষমতা দখল ও তা স্থায়ী করার কূটকৌশল। দ্বিতীয়, লুটপাট। তবে এই লুটপাটের স্থায়িত্ব ক্ষমতার শেষদিন পর্যন্ত দীর্ঘায়ত হয় সঙ্গত কারণে। তৃতীয়, স্থিতাবস্থা। ক্ষমতার চাবিকাঠির কুক্ষিগত করার একটা পর্যায়ে স্বৈরাচারদের জন্য সময় আসে যখন জনগণ হাল ছেড়ে দেয় এবং অপেক্ষা করে অলৌকিক কোন ঘটনার। স্বৈরাচারদের জন্য ক্ষমতার স্বাদ উপভোগ করার এটাই হয় মোক্ষম সময়। সমাজের সব পর্যায়ে দুর্নীতি স্থায়ী আসন করে নেয়ার কারণে জন্ম নেয় নতুন এক প্রজন্ম। ক্ষমতার রুটি-হালুয়ার জরায়ুতে জন্ম নেয়া এ প্রজন্মে যোগ দেয় মূলত সরকারের প্রশাসন যন্ত্র। সাথে থাকে থানা-পুলিশ, সেনাবাহিনী,আইন-আদালত, বিচারক সহ আরও অনেকে। সময়ের প্রবাহে স্বৈরাচারী সরকারের ভেতর এক ধরণের সন্তুষ্টি জন্ম নেয়। তারা ভেবে নেয় জনগণকে ভুলানো গেছে অবৈধ ক্ষমতার রোডম্যাপ। এ ফাঁকে গুম, খুন, হত্যা, অনাচার আর অবিচারের আওতায় দুর্বল করে দেওয়া হয় রাষ্ট্রের সবকটা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। সাথে অত্যাচারের ষ্টীম-রোলার চালিয়ে রাজনীতির মাঠকে জনশূন্য করে ধরে নেয় ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা গেছে। উন্নতির কসমেটিক সার্জারিতে দেশকে দেয়া হয় ভাঁওতাবাজির উপহার। এভাবে চলে যায় বেশ কবছর। চতুর্থ, ঘটতে থাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা। এবং এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটকে ঘিরে জড়ো হতে থাকে জনগণ। শুরু হয় বিদ্রোহ। পঞ্চম, অল-আউট দমন-পীড়ন। এ সময়টার আলগা হতে থাকে রাষ্টযন্ত্র। পোষা কুকুরের মত রুটি-হালুয়া খাইয়ে উদরপূর্তি করা লেফট্যানেন্টের দল ডিভোর্স দিয়ে বসে। দিশেহারা স্বৈরাচারদের কিছু একনিষ্ঠ কর সেবকদের পরামর্শে শুরু হয় নিধন। ষষ্ঠ, দলমত নির্বিশেষ জনগণ রাস্তায় নেমে আসে এবং শেষমেশ রক্তের নদীতে সাতার কেটে পালাতে হয় স্বৈরাচারদের। ইরানের শাহ, ইথিওপিয়ার মেঙ্গিস্টো হাইলে মারিয়াম, চিলির পিনাচে, রুমানিয়ার চাউসেস্কো, লিবিয়ার মোয়ামার গাদ্দাফি, ইরাকের সাদ্দাম হোসেন, বাংলাদেশের হোসেন মোহম্মদ...উদাহরণের অন্ত নেই।
উপসংহার হচ্ছে: সবকিছু চিরস্থায়ী করা গেলেও জনগণকে চিরস্থায়ী করা যায়না। রুটি-হালুয়া খাইয়ে কিছুদিন পোষা কুকুরের সার্কাস উপভোগ করা গেলেও একদিন ওরা ফুঁসে উঠে।