দুই দিন তিন রাতের ট্রেন জার্নি শেষে যেদিন লন্ডনের লিভারপুল স্ট্রীটে পা রাখলাম পকেটে ৫ ডলারের মত অবশিষ্ট ছিল। পেটে ক্ষুধা, রাতে থাকার অনিশ্চয়তা! সব মিলে পৃথিবী মনে হল একেবারেই অন্ধকার। শেষবারের মত লাঞ্চ সেরে শুয়ে আছি লিস্টর স্কয়ারের একটা পার্কে। এতই ক্লান্ত ঘুমিয়ে পরতে পাঁচ মিনিটও সময় লাগেনি। বন্ধু রহমানের ডাকে ঘুম ভাঙ্গল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। গ্রীষ্মকাল বলে সূর্যের নিষ্প্রভ আভা এখনো আলো ছড়াচ্ছে লন্ডনের আকাশে। রহমান বললো চল। জিজ্ঞেস করলাম, কোথায়? উত্তরে জানাল একটা গতি হয়ে গেছে। ইউলো পেইজ খুঁজে এক রেস্টুরেন্টের ফোন ও ঠিকানা পাওয়া গেছে। আমি যখন ঘুমিয়ে সে তখন কথা বলেছে মালিকের সাথে। ট্যাক্সি করে যেতে হবে। যেতে হবে ব্রিক্সষ্টোনে। ওখানে অপেক্ষা করবেন। তিনিই নিয়ে যাবেন শেষ গন্তব্যে। ব্রিকষ্টোনেই পরিচয় কাদির ভাইয়ের সাথে। ইয়োলো পেইজের তালিকা হতে টেলিফোনের মাধ্যমে যার সাথে পরিচয়। তাও বন্ধু মারফত। কাদির ভাই আমাদের দেখা মাত্র চীৎকার করে উঠলেন। যেন শতবর্ষের পরিচিত কারও সাথে কয়েক যুগ পর দেখা। সাউথ লন্ডনের একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে থামলেন। কাষ্টমার না থাকায় রেস্তোরার সব কর্মচারী রাস্তায় নেমে আমাদের স্বাগত জানাল। সেফ ভাই আমাদের বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আমরা সুদূর পূর্ব ইউরোপ হতে এসেছি শুনে অবাক হলেন। ইতিমধ্যে বেশ কপদ রান্না করে রেখেছেন আমাদের জন্য। দুঃখ করলেন হালাল কিছু করতে পারেননি বলে। কাল দুপুরে ভালমন্দ কিছু করার প্রতিজ্ঞা করে আমাদের নিয়ে গেলেন খুব কাছের একটা বাসায়। এখানেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুদিন থাকতে হয়েছিল বাসাটায়। কাদির ভাই খোজ লাগিয়ে আমাদের জন্য কাজের সন্ধান করে দেন। আমি চলে যাই ওয়েস্ট ক্রয়ডনের একটা রেস্টুরেন্টে। ওখান হতেই শুরু হয় জীবনের নতুন অধ্যায়। কাদির ভাই হয়ে যান আজীবনের বন্ধু। একে একে মুতু ভাই, মোকসিন ভাই, নিজাম ভাই সহ শত শত সিলেটী ভাইদের সাথে পরিচিত হই ইউরোপে কাটানো বাকি সময়টায়। শরীরের চামড়া দিয়ে হলেও এসব খেটে খাওয়া সিলেটী তথা বাংলাদেশি ভাইদের ঋণ শোধ করা যাবেনা। ইতর গফফার চৌধুরীর জন্য যারা লাঙ্গল টু লন্ডন তারাই ছিল আমার মত অনেকের জন্য ল্যাডার টু সাকসেস!