লোকটার নিশ্চয় একটা নাম আছে। আছে শহর এবং শহরে একটা ঠিকানা। তবে এ নিয়ে আমার বিশেষ কোন মাথাব্যথা নেই। মূল কথা, সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া পৌর্ নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। হতে পারে তা বরিশালের গৌরনদীতে অথবা নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারে। গায়ের পোশাক দেখে দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করে গেলেও এ মুহূর্তে আমি তা করতে যাচ্ছিনা। পোশাক যাই থাকুক, তার আড়ালে নিশ্চয় তিনি একজন মানুষ। এই মানুষটাকে নিয়েই আমার এ লেখা। উপরের ছবিটা একটু ভাল করে লক্ষ্য করুন। সাতজন মানুষের একটা অনুষ্ঠান। লাল-সাদা ফুলের সমাহারে তৈরি একটা ফুলের তোড়া এবং উপস্থিত ছয় জন তাতে হাত লাগিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করছে। দেখতে অনেকটা পদ্মফুলের মত দেখালেও অনুমান করা যায় সংবাদ মাধ্যমের জন্য ফটো শুটের এপিসোড এটা। হিমালয় জয় করে নিজ দেশের পতাকা উড়িয়ে অনেকে সমাপ্তি ঘোষণা করেন মিশনের। ছবিটাও একটা মিশনের সমাপ্তি ও বিজয় ঘোষণা। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যাদের সম্যক জ্ঞান নেই তাদের অনেকের জন্য রহস্য হয়ে থাকবে ১৬ কোটি জনসংখ্যার একটা জাতি তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য কেন এতটা উতলা হতে পরে। আর যারা জনসেবা করতে চান তারাই বা কেন এমনটা করার জন্য জনপ্রতিনিধত্বকে একমাত্র মাধ্যম হিসাবে বেছে নেন। প্রশ্ন জাগবে, হাতে যথেষ্ট অর্থ-কড়ি থাকলে মা-বাবার নামে একটা স্কুল, একটা মাদ্রাসা অথবা অতি-দরকারি একটা সেতু করে কেন জনসেবা করতে চান না। কেবল পাবলিক অফিসে বসেই কি জনসেবা করা যায়, বিকল্প বলতে আসলে কি কিছু নেই? উপরের ছবিটাই এর উত্তর দেবে।
নবনির্বাচিত মেয়রকে তার গুনমুগ্ব অনুসারীরা সম্বর্ধনা দেবে, এ দৃশ্য কেবল বাংলাদেশের নয়, গোটা গণতান্ত্রিক বিশ্বের। সাত জনের যে টীম ছবির মেয়রকে অভিনন্দন জানাচ্ছে তাদের পরিচয়ও এখানে মুখ্য নয়। নির্বাচনে তাদের ভূমিকা এবং পরবর্তীতে ফুলেল সম্বর্ধনাই এখানে বিবেচ্য বিষয়। মেয়রকে ঘিরে যারা পদ্মফুল তৈরি করেছে তাদের জন্য খোদ মেয়রের মতই নির্বাচনটা ছিল একটা বিনিয়োগ মাত্র। সাত জনের প্রতিজন নিজ নিজ এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মেয়রের পেছনে বাজী ধরেছেন। সময় হলে সবার রাস্তা এক মোড়ে এসে বাঁক নেবে, যার শেষ ঠিকানা হবে পকেট। এখানে ফুলের তোড়াটা হচ্ছে সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর সেই লালসালুর মত, যা হাজার হাজার মানুষকে চুম্বকের মত টানবে। চেতনার মাজারে ওরা মাহফিল বসাবে, দেব দেবীর পূজার আয়োজন করবে, শহীদ আর বীরাঙ্গনাদের পুথি শুনিয়ে চোখের পানি নাকের পানিতে একাকার করবে। মেয়রের ডান দিকের জন হতে পারে তার কাছের জন। তার মাধ্যমেই হয়ত পৌর এলাকার উন্নতির জোয়ার বইবে। আর সে জোয়ারে ভেসে ভেসে সম্পদের বস্তা গুলো অতি গোপনে নোঙ্গর করবে মেয়রের বন্দরে। বন্দরের মহাব্যবস্থাপক, হিসাবরক্ষক আর চৌকিদার-পাহারাদারের ভূমিকায় বাকিদের দাঁড় করিয়ে দিলে খাপে খাপে মিলে যাবে এক ফুল সাত মালীর সমীকরণ। এমনটাই বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধি, এমনটাই দেশসেবা, এ জন্যেই ক্ষমতার লড়াই, এ জন্যেই ভোটের মাঠে রক্তক্ষরণ, এ জন্যেই ব্যালট বাক্সের গণধর্ষন।
জনাব নবনির্বাচিত মেয়র, মাফ করবেন আমার সীমাবদ্ধতার জন্য। হয়ত আপনি ভাল মানুষ, হয়তবা আপনার কোন বন্দর নেই যেখানে রাতের আধারে রেলের কালো বিড়ালের মত বস্তা আসবে। কিন্তু আমার হাত-পা, মগজ সব বাধা। আমার সীমিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, বিচার বুদ্ধি এবং দেশকে ভালবাসার সবকটা যন্ত্র বলছে আপনি একজন চোর...একজন ধর্ষক...একজন খুনি এবং একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। হয়ত সময় বদলাবে এবং আপনার মতই একজন ক্ষমতায় বসবে, যার পোশাকে থাকবে ভিন্ন দলের আইডেন্টিটি। আমরা ম্যাঙ্গোরা অনেক কিছুই এখন বুঝতে পারি। এবং আগ বাড়িয়ে বলতে পারি, সেও হবে আপনার মতই একজন চোর। অথবা আরও বড় কিছু।