ক্রিকেটে সবাই ব্রাডম্যান হয়ে জন্মায় না। যে সব ফর্মাটে এবং পরিস্থিতিতে আজকাল ক্রিকেট খেলা হয় স্যার ব্রাডম্যান বেচে থাকলে তার সাথে তাল মিলিয়ে নিজের সুনাম রক্ষা করতে পারতেন বলেও মনে হয়না। বাংলাদেশের তামিম, সাকিব অথবা মুশফিককে যারা প্রতি খেলায় রানে দেখতে চান তার বোধহয় ভুলে যান ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, এবং তাতে প্রেডিক্টশনের স্থান নেই। থাকলে এ খেলার মজাটাই বোধহয় হারিয়ে যেত। বাংলাদেশ ক্রিকেট টীমের খেলা দেখা শুরু করেছি সেই ৭০'এর দশক হতে। সে সময়টায় যাদের জন্ম হয়নি তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই টীম শ্রীলংকার সফর দিয়েই বোধহয় আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সর্ব সাকুল্যে ৭০-৮০ রান করলেই আমরা উত্তেজিত হয়ে পরতাম। কেউ একজন উইকেট পেলে ভাবতাম আমরাও পারি। সে বাংলাদেশ আজ পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ভারত, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মত দলগুলোকে নিয়মিত হারিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এ যাত্রা সম্ভব হয়েছে এই মাশরাফি, তামিম, সাকিব আর মুশফিকদের হাত ধরেই। বেশিদূর যাওয়ার দরকার নেই, হাবিবুল বাশার, পাইলট আর দুর্জয়দের অধিনায়কত্বে খেলা ম্যাচ গুলোর কথাই বিবেচনায় আনুন। ম্যারাথন হারের পর একটা জয় জাতিকে ভাসিয়ে দিত আনন্দের প্লাবনে। পরের বিজয় কবে আসবে তার হিসাব খোদ পন্ডিতরাও কষতে ভয় পেতেন। সে অবস্থা আজ নিশ্চয় বদলে গেছে। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, এশিয়া কাপের ফাইনাল সহ যে কোন খেলাতেই আজ বাংলাদেশ তার নিজের অবস্থান শক্ত করে নিচ্ছে। শন্মান পাচ্ছে তাদের যারা কদিন আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৫ দিনের ক্রিকেট ১ দিনে শেষ করে দেয়ার আবদার জানাতো। এখানেই পার্থক্য তামিম, সাকিবদের। ওরা কেবল নিজেরাই বদলায়নি, বদলে দিয়েছে গোটা জাতিকে। রাজনীতি যা পারেনি সাকিবরা তাই পেরেছে, জাতিকে এক করেছে। এখানেই সার্থকতা ক্রিকেট বাংলাদেশের। ক্যান্সারের সাথে লড়াইরত স্কুল পড়ুয়া আমার ভাতিজি পর্যন্ত বিছানা হতে নেমে এসে একাত্মতা ঘোষণা করেছে টীম বাংলাদেশের সাথে। তার মুখে হাসি ফুটিয়েছে যা পারেনি ডাক্তাররা পর্যন্ত। স্যালুট তাদের যারা তা সম্ভব করছে। এক ফাইনাল তারা হেরেছে ঠিকই, কিন্তু সাথে জিতে নিয়েছে হাজারো ফাইনাল। আর এ ফাইনাল ১৬ কোটি স্বদেশীর ক্ষতবিক্ষত হ্রদয়।