১ বিলিয়ন ডলারের বাংলা কি তাহলে ৮০০ কোটি? কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে, যেমন গিয়েছিল ৭২ সালের ৩ লাখের ইংরেজি ৩ মিলিয়ন মেলাতে গিয়ে। যতদূর জানি ১ বিলিয়ন সমান ১০০০ মিলিয়ন। পণ্ডিতদের মতে ১০ মিলিয়নে বাংলা ১ কোটি। যোগ-বিয়োগ, পূরণ-ভাগ করলে যা দাঁড়াবে ১০০ কোটি এবং তা ইউএস ডলারে। যদি ধরি ১ ডলার = ৮০ টাকা, তাহলে মেনে নিতে হবে টাকার অংকে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে হ্যাকড্ হয়েছে ৮০০০ কোটি টাকা। 'এত বড় অর্থনীতির' দেশে ইতিপূর্বে স্থানীয় এক বাণিজ্যিক ব্যাংক হতে ৪০০০ কোটি টাকা লুটে নেয়ার অভিযোগ আছে, যা দেশের অর্থমন্ত্রী যৎসামান্য ও রাবিশ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। অবশ্য টাকার অংক নিয়েও ধুম্রজাল তৈরি করা হয়েছে। ১ বিলিয়ন তত্ত্বের পাশাপাশি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারেরও একটা হিসাব বাজারের বিক্রি হচ্ছে। সে-যাই হোক, ব্যাংকের ভল্ট ভেঙ্গে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিলেও আমাদের অর্থনীতির চাকা যে সামান্যতম বাধাগ্রস্ত হয়না মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গর্ভবতী সরকার তার কর্মকাণ্ড দিয়ে তাই প্রমাণ করে চলছেন। অগ্রণী, সোনালী, জনতা ও বেসিক ব্যাংক ধরো, মারো, খাও পর্বের সফল সমাপ্তির পর এবার খোদ ব্যাংকের রাজা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে হানা দিয়েছে আলীবাবা চল্লিশ চোরের দল। কোথাকার কোন ফিলিপিনো চোর নাকি বলেছে.. 'সিসিম ফাঁক' আর তাতেই খুলে গেছে ধনী দুনিয়ার সেরা ধনী বাংলাদেশ ব্যাংকের গুপ্ত গুহা। কুত্তার পেট হতে জন্ম নিলে ভিন্ন কথা, মায়ের পেটে জন্ম নেয়া এ দেশের পাঁচ বছরের একটা শিশুও বিশ্বাস করবেনা অর্থ লুটের ফিলিপিনো, থাই আর নিউ ইয়র্ক অপেরা। খোদ ঢাকায় বসে ব্যাংকের নিজস্ব কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে রাজনীতির ছত্রছায়ায় কিছু অতিমানব এ লুটের নেতৃত্ব দিয়েছে, এমনটা বিশ্বাস করতে মাসিক ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বেতনের ইটা বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পরবেনা। শেয়ার মার্কেট লুটের উপাখ্যান যাদের মনে আছে তাদের কাছে ব্যাপারটা আয়নার মত পরিষ্কার। স্থানীয় একটা দৈনিকের তথ্য মতে; নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি অ্যাকাউন্ট থেকে আট কোটি ১০ লাখ ডলার বা ৬৩৫ কোটি টাকা ‘হ্যাকড’ করে তুলে নেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার থেকেই ঘটেছে বলে জানা গেছে। দৈনিক কালের কণ্ঠ জানায়, এ ঘটনায় ব্যবহৃত বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনটি ইউজার আইডি শনাক্ত করতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। যে তিনটি আইডি হ্যাকড করে অর্থ সরানো হয়েছিল। ওই তিন আইডি ব্যবহারকারীর প্রোফাইল পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তারা এখন নজরদারিতে আছেন। যেকোনো সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করতে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে রিজার্ভের অর্থ পাচারে সহযোগিতাকারী হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আটজন কর্মকর্তাকে সন্দেহ করছেন গোয়েন্দারা। সন্দেহভাজনরা যাতে বিদেশে পালাতে না পারেন, সে জন্য বিমানবন্দর ও সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাঠক, আপনি কি তদন্ত, শনাক্ত, পরীক্ষা করে দেখা, সন্দেহভাজন, নজরদারী...ইত্যাদি শব্দ গুলোর সাথে পরিচিত হয়ে নিজকে ধন্য করতে পেরেছেন? না করে থাকলে এ যাত্রায় করে নিন। শব্দগুলো চেতনার জরায়ুতে জন্ম নেয়া কামরুখকাম্মাকা রাজ্য শাসনের কিছু শানে নযুল। এসব শব্দ উগরানোর অর্থই হলো আপনার সবকটা ইন্দ্রিয় শক্তি গরু-পেটা করে বিকলাঙ্গ বানানোর বন্য প্রক্রিয়া। যেমনটা করা হয় সুস্থ শিশুদের ভিক্ষুকে রূপান্তরিত করার বেলায়। চেতনার তৈলাক্ত ভাণ্ডারে ভাসমান বর্তমান সরকার আমার, আপনার বিবেক, বুদ্ধি, বিচার, বিবেচনা সবকিছু দলিত মথিত করে পঙ্গু বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে হীরক রাজ্যের অলিগলিতে। আমরা কারবালা পর্বের করুণ ট্রাজেডির মত হায় হাসান, হায় হোসেন মাতম করছি, আর সরকারের গোয়েবলসীয় প্রচারণা যন্ত্রের সক্রিয় যন্ত্র মুনতাসির মামুন, শাহরিয়ার কবির, জাফর ইকবালদের মত ঠেড্যা মালেইক্যার দল চেতনার বীর্য হতে জন্ম দিচ্ছে নতুন নতুন সন্তান... '৭১ সালের পাওনা আদায়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের তারই সোনালী ফসল। সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, বেসিক সহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাণ্ডারে যে অর্থ সংরক্ষিত আছে তা কি দেশের গ্যাস মজুতের মতই অনিশ্চিত যে এখনই পাকিস্তানের দিকে হাত বাড়াতে হবে! আগে এসব শেষ করুন, তারপর না হয় ওদিকে চোখ দেয়া যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক কেলেঙ্কারির তলায় চাপা পরে যাচ্ছে আরও একটা ভয়াবহ কেলেঙ্কারি যা দুদিন আগে স্থানীয় একটা দৈনিকে ইনসিগনিফিকেন্ট খবর হিসাবে প্রকাশিত হয়েছিল। আর তা হলো গ্রামীণ ব্যাংক সংক্রান্ত। সরকারের কালো হাত ধীরে ধীরে প্রসারিত হচ্ছে বিশ্বখ্যাত এই ব্যাংকের দিকে। কোলেটারেল বিহীন ঋণের শতকরা ৯৯ ভাগ রিটার্নের ব্যাংকে রাজত্ব শুরু করেছে আওয়ামী ভূত। ইতিমধ্যে কালো ও কু-ঋণের পরিমাণ জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। পাশাপাশি গ্রাস করে নিচ্ছে এর মৌলিক আবেদন, নারীদের অর্থায়ন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ আর ওলামা লীগের প্রেতাত্মা আর দশটা ব্যাংকের মত এ ব্যাংকেও শক্ত ঘাটি গাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ঋণ আদারের হার শতকরা নব্বইয়ের নীচে নেমে গেছে। যে দেশকে বাকি বিশ্ব তেনার বাবার নামে চেনার কথা, সে দেশকে চিনছে কোথাকার কোন ইউনুস মাস্টারের নামে...তারই প্রতিশোধ নিতে হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্ট লীগের বিচারদের দিয়ে ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করে দিয়েছেন বেয়ারা এই মাস্টারকে। গ্রামীণ ব্যাংককে করেছেন 'দুর্নীতিমুক্ত'। এক কথায় রাস্তা খুলে দিয়েছেন আলী বাবা চল্লিশ চোরের দলের জন্য। লুটের মেলা জমেছে দেশে। এ লুটের পরিবর্তী টার্গেট গ্রামীণ ব্যাংক। চাইলে কেউ লিখে রাখতে পারেন।
http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2016/03/11/334632