ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে কথিত সজীব ওয়াজেদ জয় অপহরণ ও হত্যা ষড়যন্ত্রের আসল কাহিনী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটা দেশে কাউকে অপহরণ ও হত্যা নিশ্চয় ক্রিমিনাল অফেন্স। দেশটার পুলিশ বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই যেহেতু নিয়োগ বাণিজ্যের ফসল নয় তাই ধরে নিতে পারি জয় সাহেবকে অপহরণ মামলায় গোপালগঞ্জ ও বগুড়া মেরুকরণের সম্ভাবনা নেই। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, 'অফেন্স ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স'। এর টু দ্যা পয়েন্ট বাংলা অর্থ কি দাঁড়াবে তা জানা নেই। তবে বাংলায়ও একই রকম যুতসই একটা কথা আছে, 'চোরের মার বড় গলা'। সব ঝামেলার শুরু মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের একটি তদন্ত রিপোর্ট। জনৈক বাংলাদেশি আমেরিকান জনাব সজিব ওয়াজেদ জয়ের বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে অল্প সময়ের ব্যবধানে ৩০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের অস্বাভাবিক লেনাদেনা রেকর্ড করা হয়, যা দেশটার গোয়েন্দা সংস্থাকে সন্দিহান করে তোলে। পশ্চিমা বিশ্বকে এ মুহূর্তে বেশ কটা ফ্রন্টে লড়াই করতে হচ্ছে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। ড্রাগ ও ইসলামী জঙ্গিবাদ তার অন্যতম। স্বভাবতই অন্যান্য খাতের মত দেশটার ব্যাংকিং খাতকেও আনা হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার কঠিন নজরদাড়িতে। যে কোন অস্বাভাবিক লেনাদেনার পেছনে ওরা ছুটে পতঙ্গের মত। হতে পারেন জয় সাহেব কামিং টু আমেরিকা ছবির নায়কের সেই প্রিন্স। তবে আমেরিকায় তার পরিচয় আর দশজন নাগরিকের মতই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে। তাই কেবল ৩০০ মিলিয়ন নয়, ৩ মিলিয়ন লেনাদেনার জবাবদিহিতাও তার জন্য বাধ্যতামূলক। জয় সাহেব কোন সূত্রে এই বিশাল অংকের অর্থ নিজ একাউন্টে লেনাদেনা করেছেন তার সন্তোষজনক জবাব দেয়ার ভেতরই নির্ভর করে তার ভাগ্য। যেহেতু এফবিআই তাকে এই অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেনি ধরে নিতে হবে জবাব ছিল সন্তোষজনক। আমরা আমজনতারা ইতিমধ্যে জেনে গেছি বাংলাদেশের সরকারের কথিত এই আইটি উপদেষ্টা মাসে দুই লাখ ডলার আয় করে থাকেন। বৈরী রাজনীতির দেশ বাংলাদেশ। এখানে আইটি উপদেষ্টার নামে সরকারী খাতাঞ্জিখানা লুটপাট বিস্ময়কর কোন ঘটনা নয়। দেশটার অর্থনীতি মূলত লুটপাট নির্ভর। রাজনীতি হচ্ছে সে লুটপাটের মোক্ষম অস্ত্র। সজীব ওয়াজেদ জয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন যে দেশের রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে গুম, খুন আর গায়ের জোরে ক্ষমতা আটকে রেখে রাষ্ট্রের সবকটা যন্ত্রে লুটপাটের বিষাক্ত থাবা বসানো। জয় সাহেবের ৩০০ মিলিয়ন সে থাবারই অবিচ্ছেদ্য অংশ কিনা তা প্রমাণের জন্য আমাদের বহুদূর যেতে হবে। এত সময় আমাদের যেমন নেই তেমনি নেই প্রতিপক্ষ বিরোধীদলের। তাই তারা হেঁটেছে সংক্ষিপ্ত রাস্তায়।
লুটপাটের ভাগারে জন্ম নেয়া এসব রাজনৈতিক বিরোধীরা টাকার বিনিময়ে এফবিআইয়ের রিপোর্ট ক্রয় করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার ধান্ধা করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় জনৈক বিএনপি নেতার প্রবাসী আত্মীয়কে ত্রিশ হাজার ডলার হাতে ধরিয়ে পাঠিয়েছিলেন এফবিআইয়ের দরজায়। ভাগ্য খারাপ ছিল তাদের। ভুল দরজায় টোকা দিয়েছিল ঘুষ-দাতা জুটি। ফলে যা হবার তাই হল। আটকে গেল গোয়েন্দা সংস্থার জালে। জেল জরিমানা গুনতে হল তাদের। এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে কাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ৩০ হাজার ডলার খরচ করতে চেয়েছিল দুই বাংলাদেশি! তাতে কি শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানদের হাত ছিল? থাকতে পারে। তবে প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত আইনের চোখে কেউ অপরাধী নয় এ বাস্তবতাটুকু সন্মান করলে আমরা ধরে নেব রেহমান ও রহমানদের কেউই অপরাধী নয়। বাংলাদেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা সংসদ ভবনের আশপাশে ভাসমান বেশ্যাদের মতই ক্রয় বিক্রয়ের পণ্য। দেশের নিম্ন ও উচ্চ আদালতের বিচারকদেরও আমরা ধরে নেব রাজনৈতিক বেশ্যাবৃত্তির দালাল। এমন একটা ব্যবস্থায় কাউকে অপরাধ ও শাস্তি পর্বের আওতায় এনে দোষী সাভ্যস্ত করলে ধরে নিতে হবে এটাও পণ্য বিনিময়ের ধারাবাহিকতা মাত্র। বাজারে চালু আছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার নেপথ্যেও রয়েছে শেখ পরিবারের জনৈকা সদস্যের বিশাল অংকের লেনাদেনা। অফেন্স ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স কায়দায় জয় সাহেবের গু-মুত খাওয়া দাসের দল ৩০০ মিলিয়ন ডলারের সত্যতা ধামাচাপা দেয়ার জন্য আশ্রয় নিয়েছে আক্রমণের। শফিক ও মাহমুদুর সাহবেরা কি তারই বলি নয়? শফিক সাহেব যদি সত্যি সত্যি জয় নাটকের সাথে জড়িত থাকেন তার বিচারের ভেন্যু হওয়া উচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু জাতি হিসাবে আমাদের কাছে এ মুহূর্তে ব্যক্তি জয়কে অপহরণ ও হত্যার চাইতে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হবে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের ডালপালা... কোত্থেকে আসে ও কোথায় যায় এসব অর্থ।