খবরে দেখলাম একদিকে জ্বলছে খুলনার সুন্দরবন অন্যদিকে খোদ রাজধানীর কাওরান বাজার। এসব পড়তে পড়তে মেমোরি রিওইয়ান্ড করে কেন জানি ফিরে গেলাম ৭২ হয়ে ৭৪ সালে। সদ্যমুক্ত স্বাধীন দেশে আওয়ামী শাসন। শেখ মুজিব পাকিস্তান হতে ফিরে এসে সমাজতন্ত্র কায়েমের অংশ হিসাবে দেশের ভারী শিল্প রাষ্ট্রয়াত্ব শুরু করেছেন কেবল। শ্রমের সাথে শ্রমজীবীর সম্পর্ক নিয়ে কার্ল মার্ক্স, ফ্রেডেরিক এঙ্গেলস ও ভ্লাদিমির উলিয়ানভ লেনিনের যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে হাত বাড়ালেন দলীয় কর্মসূচীর অংশ হিসাবে। শ্রম, মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে ব্যক্তি, পরিবার ও যৌথ উদ্যোগে যারা শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাদের ঠেলে দেয়া হল সর্বহারাদের কাতারে। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের পরিবারও ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় নাম লেখাল। বাড়ি-ঘর, জমি-জমা ও ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধক রেখে তিল তিল পরিশ্রমে গড়ে তোলা জুট মিল কলমের এক খোঁচায় হাতছাড়া হয়ে গেল। মিল পরিচালনার সর্বস্তরের ভার গুনে গুনে আওয়ামী নেতাদের হাতে তুলে দেয়া হল। সর্ববুভুক্ষ আওয়ামী সর্বহারার দল সুদূর রুশ দেশের অক্টোবর বিপ্লবের মতই ভূত হয়ে চেপে বসলো লাভজনক এ প্রতিষ্ঠানে। বছর না ঘুরতে মিলের কলকব্জা সের দরে 'গাট্টার' বিনিময়ে ফেরিওয়ালাদের কাছে বিক্রি শুরু হয়ে গেল। মিল ম্যানেজার হতে শুরু করে প্রোডাকশন সুপারভাইজার পর্যন্ত সবাই মিলে কোম্পানি কা মাল দরিয়া মে ঢাল প্রতিযোগিতায় নেমে পড়লো। হরিলুটের এক পর্যায়ে মিলের গোডাউনে আগুন নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়ালো। হিসাবটা ছিল খুব সোজা! আপনি ১ টন পাট কিনে ১০ টনের হিসাব দেখিয়ে বাকি ৯ টনের টাকা ভাগাভাগি করবেন। এবং হিসাব পাকা রাখার সুবিধার্থে মজুত পাটে আগুন লাগিয়ে ১টনকে ১০টন বানিয়ে হালাল করে ফেলবেন আপনার লুট। কেউ কিছু ধরতে পারবেনা। অন্তত কাগজে কলমে। ইন্সুরেন্স কোম্পানিতেও তখন আওয়ামী হাভাতের দল। ওদের সাথে সিন্ডিকেট করে হরিলুটের দ্বিতীয় পর্ব সমাধা করতে কোথাও কোন বেগ পেতে হতোনা। ক্ষমতার পালাবদল শেষে মিল যখন মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয় যারা এর্নেষ্ট হেমিংওয়ের 'দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দি সী' উপন্যাসটা পড়েছেন তাদের বুঝতে সুবিধা হবে মিলের কাঠামোগত অবস্থা। কিউবান ফিশারম্যান সান্তিয়াগোর মতই বাবা ও তার ব্যবসায়িক পার্টনাররা মিলের হাড্ডি গুলো উদ্ধার করেছিলেন আওয়ামী থাবা হতে। সে মিল আর কোমর সোজা করে দাড়াতে পারেনি। ময়মনসিংহের গৌরীপুরের কোন এক কোনায় আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ শিল্প প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন হাত ঘুরে এখন বোধহয় একেবারেই লাশ! চেহারা বদল হলেও একই হায়েনার দল আবারও ক্ষমতায়। প্রয়োজনে ওরা যেমন খোলা আকাশের নীচে লগি-বৈঠার তাণ্ডবে জ্যান্ত মানুষকে লাশ বানাতে পারে, তেমনি পারে আগুন লাগিয়ে বুঝে নিতে নিজেদের স্বার্থ। এ হতে চলন্ত বাস যেমন বাদ যায়না তেমনি বাদ যায়না কল-কারখানা, বাজার-বন্দর সহ সুন্দর বনের মত ঐতিহাসিক বন।