মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে খুনের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামীকে বেঁচে থাকার একটা শেষ সুযোগ দেয়া হয়। যার মূলে থাকে ব্লাড-মানি। অর্থাৎ যাকে খুন করা হয়েছে তার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আর্থিক লেনাদেনার বোঝাপড়ায় আসতে পারলে আসামীকে খালাস করে দেয়ার অধিকার রাখে ঐ দেশের বিচারব্যবস্থা। এমনটাই ঐসব দেশের আইন, শরীয়া আইন। ধার্যকৃত আর্থিক অংকটাকেই বলা হয় ব্লাড-মানি। অর্থাৎ রক্তের মূল্য। বলাই বাহুল্য প্রায় সর্বক্ষেত্রে টাকার অংক হয় আকাশচুম্বী। বেশ কজন বাংলাদেশিও এ ধরণের লেনাদেনার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য হতে ফিরে আসতে পেরেছে। অবশ্য বাংলাদেশ সরকারকেই বহন করতে হয়েছে টাকার অংক, হয় জনগণের পপুলার ডিমান্ডে অথবা মানবিক কারণে। ২০১৩ সালের ৫ই মে ঢাকার অলিগলিতে রক্ত ঝরেছিল। সে রাতে আসলে কি ঘটেছিল এবং তাতে প্রাণহানির সংখ্যা কত ছিল তার সঠিক সংখ্যা আমরা কেউ জানিনা। জানিনা বললে বোধহয় ভুল বলা হবে, আসলে জানতে দেয়া হয়নি। সরকার যতই অস্বীকার করুক, বাস্তবতা হচ্ছে সে রাতে ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। অগণতান্ত্রিক সরকারের নিয়ন্ত্রিত প্রচার মাধ্যমের কারণে তার সঠিক চিত্র হয়ত আমাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছেনা। হেফাজত-এ-ইসলাম নামের মাদ্রাসা ভিত্তিক একটি অরাজনৈতিক শক্তি ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার নামে রাজপথে অবস্থানের মাধ্যমে সরকারের ভীত কাপিয়ে দিয়েছিল। দেশেবিদেশে বন্ধুহীন, মিত্রহীন এ সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হেন কোন চেষ্টা নেই যা করছেনা। বন্দুকের নলের মুখে হত্যা, গুম, খুন, জেল-হাজত সহ দেশের সবকটা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে পঙ্গু বানিয়ে রূপান্তরিত করেছে ইতিহাসের বিষয়বস্তু হিসাবে। একই সরকার হেফাজত ইসলাম নামক সংগঠনটির শুরু হতে কোমর ভেঙ্গে দিয়ে নিরাপদ রাখতে চেয়েছে ক্ষমতার বিষাক্ত থাবা। অন্যান্য ক্ষেত্রে এ থাবায় তারা কতটা সফল হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, তবে হেফাজতকে শায়েস্তা করার কাজে সরকারের ১০০ ভাগ সফলতা নিয়ে কারও কোন প্রশ্ন নেই। দুদিন আগে দাবীকৃত ৫ই মে'র গণহত্যার তৃতীয় বার্ষিকী পার হয়ে গেল। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া কিছুটা গোলমাল করলেও ভিক্টিম হেফাজত-এ-ইসলাম ও তার বয়োবৃদ্ধ নেতা শফি হুজুর ছিলেন একেবারেই বোবা। ব্যক্তিগতভাবে দূরে থাক, সংগঠনটি এ ব্যানারে একটা সাধারণ সভা পর্যন্ত করেনি। এখানেই আসে ব্লাড মানির প্রসঙ্গ।
লেখার সাথে এঁটে দেয়া ছবিটাই হচ্ছে সে ব্লাড-মানি। ৫ই মের প্রাক ও পরবর্তী হেফাজত এখন একেবারেই ভিন্ন দুটি সংগঠন। সরকার হটানোর যে সংকল্প নিয়ে তারা মাঠে নেমেছিল তা এখন রূপ নিয়েছে টিকিয়ে রাখার সংকল্পে। মাদ্রাসা হুজুরদের অনেকে দিনটিকে স্মরণ করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চাইলেও শফি পুত্র আনাস মাদানির কারণে তা পণ্ড হয়ে যায়। ছবির দালানটার মালিক একই আনিস মাদানি। বলা যায় ৫ই মে'র ব্লাড-মানি হিসাবে সরকার এই মাদানিকে চট্টগ্রাম রেলওয়ের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি সহ হরেক রকম ব্যবসা বাণিজ্য দিয়ে কিনে নেয়েছে নিজদের মুক্তি।
প্রকার ভেদে ব্যবসার চেহারা হরেক রকম রূপ নিয়ে আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়। শফি হুজুর ও তার ছেলে আনাস মাদানি সে ব্যবসারই পুরানো কৃতদাস। মুখে দাড়ি আর পরনে সমুদ্র সফেদ পোশাক দিয়ে এ পরিচয় স্থায়ীভাবে ঢাকা যায়না।