যুগ পালটে গেছে। সাথে পাল্টেছে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক। যে সম্পর্ক এক সময় ঈশ্বরের খুব কাছাকাছি অবস্থান করতো আজ তা ছিটকে একই ঈশ্বরের সৃষ্ট মাটির ধরণীতে গড়াগড়ি খায়। আমরা যারা শিক্ষকদের মা-বাবার আসনের চাইতেও উঁচু আসনে বসাতে অভ্যস্ত তারা অবাক হয়ে দেখছি সম্পর্কের এই অবমূল্যায়ন। কে দায়ী? কেবলই কি ছাত্ররা? আপনি হয়ত বলবেন নিশ্চয়! বুকে হাত দিয়ে বলুন-তো শিক্ষক হিসাবে আপনি নিজেও কি সেই আগের জন আছেন যাকে তার ছাত্ররা পাহাড় সমান শ্রদ্ধা করতো? হেড স্যারের চেয়ারটায় বসার জন্য আপনিও কি স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পদসেবা করেননি? আপনিও কি আপনার ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেননি? আপনিও কি প্রাইভেট ট্যুশনির লোভে অনৈতিক পঙ্কিলতার আবর্তে হাবুডুবু খাননি? যে হাত দিয়ে অন্যের পা ধরেছেন একই হাতে নিজের কান ধরেছেন, খুবই কি অবাক হওয়ার মত কাণ্ড? আমরা অবুঝ। দয়া করে বুঝানোর চেষ্টা করুন। আমাদের বুঝানোর চেষ্টা করুন কেন আপনি, আপনার সংসদ সদস্য, আপনার থানা-পুলিশ, আইন-আদালত একই ফুলের পাপড়ি নন। আপনি যদি তাই না হতেন তাহলে যে ছাত্রের হাতে পরীক্ষার আগের রাতে সরকারী আয়োজনে প্রশ্নপত্র তুলে দেয়া হয় তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন। দুঃখিত শ্রদ্ধেয় স্যার, আপনাকে কোনদিন তা করতে দেখেনি। বরং ক্ষমতার ভিত্তি পোক্ত করার মানসে আপনি অহরহ দ্বারস্থ হয়েছেন ঐ কুলাঙ্গার জনপ্রতিনিধির দুয়ারে। ডান-হাত বাম-হাত করেছেন। তৈল মর্দন করেছেন। রাতের অন্ধকারে তার ভোটের বাক্স ভরে দিতে নিজকে উজাড় করে দিয়েছেন। স্যার, আমরা কিন্তু একেবারে আন্ধা আর কালা নই। অনেককিছুই এখন বুঝতে পারি। বুঝতে পারি সেলিম ওসমান বলার সাথে সাথে আপনি কেন কান ধরে উঠা-বসা শুরু করলেন। যে শিক্ষককে সন্মান শ্রদ্ধার সর্বোচ্চ আসনে বসিয়ে এত বছর পর আজও আমি পূজা করি তিনি মরে যেতেন তাও সেলিম ওসমানের কথায় উঠা-বসা দূরে থাক, কানে পর্যন্ত হাত দিতেন না। তিনি প্রতিবাদ করতেন। রুখে দাঁড়াতেন। বরং ছাত্র সমান সেলিম ওসমানদের কানে ধরিয়ে বুঝিয়ে দিতেন শিক্ষক কি জিনিষ। তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনি সেলিম ওসমানেরদেরই একজন। আপনি সমাজ, সংসার নষ্ট করার ভণ্ডামিতে একজন পাকা খেলোয়াড়। স্যার, আপনি কি জানতেন না সেলিম ওসমানদের ব্যাকগ্রাউন্ড? খান বাহাদুর ওসমান আলী সাহেব ছিলেন টানবাজারস্থ পতিতালয়ের একনিষ্ঠ গ্রাহক। ওখান হতে একে একে তিনজনকে ধরে এনে বৈবাহ করেছিলেন। তাদের একজনের গর্ভেই জন্ম হয়েছিল ভবিষ্যৎ সেলিম ওসমানের ভ্রূণ। এ বংশের চিন্তা-ভাবনা ও কর্মক্ষেত্রে এখনো তাই টানবাজারের প্রতিচ্ছবি। আপনি তা ভাল করেই জানতেন। তা জেনেই তাদের জনপ্রতিনিধি বানানোর দৌড়ে শামিল হয়েছিলেন। নিজে ভোট দিয়েছেন, অন্যের ভোট জালিয়াতি করায় সহযোগিতা করেছেন। শুধু শিক্ষকের লেবাস দিয়ে এসব অপরাধ ঢাকার দিন পার হয়ে এসেছি আমরা। আমাদের চোখ এখন সার্ভেলেন্স ক্যামেরা। আপনার মত শিক্ষকদের ভেরতটাও এখন দেখতে পাই। যার ইশারায় আজ আপনি প্রধান শিক্ষক তার হুকুমে কান ধরে উঠা-বসা আর করজোড়ে ক্ষমা চাওয়ার ভেতর তেমন কিছু অন্যায় নেই। আপনি ও সেলিম ওসমান এই চক্রের দুই খেলোয়াড়। দেশকে আপনারা যে পথে নিয়ে গেছেন সে পথে দুদিন পর আপনার ছাত্ররাই আপনাকে উলঙ্গ করে রাস্তায় ছেড়ে দেবে। শিক্ষকতা করতে চাইলে এসব মেনেই চেয়ারে বসতে হবে।
http://www.ntvbd.com/…/%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%A…