সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি আমার মত অনেকের সমর্থনই ছিল হয়ত প্রি-ম্যাচুরড। ঐ সরকারের শুরুতে যদি ধারণা পেতাম তারা দুর্নীতির কীর্তন শুনিয়ে জাতির ঘাড়ে আওয়ামী লীগ নামের এক ডায়নাসোরকে চাপিয়ে দেবে তাহলে সমর্থনের পাল্লাটা ভারি করার জন্য কিছুটা ম্যচুরিটির অপেক্ষা করতাম। অবশ্য এ জাতীয় সমর্থনের জন্য যদি আমার মত ম্যাঙ্গোদের কেউ বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করায় ব্যপারটা অন্যায় বলেই বিবেচনা করব। কারণটা খুব সোজা...ক্ষমতার দুর্নীতি! বিএনপি-জামাত জোট ধোয়া তুলসীপাতার রাজনীতি করেনি। বাক্স-পেটারা ধরে টান দিলে তাদের চুরি-চামারির তালিকাও কম লম্বা হবেনা। হাইয়েষ্ট লেভেলে এই চুরির অন্যতম আইকন হিসাবে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল বৈদ্যুতিক খাম্বাকে। খাম্বা ও খাম্বা মামুনের কাঁধে চেপে সরকারের ভেতর অঘোষিত সরকার প্রধান তারেক জিয়া বাংলাদেশকে লুটে নিয়েছেন এমন একটা ধারণা দিতে তৎকালীন প্রচারমাধ্যমে অনেকেই আদাজল খেয়ে কলম ধরেছিলেন। এসব ধারণা অবিশ্বাস করার মত যৌক্তিক কোন কারণ তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা তুলে ধরার চেষ্টা করেনি। তাই খাম্বা চুরির ঘটনাকে চুরির মাত্রায় নতুন এক দিগন্ত উন্মোচনের ঘটনা হিসাবেই বিবেচনা করেছিলাম আমরা। অতঃপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনীতিবিদদের লুঙ্গি ধরে টান দিতে শুরু করলেন। আমার মত অনেকেই অবাক হয়ে দেখল লুঙ্গির নীচে রাজনীতিবিদদের অন্য এক জগত। ঐ লাল নীল জগতে দলীয় পরিচয় কোন সমস্যা ছিলনা। সমস্যা ছিল ক্ষমতায়। যেহেতু পালাক্রমে দুই দলই ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছিল স্বভাবতই লুঙ্গির নীচের আবর্জনা হতে কেউ মুক্ত ছিলনা। আমার মত অনেকেই পুলকিত হয়েছিল চোর রাজনীতিবিদদের এহেন পরিণতি দেখে। ব্যক্তিগতভাবে আমার বিশ্বাস জন্মেছিল প্রতি ৫ বছর অন্তর কম করে হলেও ২ বছরের জন্য একটা ইন্টেরিম সরকার বাংলাদেশের জন্য বাধ্যতামূলক। ক্ষমতায় বসে যারাই লুটপাট করবে তাদের সবার লুঙ্গি টানাটানিই হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কাজ। আমার মত অক্ষমদের জন্য এটাই হতো চরম পাওয়া।
কিন্তু হায়! ভারতীয় ঘোড়া উপহারের পেছনে যে অলিখিত উপহার ছিল তার মোজেজা বুঝতে কিঞ্চিত দেরী করে ফেলেছিলাম। সে উপহার এখন স্ফটিকের মত ফকফঁকা.. আওয়ামী লীগ নামের সর্ব-খেকো দানব। বিএনপি-জামাত জোটকে কাঠগড়ায় দাড় করালে অনেক অভিযোগেই অভিযুক্ত করা যাবে, কিন্তু মত প্রকাশের মত মানুষের মৌলিক অধিকার সমূলে উৎপাটন করার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা যাবেনা। এক মাগুরা উপনির্বাচনকে ঘিরে ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার যে হৈচৈ আমরা দেখেছি গোটা বাংলাদেশকে মাগুরা বানিয়ে সামনে-পিছন হতে উপর্যপুরী ধর্ষণ করার কলঙ্কজনক অধ্যায় নিয়ে টু-শব্দটি করার কেউ নেই এখন। কারণ আওয়ামী দানব কেড়ে নিয়েছে সে অধিকার। কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তলা ফুটো করে যে সম্পদ হরিলুট হয়েছে তার ধারে কাছেও আসবেনা গোটা খাম্বা চুরির সমীকরণ।
কথিত উন্নয়নের যে কীর্তন আমাদের শোনানো হচ্ছে তার স্বরলিপি আমাদের অতি পরিচিত। কারণ একই স্বরলিপির সুরে গান গেয়ে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন সাদ্দাম হোসেন, মুয়ামার গাদ্দাফি, এডলফ হিটলার, ম্যানগিষ্টো হাইলে মারিয়াম, পিনাসে, রবার্ট মুগাবে, কিম জং উন, জ্যাঁ ব্যাট্রান্ড আরিস্টিড জাতীয় অনেকে। আমৃত্যু ক্ষমতা ধরে রাখার অনেক খায়েসেরই অপমৃত্যু দেখেছি আমরা। আওয়ামী দানবেরও মৃত্যু হবে...হতে বাধ্য! তবে সে মৃত্যু অপমৃত্যুর তালিকায় লিপিবদ্ধ হবে কিনা তা জানতে আমাদের হয়ত আরও অপেক্ষা করতে হবে।