৩৭ বছর উপভোগ করেছেন সর্বোচ্চ ক্ষমতাসীনের রাজকীয় জীবন। ভেবেছিলেন বাকি জীবনটাও কাটিয়ে দেবেন একই ভাবে। কারণ এই ৩৭ বছরে কেবল ক্ষমতাই নয় গোটা দেশই চলে এসেছিল মালিকানার আওতায়। এক নেতার এক দেশ! রবার্ট মুগাবের উত্থান ছিল ইতিহাসের দাবি। কালো আফ্রিকায় সাদা বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে মুগাবের অবস্থান ছিল নেলসেন ম্যান্ডেলার ঠিক পরের আসনটায়। ১৯৮০ সালে রোডেশিয়া হতে জিম্বাবুয়েতে ট্রান্সফরমেশন ও পরবর্তীতে কালো জনগনকে মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার শুরটা ছিল বিস্ময়কর। কিন্তু এর কন্টিনিউয়েশন বেশিদূর এগুতে পারেনি। ক্ষমতা মানুষকে কতটা অন্ধ করে দেয় তার জ্বলন্ত উদাহরণ আজকের মুগাবে। ৯২ বছর বয়সী এই নেতা ক্ষমতাকে ব্যাক্তি তথা পারিবারিক সম্পদ ভেবে এর অপব্যবহারের কোন বন্দরই অনাবিস্কৃত রাখেননি। ক্ষমতার নাটবল্টু পাকাপোক্ত রাখতে এ পর্যন্ত ২০,০০০ জনকে খুন করিয়েছেন। গুমকে বেছে নিয়েছেন রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হিসাবে। মিডিয়াকে নিয়ে গেছেন পোষা কুকুরের পর্যায়ে। দুর্নীতির বিষাক্ত বীজ ছড়িয়ে দিয়েছেন সমাজের প্রতি স্তরে। বাকি বিশ্বের কাছে ধিকৃত হয়েছেন। নিজ দেশকে একঘরে বানিয়েছেন। যে কৃষি ব্যবস্থায় যুগান্তরী পরিবর্তন শুরু হয়েছিল তাকে বানিয়েছেন দেউলিয়া। জোয়ারের পর ইদানিং সাধের ক্ষমতায় ভাটার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলেন তিনি। তাই ভাইস প্রেসিডেন্টকে বরখাস্ত করে নিজ স্ত্রীকে বসাতে চেয়েছিলেন সে আসনে। মাঝখানে বাধ সাধে সেনাবাহিনী। সাথে যোগ দেয় ফুঁসতে থাকা দেশটার জনগণ। এককালের হিরো রবার্ট মুগাবে এখন জিরো। বাধ্য হয়ে ক্ষমতা ছেড়েছেন, পদত্যাগ করেছেন নিজের সৃষ্টি দল হতে। এবং অপেক্ষা করছেন শেষ পরিণতির।
জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে এক নেতার এক দেশ প্রতিষ্ঠা করার যাঁতাকলে জনগনকে ৩৭ বছর পিষ্ট করেছেন রবার্ট মুগাবে। একই রোডম্যাপে ইদানিং তৃতীয় বিশ্বের অনেক নেতা নেত্রীই হাঁটছেন। চেতনার আফিমে জাতিকে বশ করে ভাবছেন এ ক্ষমতা আজীবনের। সময় একদিন আসবে এবং জবাবদিহি করতে হবে প্রতিবিন্দু রক্তের। রাতের আধারে বিশেষ বাহিনী পাঠিয়ে গুম, খুন অথবা মিথ্যাচারের আশ্রয়ে বিনাবিচারে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার মুগাবীয় রোডম্যাপ তাসের ঘরের মত খসে পরবে। হোক তা ৫০ বছর পর।