গিট্টু ফসকে যাওয়ায় থলের বেড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। বর্ণবাদী বিগট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রুশ কানেকশন নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে একদিকে রবার্ট মালার কমিশন, অন্যদিকে হাউস ও সিনেট জুডিশিয়ারি কমিশন। ইতিমধ্যে ট্রাম্পের ক্যম্পেইন ম্যানেজার পোল ম্যানফোর্টকে হাউজ এরেস্ট করা হয়েছে। মন্ত্রীসভার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পোর্টফোলিও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক প্রথম উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন দোষ স্বীকার করে ট্রাম্প ও তার পরিবারের গোপন তথ্য মালার কমিশনের কাছে প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। আজ ৮ ঘন্টা করে জেরা করা হয়েছে ট্রাম্প পূত্র জুনিয়র ট্রাম্পকে। এর আগে একই কায়দায় ঢলা দেয়া হয়েছে ট্রাম্প জামাতা জেরেড কুশনারকে। নিউ ইয়র্ক টাইমস সহ বেশকটা সংবাদপত্র প্রকাশ করছে আরও বিধ্বংসী খবর, নির্বাচন প্রক্কালে রুশ ব্যাংক হতে ট্রাম্পের জার্মান ডয়েচে ব্যাংকের একাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ট্রান্সফার করা হয়েছিল বিশেষ উদ্দেশ্যে। ডয়েচে ব্যাংক এ ব্যপারে সহযোগীতা করতে অস্বীকার করায় মালার কমিশন আইনের আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের ধরণ ও এর মূল কারণ ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। ইউক্রেইনে রুশদের অবৈধ হস্তক্ষেপের কারণে যুক্তরাস্ট্র ও তার মিত্ররা রুশদের বিরুদ্বে অবোরধ জারি কর্রেছিল। ট্রাম্প ও তার ক্যাম্পেইন গ্রুপ রুশদের সাথে ওয়াদাবদ্ব ছিল নির্বাচনে পাশ করলে ঐ অবোরধ উঠিয়ে নেবে যদি তারা নির্বাচন বৈতরনী পার হতে সহযোগীতা করে। ক্রেমলিন দুহাত বাড়িয়ে লুফে নেয় এ প্রস্তাব। পুতিন এ কাজে সহযোগীতা নেয় এস্যাঞ্জ ও তার উইকিলিক্স'এর। উইকিলিক্স হ্যাক করে ডেমোক্রেটদের সার্ভার এবং ওখান হতে তুলে নেয় হিলারী ক্লিনটনের হাজার হাজার ই-মেইল। ওসব ই-মেইল প্রথম সরবরাহ করা হয় ট্রাম্প টীমকে, যার নেত্রীত্বে ছিল জুনিয়র ট্রাম্প ও জামাতা জেরেড কুশনার। ই-মেইলের কনটেন্ট দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া হয় ঐসব অঙ্গরাজ্যে যেখানে কোন প্রার্থীর নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিলনা। যেমন, ফ্লোরিডা, মিশিগান, পেনসেল্ভেনিয়া ও উইসকন্সিন। ক্রেমলিনের স্পন্সরে রুশরা ফেইসবুকে শত শত ভূয়া গ্রুপ ও একাউন্ট খুলে হিলারীর বিরুদ্বে প্রচারণা চালাতে শুরু করে। ফেইসবুক সিইও জুকে বার্গার প্রথমদিকে সহযোগীতা করতে অস্বীকার করলেও এখন খুলে দিয়েছেন নিজের তথ্য ভাণ্ডার। প্রকাশ করেছেন রুশদের দেয়া ভূয়া এড আয় করা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয়ের তথ্য। রুশদের এই বহুমূখী সাইবার আক্রমনের প্রভাব দ্রুতই ছড়িয়ে পরে ফ্লোরিডা, মিশিগান ও পেনসেলভেনিয়ার ভোটারদের মাঝে। ফলাফল, উইসকিন্সন সহ এই তিন অংগরাজ্যে হিলারীর বিস্ময়কর পরাজয়। অথচ আগের দুই টার্মে এই চার অঙ্গরাজ্যে আধা কালো ও আধা মুসলমান বারাক হোসেন ওবামা জিতেছিলেন পরিস্কার ব্যবধানে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন জন্মগত বর্ণবাদী। তার বাবা ও তাকে ৭০'এর দশকে ফেডারেল কমিশন জরিমানা করেছিল নিজেদের হোটেলে কালো চামড়ার বোর্ডারদের ভাড়া দিতে অস্বীকার করায়। এ পর্যন্ত ১২ জন মহিলা সামনে এসেছেন তার বিরুদ্বে যৌণ হয়রানীর অভিযোগ নিয়ে। ট্রাম্প ইউনিভার্সিটি নামের ভূয়া ব্যবসা খুলে হাজার হাজার ছাত্রের সাথে প্রতারণা করার অভিযোগ মিমাংসা করেছেন বিরাট অংকের জরিমানা গুনে।
ডেমোক্রেটদের প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করার খেসারতও আজকের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হিলারী ক্লিনটনকে একজন ক্ষুধার্ত কর্পোরেট জায়ান্ট হিসাবেই জানে মূল ধারার আমেরিকানরা। অর্থই ক্লিনটন পরিবারের আসল সমস্যা। ওরা যেখানে যেভাবে সম্ভব সেখানেই আয়ের রাস্তা বের করে। পেছন হতে কলকব্জা নাড়তে থাকেন স্বামী ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া আমেরিকানদের জন্য জরুরি ছিল। কারণ এ জাতির জন্য একটা শিক্ষা পাওনা ছিল অনেকদিন ধরে। দেশে দেশে অপ্রয়োজনীয় ও অবৈধ যুদ্ধ বাধিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করার অভ্যাসটা মিশে গিয়েছিল অস্থিমজ্জায়। প্রচণ্ড একটা ধাক্কা লেগেছে আমেরিকান বিশ্বাসে। হয়ত সময় লাগবে, কিন্তু বেরিয়ে আসবে ঠিকই। ততদিনে একজন চরিত্রহীন লম্পট ডোনাল্ড ট্রাম্প জায়াগা করে নেবেন নিজের সঠিক আসনে।