বিশ্রী একটা স্বপ্ন দেখে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল প্রায় ৬টা। ইচ্ছা করেই টেবিল ঘড়ির সময় ৫ মিনিট এগিয়ে রাখি। সকালে কাজে যেতে সুবিধা হয়। মনটা খারাপ করে আলো ফোটার আগেই হাইওয়ে ধরে কাজের উদ্দেশ্যে রওয়ান দিলাম। সত্যি হয় কিনা জানিনা, তবে ভয়টা যে সারাদিন তাড়া করে বেড়িয়েছে তাতে সন্দেই ছিলনা। মা বলতেন সকালের দিকের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়। স্বপ্নে দেখলাম দেশে সামরিক আইন জারী করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে কমিশন বসিয়ে লোকজন আটকে কি যেন পরীক্ষা করছে। মোবাইল ফোনে দুয়েকটা ছবি তোলার আশায় পরীক্ষাগারে যাওয়ার সাথে সাথে ওরা আটকে ফেলল। সামনের জনের সাথে কি হচ্ছে দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।
'হা করেন জনাব' - ব্যপারটা বুঝতে না পেরে হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কষে ধমক লাগালো হাফপ্যান্ট পড়া উর্দিওয়ালা। থমমত খেয়ে হা করলাম। টর্চলাইট মেরে কি যেন পরখ করল মুখের ভেতর। কমিশনের দ্বিতীয় জন থাবা মেরে নিয়ে গেল তার জায়গায়। চোঙ্গা ওয়ালা পাইপ লাগিয়ে চোখের ভেতর কি যেন খুঁজতে থাকল। কিছু না পেয়ে অনেকটা লাথির কায়দায় ধাক্কা দিল। হুমড়ি খেয়ে ঠাঁই নিলাম তৃতীয় এবং শেষ কমিশনে। ন্যাড়া, ভুঁড়িওয়ালা ও চোখে ভারী চশমার এক উর্দিওয়ালা আমাকে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। 'ঐ হালা, লুঙ্গি খোল'। আমি বললাম ভেতরে জাইংগা নেই, খুলবো কেমনে!' 'বাইঞ্চুত, সারা জীবন মাইনসের জাইঙ্গা খুলছস, এখন কস নিজের জাইঙ্গা নাই। উষ্ঠাইয়া বত্রিশ দাঁত ফেলাইয়া দিমু'। উর্দিওয়ালার গোপালগঞ্জীয় এক্সেন্টে সাবধান হয়ে গেলাম। আমি খোলার আগে হেঁচকা টানে উর্দিওয়ালাই খুলে নিলো আমার লুঙ্গি। খোলা আকাশের নীচে আমি আর আমার দোতারা এক অপরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি ঝপতে শুরু করলাম। দোতারার তারে হাত দিল। এদিক সেদিক করে কি যেন যাচাই বাছাই করল। পরীক্ষা শেষে হঠাৎ করেই বদলে গেল উর্দিওউয়ালার সুর। খুব নরম গলায় কানের কাছে মিয়াও মিয়াও করে বলল, 'এবার আপনে যাইতে পারেন'। ইমান আলী দফাদারের সাথে দেখা না হলে বুঝতেই পারতমা না কি হচ্ছে এখানটায়। ইমান আমাদের পাড়ার এক কালের চৌকিদার। হঠাৎ করে উর্দিবাহিনীতে নাম লিখিয়েছে রাতারাতি ভাগ্য বদলের আশায়।
আরে ভাই ইমান যে, আছেন কেমুন?
ওয়াচডগ মিয়া যে। তা এইখানে ধরা খাইলা কেমনে?
এই যে এমনে! দোতারার দিকে আঙ্গুল দেখাতে জিহ্বায় কামড় হেসে উঠল ইমান আলী।
আমরা আম্বালীগ, হাম্বালীগ আর তাদের উজির নাজির কোতোয়ালদের খুঁজতাছি।
সবই বুঝলাম, কিন্তু জিহ্বা, চোখ আর পাকিস্তানী কায়দায় লুঙ্গি খুইলা দোতারা যাচাই করার কি কারণ?
আম্বালীগ আর হাম্ব্বালীগার চিনতে এই তিন পরীক্ষাই যথেষ্ট। গত ১০ বছর মিছা কথা আর হারাম খাইতে খাইতে সব আম্বালীগারদের জ্বিহবায় এক ধরনের ঢোরাকাটা দাগ পইরা গেছে। কারো জিহ্বায় এই দাগ পাওয়া গেলে সাথে পায়ু পথে পায়ুকাফ পরিয়ে গ্রেফতার করি। চোখ পরীক্ষা করারও ভাল একটা কারণ আছে। খারাপ নজর দিতে দিতে চোখে ডাইক্লোরো ডিফানেল ট্রাইক্লোরেইথানো নামের একধরণের ভাইরাস বাসা বেধেছে। কারও চোখে ঐ ভাইরাস ধরা পরলে গোলাম হোসেন উপায় নাই। আর দোতারার ব্যাপারটা খুব ফঁকফঁকা। খুইলা না বললেও তুমি বুঝবা আশাকরি...
গায়ের দোতারা হাতে নিতে পাড়ার সুলতান ফকিরের গানটার কথা মনে পড়ে গেল...
আমার দোতারায় কি গাইতে জানে গান
টেকা পয়সায় সোনার গয়না
মইরা গেলে সঙ্গে যায়না...
প্রচণ্ড ঘাম ঝড়িয়ে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। অবচেতন মনে হাতটা চলে গেল দোতারার দিকে। না, তারগুলো জায়গামতই আছে।