ক্রাইসিসের শুরুটা কোথায় এবং কেন এর সদুত্তর আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি। তবে নিউ ইয়র্ক টাইমসে সদ্য প্রকাশিত কিছু বিস্ফোরক তথ্য কিছুটা হলেও আলোর রশ্মি ছড়াচ্ছে এ ধাঁধাঁয়। গেল বছরের জুন মাসে হঠাৎ করেই সৌদি আরবের নেতৃত্বে কিছু আরব দেশ কাতারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পাশাপাশি স্থগিত করে দেয় কূটনৈতিক সম্পর্ক। সৌদিদের সাথে যোগ দেয় আফ্রিকা ও এশিয়ার আরও কিছু মুসলিম দেশ। বাংলাদেশ সহ অনেক মুসলিম দেশের জন্য এ ছিল অপ্রত্যাশিত বিস্ময়। কাতারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তারা গ্লোবাল সন্ত্রাসের সহযোগী। দেশটার বিরুদ্ধে সৌদি অবস্থান কিছুটা হলেও জাস্টিফাই করা যায় তাদের সাথে ইরানের সুসম্পর্কের ইস্যু দিয়ে। কিন্তু বাকি দেশগুলোর অংশগ্রহণ ছিল বিস্ময়কর। খালি চোখে দেখলে আমার মত অনেকের কাছে মনে হবে হঠাৎ মধ্যপ্রাচ্যে এমন কি ঘটল তার জন্যে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ কাতারকে একঘরে করা হল। রহস্যের এ বেড়াজালে নতুন করে আগুন ঢেলেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। ঘটনার মূল নায়ক জেরেড কুশনার। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কন্যা ইভানকার স্বামী।
খোদ ট্রাম্পের মত কুশনার পরিবারও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় জড়িত। বিশ্বজুড়ে তাদের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য। কিন্তু গ্লোবাল অর্থনৈতিক মন্দার ঢেউ কুশনার সাম্রাজ্যেও হানা দেয় এবং তচনচ করে দেয় এর ভীত। অনেক বিনিয়োগের মত নিউ ইয়র্কের অভিজাত বাণিজ্যিক এলাকার ৫ এভিনিউর ৬৬৬ বহুতল বিল্ডিং বিনিয়োগেও খরা শুরু হয়। এ বিল্ডিংয়ে বিনিয়োগ-কৃত ১.২ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১০০ হাজার কোটি টাকা) দেনা, যা আগামী বছর শোধ না করলে দেউলিয়া হতে বাধ্য। এরই মধ্যে জনাব ট্রাম্প শপথ নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে এবং জেরেড কুশনারকে নিয়োগ দেন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা হিসাবে। চাকরির অংশ হিসাবে হোয়াইট হাউসে বিদেশী কূটনীতিক ও বিনিয়োগকারীদের সাথে নিয়মিত মিলিত হন জনাব কুশনার। উদ্দেশ্য ট্রাম্প সরকার তথা মার্কিন স্বার্থ প্রমোট করা। এখানেই ঘটে এমন এক ঘটনা যা হোয়াইট হাউসে ইতিপূর্বে ঘটেনি। কাতার সরকারের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানান হোয়াইট হাউসে এবং রাষ্ট্রের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দাবি জানান তার ব্যক্তিগত ৬৬৬ বিল্ডিংয়ের ১.২ বিলিয়ন ডলারের দেনা পরিশোধের অংক ধার দেয়ার জন্য। কাতার সরকার অস্বীকার করে এ ধরণের বিনিয়োগে। প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যান জনাব কুশনার। রওয়ানা দেন সৌদি আরবে। রাতভর মিটিং করেন ক্রাউন প্রিন্স মোহম্মদ বিন সালমানের সাথে। দুদিন পর সৌদি সরকার চেপে বসে কাতার সরকারের উপর। সন্দেহ করা হয় বাকি দেশগুলোকে হুমকি দিয়ে কাছে নেয় সৌদি প্রিন্স।
মার্কিন বিচার বিভাগ কর্তৃক নিয়োগ-কৃত বিশেষ কমিশন তদন্ত করছে গেল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশদের হস্তক্ষেপের পরিধি। এখানেই উঠে আসছে ট্রাম্প পরিবারের অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির ইতিহাস। স্বভাবতই বিচার বিভাগ ওদের পিছু নিয়েছে এবং ছোট করে আনছে তাদের পৃথিবী।