১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তান ভিত্তিক পাকিস্তানী সামরিক শাসকদের একটা প্রচারণা ব্যপক জনপ্রিয় হয়েছিল পূর্ব অংশে। আর তা ছিল; দেয়ালেরও কান আছে, গুজবে কান দেবেন না। ৭১ সালে পাকিস্তানি ২২ পরিবারের প্রতিনিধি সামরিক বাহিনী যে দিন তাদের সেনাদের এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছিল তাদেরও দাবি ছিল যা ঘটছে তা সত্য নয়, সবই গুজব। নয় মাস পর সে গুজবের ওজন করে দেখা গেল ৩০ লাখ নিহত আর দুই লাখ ধর্ষিত। একই কায়দায় বর্তমান সরকারও তার প্রচারযন্ত্র দিয়ে ঢাকতে চাইছে কৃত অপরাধ। ক্ষমতা আর বন্দুকের নলের মুখে গুজবের দাবি আপাত চাপিয়ে দেয়া যাবে সত্য, তবে সরকার পতনের পর একদিন নতুন করে লেখা হবে দেশীয় রাজনীতির এই কলংকিত অধ্যায়। পাকিস্তান আমলে মোনায়েম খাঁ'র পাচপাত্তু, পাকিস্তানউত্তর শেখ মুজিবের আওরাংগ, এরশাদের ছাত্র সমাজ, খালেদা জিয়ার ছাত্রদল আর হাসিনার ছাত্রলীগ কেবল গুজবের শিকার এমনটা যারা বিশ্বাস করেন তাদের দ্রুত মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন। আর যদি আমরা বিশ্বাসও করি গত কদিনের সব ঘটনা গুজব এবং মিডিয়ার সৃষ্টি তাহলেও কি ছাত্রলীগ নামের যে বাহিনী দিনের আলোতে অন-ক্যামেরা বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করেছিল সেটাও ছিল গুজব? সরকারের বিচারে নিশ্চয় তাই! নইলে দেশের এই টালমটাল অবস্থায় বিশ্বজিৎ খুনের সব আসামীকে আদালত কেন বেকসুর খালাস দেবে? আমাদের কি তাহলে বিশ্বাস করতে হবে বিশ্বজিৎ নামে আসলে কেউ ছিলনা! সবই প্রতিপক্ষের প্রচারণার ফসল! বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সবই সম্ভব। তবে যেটা সম্ভব নয় তা হচ্ছে যন্ত্রদানবের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রতিদিন যারা লাশ হচ্ছে তাদের গুজব বলে চালিয়ে দেয়া। সরকারী পরিসিংখ্যান অনুযায়ী বছরে বাংলাদেশের অলিগলিতে ৭,০০০ হাজার মানুষ মারা যায়। দিনের হিসাবে যা হবে দৈনিক ২০ জন। বেসরকারী হিসাবে এ সংখ্যা বছরে ১২ হতে সতের হাজার। এ মৃত্যুর মিছিল তৈরীতে একজন শাজাহান খানের কি ভূমিকা তা জানা না থাকলে অনুরোধ করব লোকটার অপরাধ পরিধিটা একটু ঘুরে আসতে। নিরাপদ সড়ক চাওয়া কোন অপরাধ নয়। কারণ নিরাপদ সড়ক কেবল আওয়ামী বিরোধীদেরই জীবনের নিরাপত্তা দেবেনা, বরং আজকে যারা দা, কুড়াল, চাপাতি আর বন্দুক নিয়ে ক্ষুধার্ত হায়েনার মত শিশু-কিশোরদের উপর ঝাপিয়ে পরছে তাদের জীবনেরও নিশ্চয়তা দেবে।