সালটা মনে নেই, তবে ঘটনাটা মনে আছে। থাকি নিউ ইয়র্কের কুইন্সে। আমার বড় বোন হাসনাপা আসছেন আমার এখানে। এবং সুদীর্ঘ ৩০ বছরের প্রবাস জীবনে এই প্রথম আমার পরিবারের কেউ আমার সাথে দেখা করতে আসছেন। উত্তেজনাতো ছিলই। ইমিগ্রেশ ঝামেলা শেষে JFK এয়ার্পোর্ট হতে বেরুতে বেশ দেরী হয়ে গেল। লাগেজ নিয়ে ক্যাব লাইনে দাঁড়াতে এগিয়ে এল কালো রংয়ের একজন ড্রাইভার। কোথায় যাব তার উত্তরে যা বললাম শুনে মন খারাপ হয়ে গেল তার। হয়ত কুইন্সের উডসাইডের ভাড়া খুব একটা বেশি হবেনা বিধায় তাকে বিষন্ন দেখাল। লাগেজ ট্রাংকে উঠাতে কোন সাহায্য করলনা। আমি নিজেই উঠালাম। এবার ঘটল বিস্ময়কর এক ঘটনা। গাড়িতে হাসনাপা এক পা রাখতেই সে স্টার্ট দিয়ে চালানো শুরু করল। চীৎকার করে উঠলাম আমরা। সে থামালো। কোন দুঃখপ্রকাশ নেই। নেই কোন সৌজন্যের ভাব। কোন কথা বললাম না আমরা। জায়গায় পৌঁছে ভাড়া মিটিয়ে বিদায় দিলাম তাকে। এ ফাঁকে ট্যাক্সি-ক্যাবের বিস্তারিত লিখে নিলাম অন্যকিছু মাথায় রেখে। তাতে ড্রাইভারের নাম ও লাইসেন্স নাম্বারের বিস্তারিত ছিল। কিছুদিন চলে গেল। কোন এক মধ্যরাতে ঘটনাটা মনে পড়তেই গায়ে গতরে আগুন জ্বলে উঠল। অনলাইন ঘেটে নিউ ইয়র্ক ইয়লো ক্যাব অথরটির অভিযোগ বিভাগটা খুজে পেলাম। যা ঘটেছিল তার বর্ননা দিয়ে ঠুকে দিলাম একটা অভিযোগ। মাস না গড়াতেই ডাক এলো। যেতে হল ম্যানহাটনের এক কোর্টে। সাথে নিলাম ট্যাক্সি এক্সপার্ট বন্ধু লুৎফরকে। আবার দেখা হলা হাইতি নামক দেশের ইমিগ্রান্ট সেই ড্রাইভারের সাথে। বিচারক সব শুনলেন। ড্রাইভার উত্তরে জানাল আমাদের উপমহাদেশের লোকজনের গায়ে নাকি মসলার গন্ধ থাকে, তাই সে অপেক্ষায় না থেকে গাড়ি টান দিয়েছিল। শুনে বিচারক ক্ষেপে গেলেন। উপদেশ দিলেন এমন সমস্যা হলে ড্রাইভিং ফেলে অন্য পেশায় মন দিতে। যাই হোক, রায় ছিল আড়াই হাজার ডলার জরিমানা ও লাইসেন্স হতে ১২ পয়েন্ট বিলোপ। যার অর্থ এক বছরের জন্য ড্রাইভিং স্থাগিত। শাস্তির মেয়াদ শেষে লাইসেন্স নেয়ার জন্যে নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে। বিদায় কালে কঠিন কিছু বলে ড্রাইভার ফিলিপকে সাবধান করে দিলাম এয়ারপোর্ট হতে আমাদের রঙের যাত্রী নেয়ার সময় সবাইকে যেন গরু-ছাগল মনে না করে।