ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আমার পদচারণা শুরু সেই ১৯৯৯ সালে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনীর স্থায়ী বাসিন্দা আমি। সুবেদ ভাই খুব কাছের মানুষদের একজন। উনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মচারী খুব ভাল শ্রোতা। মনযোগ দিয়ে শোনে আমার কথা। বিশেষ করে রাজনৈতিক বক্তব্যগুলোর উপর খুবই আগ্রহ দেখায়। ভদ্রলোকের নামটা মনে নেই। তিনিই একদিন প্রস্তাব দিলেন আপনার এসব কথা নেট দুনিয়ায় কেন প্রকাশ করছেন না! কথাটা মনে গেথে গিয়েছিল। সেখান হতেই শুরু। প্রথমে খুব সতর্কভাবে। বাংলা লেখার অপশন তখনও চালু হয়নি। ইংরেজীই ছিল একমাত্র মাধ্যম। facebook বাজারে আসতে তখনও পাঁচ বছর দেরী। ব্লগ দিয়েই শুরু। ব্যাংলাদশের আইটি দুনিয়ার পথিকৃত শ্রদ্বেয় জাকারিয়া স্বপন ভাই তখন ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকেন। তিনিই প্রথম লঞ্চ করেন ই-মেলা নামের একটা পোর্টাল। তাতে যুক্ত ছিল ব্লগ অপশন। লেখালেখির হাতেখড়ি ওখানেই। বাংলা আমার মাতৃভাষা হলেও তা যথেষ্ট চর্চা করার সুযোগ তেমন হয়নি। বিশেষ করে প্রকাশ করার মত যথেষ্ট বাংলা আমার হাত তথা অভিধানে ছিলনা। ইংরেজীর জ্ঞান নিয়ে গর্ব করার মত তেমন কিছু ছিলনা। আমার লেখাপড়ার প্রায় সবটাই করেছি তৃতীয় আরেকটা ভাষায়। মুল প্রসঙ্গে আসি। ই-মেলাতেই পরিচয় হয় হরেক রকম বাঙ্গালীর। আওয়ামী-বিম্পি, জামাতি-কম্যুনিষ্ট, কবি-সাহিত্যিক সহ হরেক রকম স্বদেশি। লেখালেখি যেহেতু ইংরেজিতে তাই চাইলেও অনেকে মনেরভাব সহজভাবে তুলে ধরতে পারতেন না। পাইপলাইনে আসে ইংরেজীতে বাংলা লেখা।এ যেন বাধভাঙ্গা জোয়ার! খুবশীঘ্র অদ্ভুত একটা সত্য আবিস্কার করতে সমর্থ হলাম, আমরা বাংলাদেশিরা খুববেশী কিছু হজম করার মত উদর নিয়ে জন্ম নেইনা। লেখালেখিও তার প্রতিফলন পাওয়া গেল। চারলাইন লিখলে তার দুই লাইনই থাকে থৈর্য্যহীনতার বহিঃপ্রকাশ। গালাগালি। আমার লেখালেখি ছিল মূলত প্রচলিত রাজনীতি ও তার লুটপাটকে ঘিরে। এখানে রাজনৈতিক এফিলিয়েশন থাকার কোন সুযোগ ছিলনা। কারণ রাজনীতির নামে লুটপাট খুব কাছ হতে দেখার সুযোগ হয়েছিল। এ চেইন হতে আওয়ামী, বিম্পি, জামাত অথবা জাতীয় পার্টিকে আলাদা করার সুযোগ ছিলনা। আমার চোখে বাংলাদেশের রাজনীতির আসল চালিকাশক্তি তার সরকারী কোষগার লুটপাটের স্বাধীনতা। এ হতে কোন সরকারই বাদ দেয়ার উপায় নেই। শেখ মুজিবের আমলে যার শুরু তার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে আজ বটগাছে রূপান্তরিত হয়েছে। এ নিয়ে লিখলে অনেকেরই তলপেটে মোচড় দেয়। এবং যার ফলোয়াপ হয় ডায়েরিয়া। বিশেষকরে যারা দলকান কৃতদাস। বিএনপির আমলেই বোধহয় আমার কলম বেশী সচল ছিল। তারেক জিয়া ও খাম্বা মামুনের সিণ্ডিকেট নিয়ে শত শত ব্লগ নেটদুনিয়া ঘাটলে আজও হয়ত পাওয়া যাবে। নেতা-নেত্রী পুজারী বিএনপির কৃতদাসের দল ধরেই নিয়েছিল আমি আওয়ামী। তত্ত্বাবধায়ক আমলেই বের হয়ে আসে রাজনীতিবিদদের আসল চেহারা। অনেকের চৌকির তলায় পর্যন্ত পাওয়া যায় সোনা-দানা, নগদ, এমনকি ডেউটিনের বান্ডেল। ক্ষমতার সিঁড়িতে চড়ে বসল আওয়ামী লীগ। খাম্বা মামুনদের খাম্বা চুরির জায়গা করে নিল আওয়ামী লীগের ব্যাংক চুরি। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকও এ হতে রেহাই পেলনা। যে গ্রামীন ব্যাংকের রিটার্ন রেট ছিল প্রায় শতভাগ সেই ব্যাংককে তুলে দেয়া হল লুটেরাদের হাতে। এবং সবকিছুই হতে থাকল মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, চেতনা, মূল্যবোধের ছায়াতলে।
হতেপারে আপনাদের অনেকের চোখে বাংলাদেশ এখন উন্নতির রোলমডেল। এমনটা ভাবা আপনার জন্মগত অধিকার। এ অধিকারের নামই গনতন্ত্র। কিন্তু যাদের বিচারে বাংলাদেশ এখন বিশ্বচুরির রাজধানী, সে বিচারও গনতন্ত্রের অংশ। সে অধিকার বুলেট, বন্দুক আর হাতুড়া দিয়ে কেড়ে নেয়ার নাম স্বৈরতন্ত্র। একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে এসব তুলেধরা আমার দায়িত্ব ও অধিকার। এ নিয়ে আপনি সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীনদের কায়দায় আপনি কলম-হাতুড়ায় আমাকে আক্রমণ করবেন এমনটা হতে পারেনা। অনুরোধ করব যাদের আমার রাজনৈতিক লেখাগুলো পড়ে ডায়েরিয়ার ভাব হয় তারা দয়া করে সরে পরুন। ফেইসবুক বাংলাদেশের আপাদমস্তক রাজনৈতিক চোরদের ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। এ পৃথিবী অনেক বিশাল। এখানে সংকীর্ণমনাদের স্থান সীমিত। আর যেসব দলীয় কৃতিদাস তাদের নেতা-নেত্রীর রাজনৈতিক মতাদর্শন নিয়ে আমাকে হেদায়েত করতে আসবেন তাদেরকে এক লাথিতে ফুটবল মাঠ পাড় করিয়ে দেব।
- ধন্যবাদ