ভারতীয়দের গোমূত্র পান নিয়ে আমাদের মাথাব্যথার অন্ত নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে আমরা খুবই সরব। অনেকে ছবি অথবা ভিডিও আপলোড করে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করে বুঝাতে চাইছেন প্রতিবেশী দেশের হিন্দুদের চাইতে আমরা কতটা উত্তম! ভার্চুয়াল দুনিয়ার স্বাধীনতায় আপনাকে স্বাগতম। উপভোগ করুন যতদিন পারেন। এ সুযোগ অনন্তকাল খোলা থাকবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। ভারতীয় হিন্দুরা গো-মূত্র পান করে, তাতে আমার আপনার মাথা ব্যথার কারণ কি? গরুকে ওরা দেবতা মানে, তাই গরুর সবকিছুই তাদের কাছে পবিত্র ও পূজনীয়। ভারত সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের দেশ। সে দেশের সামাজিক মূল্যবোধের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ধর্মীয় প্রভাব। প্রায় সব ধর্মের আদলে হিন্দু ধর্মেও আছে উগ্রতা। এর বহিঃপ্রকাশ গরুকে ঘিরে দেখা গেলে খুব কি অবাক হওয়ার থাকবে? পাশাপাশি আমরা যারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ ধর্মের অনুসারী হিসাবে দাবি করি তারা কি মেনে নেব বাংলাদেশের অলিগলিতে শুকর নিধন ও এর বাজারজাতকরণ? এমনটা হলে নাঙ্গা তলোয়ার হাতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পৈচাশিক উল্লাসে গনহত্যায় মেতে উঠতে দ্বিধা করবেনা। পার্থক্যটা এখানে কোথায়, ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বে? আমি শ্রেষ্ঠ আর বাকিরা নিকৃষ্ট, এ কোন শিক্ষা হতে পারেনা। এ স্রেফ শিক্ষার বাই-প্রোডাক্ট। এবার আসুন লেখার সাথে সেটে দেয়া ছবিটার দিকে।
একদল ধর্মভীরু গ্রামবাসী মোনাজাতের মাধ্যমে পরিত্রাণ চাইছে নদী ভাঙ্গনের ধ্বংসাত্মক বিপর্যয় হতে। আমি আপনি ভাল করেই জানি কোন মোনাজাতই এ ভাঙ্গন থামাবে না। কোন এক সুন্দর সকালে নদী কেড়ে নেবে আপনার এতদিনের সাজানো সংসার। এ বছর না নিলেও সামনের বছর তা ফিরে আসতে পারে। এ অভিশাপ কি আসলেই উপরওয়ালার অভিশাপ? যারা সারা জীবন ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর আস্থা রেখে সৎ জীবন যাপনে সচেষ্ট ছিল তাদের উপর কেন এ শাস্তি? এখানেই আসে অন্য এক ভারতের ভূমিকা। সমস্যার গোঁড়া কোথায় তা জানতে আমার হাটতে হবে নদীর গতিপথে। রিভার্স মুডে ফিরে যেতে হবে নদীর উৎসস্থলে। এ যাত্রায় আমাদের গন্তব্য হবে গো-মূত্র পানের দেশ ভারত। কারণ আমাদের প্রায় সবগুলো নদীর জন্ম ভারতে। ওরা উজানে আর আমরা ভাটিতে। বর্ষায় প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতে নদীগুলো ফুলে ফেঁপে বেপরোয়া হয়ে উঠে। সর্বগ্রাসী আগ্রাসনে তলিয়ে দেয় জনপদ। প্রতিবেশী ভারত তার নিজের সীমানা নিরাপদ করার জন্যে নদী আটকে দেয়। বাধ তৈরি করে। অতিবৃষ্টিতে ওরা বাধ খুলে দেয়। অনেকটা বর্জ্য পদার্থের মত পানিকে ছুড়ে ফেলে আমাদের দিকে। আমরা তলিয়ে যাই। আমাদের নদীগুলো দ্বিগুণ তিনগুণ হয়ে খেয়ে ফেলে হাট-মাঠ-ঘাট, বাজার-বন্দর, স্কুল-কলেজ আর মসজিদ-মাদ্রাসা। আবার শুকনা ও অনাবৃষ্টির দিনে ওরা আটকে রাখে নদীর প্রবাহ। আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়। থেমে যায় নদী-পারের মানুষের জীবন। আমরা আবারও মোনাজাতে বসি সৃষ্টিকর্তার আনুকূল্য লাভের আশায়। সময় বয়ে যায়। আনুকূল্য আসেনা। আমরা নীরবে নিঃশব্দে এসব মেনে নেই অভিশাপ হিসাবে। কোন বিচারেই এসব অভিশাপ নয়, বরং মনুষ্য সৃষ্টি অপকর্ম। আর এর মূল হোতা আমাদের প্রতিবেশী ভারত। ভারত তার সীমানার ওপারে নদী নিয়ে ঝামেলা এড়ানোর জন্যেই রাজনীতিতে নাক গলায়। ক্ষমতায় বসায় নিজেদের সেবাদাস। আর আমি আপনি যারা এসব সেবাদাসদের ভোট দিয়ে বৈধতা দেই এক অর্থে বৈধতা দেই নদী ভাঙ্গনের।
প্রতিবেশিদের গো-মূত্র পান আমাদের সমস্যা নয়। আমাদের সমস্যা নদী, সমস্যা অন্যের রাজনীতিতে নাক গলানো, সমস্যা অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে সেবাদাসদের ক্ষমতায় বসানো। সমস্যা কালা আন্ধা হয়ে মরীচিকার পিছু নেয়া।