সময়ের ব্যবধানে ঘটে যাওয়া দুটো ঘটনা। একটা পাঁচ বছর আগের ও অন্যটা গতকালের। বাংলাদেশের কোন এক জেলায় জনৈক ওলামায়ে কেরাম ৪ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছেন। অবশ্য প্রাপ্য শাস্তির জন্যে ওনাকে বেশিদূর যেতে হয়নি। স্থানীয় জনগণের হাতে ধোলাই খেয়ে নাস্তানাবুদ অবস্থায় ছবির ফ্রেমে বন্দী হয়েছেন। পাঁচ বছর আগের ঘটনার নায়ক আওয়ামী গোয়েবলস সমিতির মহাপরিচালক জনাব মাহবুবুল হক হানিফ। ভুয়া নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছিলেন হলফ-নামা। যেখানে উল্লেখ করেছিলেন পূর্বের পাঁচ বছরে ঘটে যাওয়া অলৌকিক এক উপখ্যানের বিবরণ। উল্লেখিত পাঁচ বছরে প্রায় পাঁচ কোটি টাকায় ৭০ একর জমি কিনেছেন। এর মধ্যে ৬৬ একরই সুন্দরবনের পাশে বাগেরহাটের মংলা উপজেলার জয়মনিগোল গ্রামে। তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনটি নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গাজীপুরে কিনেছেন তিন একর জমি। হাতে আছে আরও প্রায় ৪৪ লাখ টাকা। স্ত্রী ও নিজের নামে শেয়ার কেনা আছে এক কোটি ২২ লাখ টাকার। এক কোটি ১৮ লাখ টাকায় দুটি গাড়িও কিনেছেন। সবই করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অফিস সহকারী থাকা অবস্থায়। ওনার নিকট আত্মীয়রা বলছেন সম্পত্তির এ হিসাব মহাসমুদ্রে এক ফোঁটা বৃষ্টি মাত্র। হানিফ সাহেব একই সময় সম্পদ উন্নয়নের মহাবিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন অনেকটা আলিবাবা চল্লিশ চোরের কায়দায়। বলা হয় আওয়ামী অনেক নেতার মত তিনিও বাড়ি করেছেন কানাডার টরেন্টোর বেগম পাড়ায়। ইতিমধ্যে এক পা ওখানে রেখে দিয়েছেন দেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের ভয়ে। হানিফ সাহেবের বিষয়টা এখানে টেনে আনছি অন্য একটা কারণে। কারণ প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবেশ করলেই দেখা অথবা শোনা যায় এই 'মহান' ব্যক্তির উচ্চ কণ্ঠ। প্রতিনিয়ত তিনি হেদায়েত করছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার। হুমকি দিচ্ছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের। উন্নয়নের জারিগান গেয়ে আমাদের এলাকার পাগলা মৌলভির কায়দায় মজমা জমাচ্ছেন। জনগণের একটা বিরাট অংশ এই মজমায় অংশ নিয়ে স্তুতি স্থাবকে ফোঁয়ারা ছুটাচ্ছেন। তারই রেশ ধরে দেশ এখন উন্নতির মহা-জোয়ারে ভাসছে।
ওলামা কেরামগনও নিজদের ভাগ্য ফেরাচ্ছেন। তবে তা অন্য পন্থায়। জৈবিক চাহিদা মেটাচ্ছেন। এবং দিনশেষে সবকিছু জাষ্টিফাই করছেন আল্লাহর নামে। চার বছরের শিশুদের বলৎকার শেষে তেনারা আশেকানে ঝলসিয়া মাহফিলে যোগ দিচ্ছেন। গলা ফাটিয়ে, চোখের পানি আর নাকের পানিতে শ্রোতাদের ভাসাচ্ছেন। টেনে আনছেন সৃষ্টি কর্তাকে, ভয় দেখাচ্ছেন শেষবিচারের। কিন্তু হায়! দিন শেষে তিনিও একজন মাহবুবুল হক হানিফ। আল্লাহ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফাঁদ পেতে সম্পদ আহরণের একদল নিকৃষ্টতম চোর মাত্র।
https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/104538/%E0%A7%AB-%E0%A6%AC%E0%A6%9B%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A7%9C