দেশপ্রেম নিয়ে আমাদের সীমাহীন গর্ব। এ গর্ব প্রকাশ করতেও আমরা কার্পণ্য করিনা। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ২৪/৭ সয়লাব থাকে চেতনার জোয়ারে। কি গানে, কি কবিতায়, কি সভা-সমিতি, কি ব্লগে... হেন কোন ভেনু নেই যেখানে লাখ কোটি ঘণ্টা ব্যয় হয়না মুক্তিযুদ্ধ তথা দেশপ্রেমের গুণকীর্তন ও স্তুতি বন্দনায়। হুজুরদের সিজনাল ওয়াজ যেমন শুরু হয় সৃষ্টিকর্তার নামে তেমনি এক শ্রেণীর চেতনা ফেরিওয়ালাদের দিনো শুরু হয় ১৯৭১, ৩০ লাখ শহীদ, ২ লাখ ধর্ষিতা, পাকিস্তান, রাজাকার, এ জাতীয় চেতনা বর্ধক শব্দ চয়নে। কেউ আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে কটাক্ষ করলে চারদিক হতে গর্জে উঠে চেতনার কামান। এ কামান দাগায় নিয়মিত অংশ নিয়ে থাকেন মোহম্মদ জাফর ইকবালের মত খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ। কিন্তু একটা মোহনায় এসে কি এক অলৌকিক কারণে সবাই বোবা হয়ে যান! চেতনার কামান হঠাৎ করেই বিকল হয়ে যায়। এ মোহনা আমাদের সবার পরিচিত। আমরা দেখেও দেখিনা। শুনেও না শোনার ভান করি। বুঝেও না বুঝার আবু হয়ে থাকি।
বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেশী দেশের ক্ষমতাসীনরা ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছেন! এ তালিকায় নতুন যোগ হয়েছেন শ্রী সুব্রামনিয়াম স্বামী। এর আগে ভারতের আসামের বিজেপি নেতা শিলাদিত্য দেব বলেছিলেন, ‘একাত্তরে স্বাধীনতার পরই বাংলাদেশকে ভারতের দখলে নেয়া উচিত ছিল’। ২০১৬ সালে ঢাকা সফরে এসে ভারতের ওই সময়ের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকার ’৭১ এর বিজয়কে ‘রামের লঙ্কা বিজয়’ এর সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন ‘লঙ্কা বিজয় করে রাম যেমন তা বিভীষণকে দেন; বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ভারত তাই করেছে’। সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে ভারতীয়দের এসব ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করছেনা দেশের ক্ষমতাসীন দল। মৌনতার মিছিলে যোগ হয়েছে দেশের বিরোধী দল, বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী সহ সর্বস্তরের শিক্ষিত সমাজ। পাকিস্তানের উপর দিয়ে উড়োজাহাজে উড়ে যেতে যাদের চেতনা বিষাক্ত হয়, কি এক বিস্ময়কর রোগে তারাও আজ বাক-হীন। ক্ষমতা ও ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট-ভুগিদের কাছে ভারত একটা পবিত্র নাম। প্রতিবেশী দেশের অসুস্থ মন-মানসিকতার এসব বেজন্মাদের পায়ের নীচেই তাদের বেহেস্ত। ওরাই রুটি-হালুয়ার যোগানদাতা ও অবৈধ ক্ষমতার ধারক বাহক। দেশপ্রেমের মুজিবীয় সংগীত যে স্রেফ ভাঁওতাবাজি তা বুঝতে এখন আর মুজিবকোটের দরকার হয়না।