প্রত্যাশা কখন চাহিদায় পরিণত হয়ে গেছে এর সঠিক দিন তারিখ আমাদের জানা নেই। পছন্দ করি আর না করি, এটা এখন এক কথায় বাধ্যতামূলক। হয়ত অর্থনৈতিক বিবর্তনের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে এক সময় প্রত্যাশাকে গ্রাস করে নিয়েছে চাহিদা। যা আমরা মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করিনি। কদিন আগের খবর, বিয়ের অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের ভাণ্ডারে চিংড়ি মাছের কমতি দেখে বিয়ে না করেই সদলবলে ফিরে গেছে পাত্র। যাবার আগে পেছনে রেখে গেছে ধ্বংসলীলা। হয়ত একটা সময় আসবে যখন এই চিংড়ি মাছের সাথে যোগ হবে ইলিশ মাছ এবং তা মেনুতে থাকাটা হবে বাধ্যতামূলক। আমরা অভ্যাসের দাস। স্লোলি বাট গ্রাজ্যুয়েলি অনেকটা পোষা পশু-পাখির মত মেনে নেই দিন বদলের এসব সংস্কৃতি। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপহার সে সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ কেবল বাংলাদেশের সংস্কৃতি না, গোটা পৃথিবী জুড়ে এর ব্যাপ্তি। গ্লোবাল অর্থনীতির অগ্রপথিক খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এর প্রচলন অনাদিকাল ধরে। আপনি বিয়ে করছেন এবং এতে আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সহ পরিচিত অপরিচিত অনেককেই সঙ্গী করতে চাইবেন এ ধারা আমাদের রক্তের ধারা। এর ব্যতিক্রম হওয়াটাই অস্বাভাবিক। গেল শতাব্দীর মধ্য ও শেষ দিকে বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে বিয়ের উপহার মানেই ছিল পিতলের থালা-বাটি অথবা কলস। শহুরে মধ্যবিত্ত নিজেদের সীমিত রাখত মূলত শাড়ি, লুঙ্গি অথবা একটু অবস্থা-সম্পন্ন পরিবারের জন্যে হালকা এক চিলতের একটা গয়না। সময় বদল হয়েছে। নাগরিকদের সামাজিক অবস্থানে হয়েছে সাফলিং-রিসাফলিং। এর প্রভাব বিয়ের উপহারেও দেখা গেছে প্রকটভাবে। আজকাল গ্রামের বিয়েতে পিতলের থালা-বাটি অথবা কলস এখন বিরল ঘটনা। বাংলাদেশের প্রচলিত বিয়ের উপহার নিয়ে ব্লগ লেখার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না। কারণ আমরা প্রাত্যহিক জীবনে এসব নিয়মিত প্রাকটিস করছি। আসুন দূরের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর প্রচলন নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করি।
সংস্কৃতিটা অনেকটা আমাদের মতই সহজ ও সাদা-মাটা। কার্ড ছাপিয়ে দাওয়াত দেয়, এবং দাওয়াতিরা হাতে উপহার নিয়ে হাজির হয় অনুষ্ঠানে। তবে এই সাদা-কালো সংস্কৃতির মাঝেও এমন একটা সংস্কৃতি চালু রয়েছে যার সাথে বাংলাদেশীদের পরিচয় আছে কিনা বলতে পারবোনা। সমস্যার শুরুটা এভাবে; আত্নীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সবাইকে আপনি আপনার বিয়েতে দাওয়াত করেছেন। ওরা নিজ নিজ উপহার প্যাকেট বন্দী করে আপনার হাতে তুলে দেবে। আপনি না খোলা পর্যন্ত বুঝতে পারবেন না এর ভেতরে কি আছে। বিয়ের শানাই শান্ত হওয়ার পর এক ফাঁকে সবগুলো প্যাকেট উন্মুক্ত করে আপনি অবাক হলেন; পাঁচটা ইস্ত্রি, চারটা এলার্ম ক্লক, সাতটা হাতঘড়ি। দশ প্যাকেট কাটলারীজ, আরও অনেক কিছু। প্রথমেই ভাববেন আমার দরকার একটা, সাতটা হাতঘড়ি দিয়ে আমি কি করব! এর চমৎকার একটা সমাধান বের করেছে আমেরিকানরা।
হবু স্বামী-স্ত্রী মিলে স্থানীয় কোন ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরে গিয়ে একটা গিফট রেজেস্ট্রী একাউন্ট খুলবে। ঐ একাউন্টের ডাটাবেইজে ওরা কাঙ্ক্ষিত উপহারের একটা তালিকা তৈরি করে রাখবে। এবং আপনাকে দাওয়াতের যে কার্ড পাঠাবে তাতে বলে দিবে উপহার সিলেক্ট করার জন্যে ঐ ষ্টোরে যেতে। আপনি ষ্টোরে গিয়ে তালিকা হতে একটা আইটেম পছন্দ করবেন। এবং তার মূল্য পরিশোধ করে বাড়িতে নিয়ে আসবেন। ষ্টোরের তালিকা হতে তাৎক্ষণিক ভাবে আপনার কেনা উপহারটা ক্লোজড করে ফেলা হবে। অর্থাৎ দ্বিতীয় কেউ এটা আর কিনতে পারবেনা। একে একে সবাই আসবে এবং তালিকার যে সকল আইটেম এখনও কেউ পছন্দ করেনি কেবল সে আইটেমগুলোর একটা অথবা একাধিক আপনি কিনতে পারবেন। নিমন্ত্রণ পাওয়ার সাথে সাথে যারা কেনাকাটা করতে আসবে তাদের জন্যে তালিকাটা লম্বা থাকে। যারা আমার মত অলস তাদের পছন্দের মাঠটা থাকে খুবই সীমিত। এ ব্যবস্থায় একই আইটেম রিপিট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে খুবই কম, আনলেস পাত্র-পাত্রী নিজেরা এমনটা চেয়ে থাকেন।
যেহেতু মার্কিন সমাজ আমাদের মত গহনা সংস্কৃতি রোগে আক্রান্ত নয়, তাই গিফট রেজেষ্ট্রি তালিকায় এমন কোন আইটেম যোগ করা হয়না যা কিনতে গেলে কারও উপর অতিরিক্ত চাপ পরার সম্ভাবনা থাকবে। বাংলাদেশ বা উপমহাদেশের অন্যকোন দেশে এ সংস্কৃতি চালু আছে কিনা জানা নেই।
আজ এ পর্যন্তই।