একজন একটা প্রশ্ন রেখেছেন, কেবল আওয়ামী লুটপাটের বিরুদ্ধে কেন আমি লিখছি, বিএনপি-জামাত জোট কি লুটপাট করেনি? খুবই বৈধ ও যৌক্তিক প্রশ্ন। এ ব্যপারে আমার উত্তরও পানির মত পরিষ্কার। মাঘ মাসে জ্যৈষ্ঠ মাসের গান কেবল গানই, বাস্তবতার প্রতিকৃতি নয়! বাকিরা গত ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে। আওয়ামী পাহাড় সমান দুর্নীতির ধারে কাছেও তারা ছিলনা। তাই তরতাজা লুটপাট ছেড়ে বাসি লুটপাট ঘাটাঘাটি করা আমার মতে দলীয় সংকীর্ণতার বলয়ে ঘুরপাক খাওয়া মাত্র। বাংলাদেশের রাজনীতির হাশরের ময়দান হচ্ছে সরকারী খাজাঞ্চিখানা। ওখানে সহিসালামতে পৌঁছে বেহেশতের নমিনেশন নিয়ে রুটি-হালুয়া-হুর-পরী আজীবন ভোগ করার যে দৌড় তার অপর নামই বাংলাদেশের রাজনীতি। এ দৌড়ে ক্ষুধার্ত কুকুরের মত শামিল হয়েছেন দেশের রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি খেলোয়াড়, শিল্পী, নায়ক, গায়ক, ভূতপূর্ব সেনা অফিসার, চোর, বাটপার, ধর্ষক সহ হরেক রকম মানুষ। এ যেন আলোমতি প্রেমকুমারের যাত্রা গানের জলসা! খালেদা, তারেক, হাসির চৌধুরী, মুসাদ্দেক হোসেন আর খাম্বা মামুনদের দুর্নীতির পালাগান একনাগাড়ে একাধিক বছর গেয়েছি। এসব লিখতে গিয়ে গায়ে আওয়ামী ব্রান্ডের সিল নিয়েছি। ভয়, হুমকিও মেনুর বাইরে ছিলনা। রাজনীতিতে ভার্চুয়াল দুনিয়ার ইমপ্যাক্ট সমসাময়িক এবং তার বিস্তার এখনও শিশু পর্যায়ে। বিরোধী মিশনে সোচ্চার মওদুদ, মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকা, আমানুল্লাহ আমানদের ব্যাংক একাউন্ট ঘাঁটলে খাজাঞ্চিখানা লুটের গন্ধ এখনো প্রকট হবে। হোসেন মোহম্মদ এরশাদ একাই একটা রাজনৈতিক দল চালাচ্ছেন। ভদ্রলোকের সম্পদের পরিমাণ আলীবাবা চল্লিশ চোরের গুহায় রক্ষিত গুপ্তধনকেও যে হার মানাবে তা বুঝতে অর্থনীতির উপর ডিগ্রীর দরকার হবেনা। এটাই বাংলাদেশের বাস্তবতা। সাকিব আল হাসান নিজ প্রতিভা আর পরিশ্রম দিয়ে ২০০ কোটি টাকা আয় করেছেন। তিনিও জানেন এই ২০০ কোটির কিছুটা রাজনীতিতে বিনিয়োগ করলে ২০০০ কোটির ফ্লাডগেট খুলে যাবে অনেকটা সিসেম ফাঁক মন্ত্রের মত। বছরের পর বছর চাকরি বাকরি ব্যবসা না করে লন্ডনে বাস করতে গেলে টাকা লাগে। জনাব তারেক জিয়া সপরিবারে ওখানে কিভাবে বাস করছেন তার উত্তরও সেই সরকারী খাজাঞ্চিখানা।
যে কোন মানদণ্ডে গেল ১০ বছরের আওয়ামী লুটপাট কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব লুটপাটের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় সংযোজন। তারেক জিয়া গং'রা যদি চুরি করে থাকেন সজীব ওয়াজেদ জয়রা করেছেন ডাকাতি। বিদ্যুতের খাম্বার জায়গা করে নিয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, মাগুরা ইলেকশন জালিয়াতি মহামারি হয়ে গ্রাস করে নিয়েছে দেশের গোটা নির্বাচন ব্যবস্থা। জিন্দাবাদের সিংহাসনে আসীন হয়েছে পরাক্রমশালী জয়বাংলা। চেহারা ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য অভিন্ন। লুটপাট। আওয়ামী লুটপাটে শত কোটি এখন কোন অংক নয়, বরং এড়িয়ে যাওয়ার উপলক্ষ মাত্র। এক স্যাটেলাইট প্রকল্প দিয়ে শেখ হাসিনার তনয় জয় ওয়াজেদ যা কামিয়েছেন তা গোটা জিয়া পরিবারের অবৈধ আয়-রোজগারের দশগুণ। এখানেই পার্থক্য আওয়ামী লীগের। এই দলটির লুটপাটে ঘোমটার দরকার হয়না, মুক্তিযুদ্ধ আর শেখ মুজিবই তাদের ঘোমটা। পদ্মাসেতু নিয়ে পানি ঘোলা হয়েছিল কি বিনা কারণে? বিশ্বব্যাংকের মত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চেতনার ব্রেড এন্ড বাটারে নিমজ্জিত নয়। এরা জাত ব্যবসায়ী। এদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে হাসিনা গং'রা পাহাড় সমান দুর্নীতির যে ছক একেছিল তা ব্যর্থ হয় তাদের দৃঢ়তার কারণে। আমরা অনেকেই এখন নির্মাণাধীন পদ্মাসেতুর পিলার দেখিয়ে গর্ব করছি আর উন্নতির দুধে গোসল করিয়ে দিচ্ছি শেখ হাসিনাকে। একবার কি ভেবে দেখেছি কোথা হতে আসছে এই সেতুর খরচ? দেশের লাখ লাখ খেটে খাওয়া আদম যারা মধ্যপ্রাচ্যের শেখদের চরম অপমান আর বৈরী আবহাওয়াকে মেনে নিয়ে পশুর মত পরিশ্রম করে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন তাদের অর্থে নয় কি? ভলাটাইল মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো সময় যুদ্ধ বেধে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কি হবে আমাদের আদম ব্যবসার। ওভার-নাইট সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত আমিরাত সহ বাকি দেশগুলো বিদায় করতে বাধ্য হবে তাদের বিদেশী শ্রমশক্তি। তারপর? কোথায় পাব আমরা বৈদেশিক মুদ্রা? কিভাবে অর্থায়ন করব তেল, নুন সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ আমদানির? কেবল বাবার নাম ফোলানোর জন্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার জন্যে বিশ্বব্যাংকের ৩% সুদের বিনিয়োগ অস্বীকার করে নিজেদের ভাণ্ডার উজাড় করার নাম উন্নতি হতে পারেনা। এ স্রেফ আত্মহত্যা। এর জন্যে জাতিকে একদিন মূল্যদিতে হবে।