নতুন সহস্রাব্দির এ অংশে এসে নিজকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। এই প্রথম মনে হচ্ছে বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে আমি ধন্য। জন্মসূত্রে বাংলাদেশি হওয়ার যা কিছু ভাল তা এ মুহূর্তে প্রাণভরে উপভোগ করছি। একটা সময় ছিল যখন কিছু কিছু তথ্য জানতে আমাদের ইতিহাসের পাতা ঘাটতে হত। পুরানো নথিপত্র হাতড়ে পরিসংখ্যান দাঁড় করাতে হত। আজকের বাংলাদেশ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে সে কাজ। চিলির সামরিক স্বৈরশাসক পিনাচের বর্বরতা, আর্জেন্টিনায় পেরনের নির্মমতা, হাইতির পোর্ট অ প্রিন্সের অলিগলিতে জেন-বেট্রার্ন্ড অরিসটিড বাহিনীর পৈশাচিকতা অথবা ইথিওপিয়ার মেনগিষ্টো হাইলে মারিয়ামের কেচ্ছা কাহিনী জানতে আমাদের বই অথবা খবরের কাগজের দিকে চোখ ফেরানোর প্রয়োজন ছিল। একজন ক্ষমতা-লিপ্সু স্বৈরশাসক কতটা নির্মম হলে তার নাগরিকদের বিনা বিচারে হত্যা করতে পারে, শাসনযন্ত্র কতটা করাপ্ট হলে তার পুলিশ, সেনাবাহিনীকে বগলদাবা করতে পারে অথবা অবৈধ ক্ষমতার নাট-বল্টু পোক্ত করতে কোন মন্ত্রবলে একটা জাতির ছাত্র, শিক্ষক, বিচারক, বুদ্ধজীবি, কবি, সাহিত্যিক সহ গোটা সমাজকে নিজেদের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত করতে পারে, এসব তথ্য জানার জন্যে সময় ও ধৈর্য ব্যয় করতে হত। সুখবর হচ্ছে, এসব কুশাসন, অপশাসন, নির্মমতা, পৈশাচিকতা, মিথ্যা, ছল-চাতুরী, জোচ্চুরির কাহিনীর সাথে পরিচিত হতে এখন আর আমাকে বিদেশের দ্বারস্থ হতে হয়না। সবকিছুর সমন্বয়ে বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের এমন একটা শাসন উপহার দিয়ে যাচ্ছে যা অধুনা সভ্যতায় খুবই বিরল।
মধ্যপ্রাচ্যের লম্পট আরব শাসক আর সমাজতন্ত্রের নিঁভু নিঁভু আলোতে বেঁচে থাকা দুই-একটা স্বৈরশাসক ছাড়া বাকি পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তে এখন গণতন্ত্র ও মানবতা মুখ খুলতে শুরু করেছে। এখানেই শেখ হাসিনা সরকারের কৃতিত্ব। প্রায় জাদুঘরে ঠাঁই নেয়া ধাপ্পাবাজি নির্বাচনকে তিনি পুনর্জন্ম দিয়েছেন। বাকি বিশ্বের বিকশিত গণতন্ত্রকে বানিয়েছেন আলোমতি প্রেমকুমারের উপন্যাস। ক্ষমতাসীনদের কেন রাতের আধারে তার নাগরিকদের বিনাবিচারে জেল-হাজত অথবা খুন করতে হয় শেখ হাসিনার বদৌলতে এখন কুয়ার পানির মত পরিষ্কার হয়ে গেছে। স্বৈরশাসকদের জন্ম, এর উত্থান ও ব্যাপ্তির প্রমাণ এখন আমার নিজ ঘরে। দরজা-জানালা খুললেই ওদের দেখা যায়। ওদের কেউ কবি, কেউ সাংবাদিক, কেউ গায়ক, কেউ বাদক, কেউবা আবার উর্দিওয়ালা...। ওদের শেখানো বুলি যেন রবীন্দ্র নাথের দুই পাখী কবিতার খাঁচার পাখীর বুলি, তপস্যা যেন আফ্রিকার জঙ্গল হতে ধরে আনা কিন্তা কুন্তিদের তপস্যা। আমি অবাক হলেও রাগ করিনা, কারণ রাজনীতি নামের এই ধাপ্পাবাজি আগামী এক হাজার বছরে পৃথিবীর আর কোথাও ফিরে আসবে কিনা সন্দেহ! ধন্যবাদ শেষরাতে তাজ্জুতের নামাজে ধ্যানমগ্ন শেখ হাসিনাকে। আমার ভাবনায় সবসময় ঘুরপাক খায়, আসলে নামাজ শেষে কি দোয়া করেন তিনি!