আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করেছে! আমরা যারা কিছুটা হলেও দেশীয় রাজনীতির ধারাপাত বুঝি তাদের জন্যে এটা কোন খবর ছিলনা। আ্মাদের জানা ছিল আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার জন্যে এবারের নির্বাচনে হারার কোন অপশন ছিলনা, বরং জেতায় ছিল বাধ্যবাধকতা। জিততে বাধ্যছিল দলটি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শতকারা ৯৮ ভাগ ভোট পাওয়া দলটির বিভিন্ন নেতারা ভোটের আগেই জাতিকে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন এবারের ভোটের সাথে দলটির নেতা-নেত্রীদের বাঁচা মরার প্রশ্ন জড়িত। তাদের জন্যে পরাজয় মানেই ছিল আজরাইলের হাতে নিজেদের সপে দেয়া! আমরা যারা দেশীয় রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত নই তাদের মনে প্রশ্ন জাগতে বাধ্য, কেন এই ভয়? দশ বছরের শাসনামলে দলটি কি এমন করেছিল যার জন্যে রক্তবন্যার আশংকা ছিল? সরকারী প্রোপাগান্ডা মেশিন ও তার সুবিধাভোগী বুদ্ধিজীবি, ছাত্র, শিক্ষক, বিচারক, আইনজীবি, সাংবাদিক, গায়ক, নায়ক, খেলায়াড় সহ সমাজের অনেকে এই সরকারের উন্নয়নের রূপকথা এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মানীর গোয়েবলসীয় কায়দাকেও হার মানিয়েছিল। 'যদি মিথ্যাকে সত্য বানাতে চাও, তাহলে তা বার বার প্রচার কর', এটাই ছিল গোয়েবলসের প্রচারণা কৌশল। এ কৌশল কাজ দিয়েছিল। জার্মানরা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছিল ফিউরোর হিটলারের মিথ্যাচার। অবশ্য এই মিথ্যাচারের মূল্য কেবল জার্মানদের নয় গোটা বিশ্বকে কড়াভাবে গুনতে হয়েছিল। কোটি মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার মাটি। শেখ হাসিনা কি তাহলে নিজকে হিটলার ভাবতে শুরু করেছিলেন?
তত্ত্বাবধায়ক আমলে একটা লেখায় আমি প্রমাণ করেছিলাম ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের জেলখানা ছিল ঐ সময়ের সবচেয়ে ধনী এলাকা। কারণটা ছিল খুব সোজা। জেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরদের সম্পদের সাথে জেলবন্দী রাজনীতিবদের সম্পদ যোগপূর্বক গড় করে যে সংখা পাওয়া গিয়েছিল তা ছিল এস্ট্রোনমিক্যাল। এমনটাই রাজনীতির বাস্তবতা। বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদ মানেই চোর ও চুরির সফল সমন্বয়। এ সমীকরণের বাইরে যাওয়ার রাজনীতি এ দেশে হয়না। তারেক-মামুন গংদের খাম্বা চুরি কোন উপকথা ছিলনা, এ ছিল দেশীয় রাজনীতির রূঢ় বাস্তবতা। বিপর্যস্ত বিএনপি ও তার নেতাদের সমসাময়িক রাজনীতি বিশ্লেষণ করলেই বেরিয়ে আসবে কুৎসিত এক কালো বিড়াল। মওদুদ, আমানুল্লাহ আমান আর মির্জা আব্বাসের দল আজকে নিজ নিজ সম্পদ রক্ষার রাজনীতি করছেন। ক্ষমতার রাজনীতিকে কাজে লাগিয়ে উনারা যে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তা রক্ষা করাই এখন তাদের মূল লক্ষ্য। আওয়ামী লীগ গেল দশ বছর চুরি করেনি, তারা করেছে ডাকাতি। রাস্ট্রের সবকটা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শেখ হাসিনা পারিবারিক সম্পদ বানিয়ে তা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন লুটের জন্যে। ক্ষুধার্ত শকুনের মত আওয়ামী নেতারা তা চেটেপুটে দেখেছেন, লুটেপুটে খেয়েছেন। গোটা দেশকে মরা গরুর ভাগার বানিয়ে তা ডাকাতির স্বর্গভূমিতে রূপান্তরিত করেছেন। এই লুন্ঠন চলেছে ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায় হতে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত। লুন্ঠনের ম্যাপে যেমন ঠাঁই পাবে স্যাটেলাইট, পদ্মাসেতু, স্টকমার্কেটের মত মেগা প্রকল্প, তেমনি স্থান করে নেবে কাজের বিনিময়ে খাদ্যের মত ছিচকে প্রকল্প। এসব প্রকল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের অনেকের নাম মুখে আনা যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি এ নিয়ে কথা বলাও এখন অপরাধ। গোটা জাতিকে লুন্ঠনের আষ্টেপৃষ্টে বেধে শেখ হাসিনা ও তার পরিবার দেশকে পরিণত করছে অপরাধের অভয়ারণ্যে। লুন্ঠনের এ হিমালয়্ তান্ডবে একমাত্র বাধা ছিল নির্বাচন। পথের কটা দূর করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন শেখ হাসিনা। ক্ষমতার প্রথম প্রহরেরই বিদায় করেছিলেন তত্ত্ববধায়ক সরকার অপশন। তারপরের নির্বাচন ছিল শুধুই তামাশা। বাংলাদেশকে এক ব্যাক্তি ও এক পরিবারের তাল্লুক বানিয়ে তাতে আবাদ করেছেন বিভক্তির বিষাক্ত বীজ। এ বীজ চারা হয়ে এবারের নির্বাচনে ফসল দিয়েছে। এ ফসলের মাঠে একসাথে নাইতে নেমেছিল দেশের প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী। সাথে যোগ দিয়েছিল উচিষ্টখোর বুদ্ধিজীবি ও মিডিয়ার দল। ভোট নামের কুৎসিত এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে নিজকে হীরক রাজ্যের রানী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেল বাকশাল বিজাতীতত্ত্বের এই উত্তরসূরী।
বিজয়ের উৎসব করতে পারেন শেখ হাসিনা। কেউ তাতে বাধ সাধবেনা। কারণ সে রাস্তা এখন বন্ধ। কিন্তু এদেশের প্রতিটা সূস্থ মানুষের জানা আছে নির্বাচন নিয়ে কি তামাশা করেছেন তিনি। আজ হয়ত মুখে আচল দিয়ে তিনি কুৎ কুৎ করে হাসছেন আর উপহাস করছেন স্বদেশীদের অসহায়ত্ব দেখে। তবে এ বাধও ভাঙ্গবে। ভাঙ্গতে বাধ্য হবে। যেমনটা ভেঙ্গেছিল ইরাকে, লিবিয়ায়। লিবিয়ার কথিত লৌহমানব আর উন্নয়নের গডফাদার মুয়ামার গাদ্দাফিকে ইঁদুরের গর্ত হতে টেনে বেরকরে এনেছিল দেশটার জনগণ। তারপরের সবটাই ইতিহাস। বাংলাদেশও অপেক্ষায় থাকবে এমন একটা দিনের। হয়ত ৫-১০-৫০ বছর লেগে যাবে। উপসংহার হচ্ছে, মিথ্যা দিয়ে যেমন ইতিহাস লেখা যায়না, তেমনি ওখানে মিথ্যারও বেশীদিন ঠাঁই হয়না।