দেশে তখনো শেখ খেলাফত কায়েম হয়নি। জাতি হিসাবে আমরা বিভক্ত হইনি। ছাত্রলীগের বরকন্দাজ বাহিনীও পথেঘাটে ঠেক দেয়া শুরু করেনি। ঘর হতে মা-বোনদের উঠিয়ে নেয়ার সংস্কৃতি তখনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি। মানুষ মানুষ হয়েই বাস করার চেষ্টা করতো। তেমনি এক সময়ের কথা। তো সে সময়ে সবাই যে সাধুপুরুষ ছিল তা নয়। এই যেমন আমাদের পাড়ার গেসু চোরা (আসল নামটা মনে নেই)। গায়ে গতরে শক্তিশালী এই চোর কাজ-কর্ম না করে কেন যে মানুষের ঘরে হানা দিত তার রহস্য কেউ কোনদিন উৎঘাটন করতে পারেনি। তার চুরির পদ্ধতিটা ছিল অভিনব। সূর্য ডোবার সাথে গায়ে তৈল মেখে নিজকে তৈলাক্ত বানিয়ে কেবল একটা সংক্ষিপ্ত অন্তর্বাস পরে শুরু করত ধান্ধা। হয় সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সবার অলক্ষ্যে ঢুকে পরত কোন ঘরে, অথবা হরেক কায়দায় বাহির হতে খুলে ফেলত ঘরের দরজা। ঘুমের পৃথিবীতে সে ছিল দুর্দান্ত এক মানব। সোনা-দানা, নগদ নারায়ণ, মূল্যবান পোশাক-আশাক, এমনকি সুযোগ পেলে হাড়ি-পাতিল নিয়ে সরে পরত। মাঝে মধ্যে মিশন যে ব্যর্থ হতনা তা নয়। তবে হাতেনাতে ধরা পরলেও তাকে বাহু-বন্দি করা ছিল বড়ই কঠিন কাজ। কারণ তার সারা শরীরে থাকত গন্ধরাজের হাঁস-মার্কা নারিকেল তৈল। অনেকটা বাইন মাছের কায়দায় সে ছিটকে পরে চিতাবাঘের মত দৌড়াতে শুরু করত। তার আস্তানার সন্ধান গোপন কোন খবর ছিলনা। সবাই জানত পাড়ার গেসু চোরার দৌড় তার বাড়ি পর্যন্ত। তাই চোরা গেসুর পিছু নিয়ে সবাই চলে যেত তার উঠানে। ওখানে শুরু হত আরেক খেলা। গিয়াস উদ্দিন গেসু চোরার ছিল দুই স্ত্রী। স্বামীকে চুরিকর্মে পাঠিয়ে দুই সতীন হাতে ধারালো বটি নিয়ে উঠানে অপেক্ষায় থাকত। ভোরের আলোতে বাড়ির আঙ্গিনায় যাকেই দেখত তাকেই বটি হাতে তাড়া করতো। বলে রাখা ভাল স্থানীয় পুলিশের সাথে গেসুর ছিল বড়ই সখ্যতা।
তো আজকের বাংলাদেশের ভোট-চোরদের দেখলে কেন জানি মনের মণিকোঠায় ছোটবেলার সেই গেসু চোরার চেহারা ভেসে উঠে। মাননীয়া প্রধান ভোট চোর আর তেনার দুই পাশের দুই রক্ষক...পুলিশ আর র্যাব!
সত্যের জয়-হোক!