যুদ্ধের মাঠে যুদ্ধরত বৈরী সৈনিক একে অপরের বৈধ টার্গেট। তাই এ মাঠে সৈনিক বধ আইনের চোখে কোন অপরাধ নয়। যুদ্ধের মূল তত্ত্বটাই হচ্ছে এক অপরকে পরাজিত করার মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা। নিরস্ত্র অথবা বন্দী সৈনিকদের সাথে প্রতিপক্ষের আচরণের সীমাবদ্ধতা নিশ্চিত করা আছে জেনেভা কনভেনশনের মাধ্যমে। আইনের যে কোন বিচারে ভারতীয়দের শাসনাধীন কাশ্মীরে এখন যুদ্ধ চলছে। সে যুদ্ধেরও দুই পক্ষ। প্রথম পক্ষ, আধুনিক সমরাস্ত্র সজ্জিত ও যুদ্ধবিদ্যায় সুশিক্ষিত ভারতীয় সেনাবাহিনী। দ্বিতীয় পক্ষ, কাশ্মীরি জনগণ। যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তি। ব্রিটিশরা এ উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে ধর্মভিত্তিক দুটি পৃথক রাষ্ট্রসত্ত্বার স্বীকৃতি দিয়ে যায়। তারই সূত্র ধরে জন্ম নেয় ভারত ও পাকিস্তান। এতদ্ অঞ্চলের প্রতিটা রাজ্যকে স্বাধীনতা দেয়া হয় নিজ নিজ পছন্দের। স্বভাবতই মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যগুলো যোগ দেয়া পাকিস্তানে এবং হিন্দুরা ভারতে। সমস্যা দেখা দেয় কাশ্মীরে। মুসলিম প্রধান ওখানকার মানুষের পছন্দ ছিল পাকিস্তান, কিন্তু রাজ্যের হিন্দু রাজা জনগণের পছন্দকে তোয়াক্কা না করে যোগ দেন ভারতে। সমস্যার সূত্রপাত এখানেই। পাকিস্তান রাতারাতি যুদ্ধ ঘোষণা করে দখলে করে নেয়া কাশ্মীরের একটা বিরাট অংশ। ভারতও তাদের সৈন্য নামাতে দেরী করেনি। গোটা কাশ্মীর ভ্যালির শতকরা ৫৩ ভাগের দখল নেয় তারা, যা আজ জম্মু ও কাশ্মীর নামে পরিচিত। পাকিস্তানের দখলে চলে যায় রাজ্যের ৪৭ ভাগ, যা আজ আজাদ কাশ্মীর নামে আমরা চিনি। কাশ্মীরি জনগণ মেনে নেয়নি উভয় পক্ষের এই দখলদারিত্ব। তাদের ছিল একটাই দাবী; আমাদের নিজেদের পছন্দ করতে দাও আমাদের গন্তব্য, অর্থাৎ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। ভারতীয়দের কাছে এ দাবী কোন বিচারে অগ্রহণযোগ্য তার কোন আইনি ব্যখ্যা আজ পর্যন্ত তারা দিতে পারেনি। কাশ্মীরিদের সামনে একটাই পথ খোলা ছিল, যুদ্ধ। যে কোন মুক্তিকামী জাতির আজন্ম লালিত স্বপ্নই হচ্ছে স্বাধীনতা। কাশ্মীরিরাও এ পথ হতে সরে যায়নি। তারা সীমিত সম্পদ ও সক্ষমতার বেড়াজালে আটকে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে শুরু করে অসম এক যুদ্ধ। কাশ্মীরিদের এ যুদ্ধে স্বার্থ হাসিলের সমীকরণ মেলাতে যোগ দেয় পাকিস্তান। ফলশ্রুতিতে সৌন্দর্যের লীলাভূমি কাশ্মীর ভ্যালি হয়ে উঠে রক্তাক্ত জনপদ। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দখলদারিত্ব ও চরম নৃশংসতার মাঝে বেড়ে উঠতে থাকে একের পর এক কাশ্মীরি প্রজন্ম। কিন্তু অস্ত্র, সম্পদ আর বিশ্ব-মানবতার অবহেলার কাছে মাথা নত না করে নতুন প্রজন্মের কাশ্মীরিরা চালিয়ে যেতে থাকে তাদের পূর্ব পুরুষদের সংগ্রাম।
কদিন আগে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় নিহতে হয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশের ৪২ জন সৈনিক। যে কোন বিচারে এ হামলা ছিল বৈধ। কাশ্মীরিরা সাধারণ কোন ভারতীয়কে হত্যা করেনি। হত্যা করেছে যুদ্ধের মাঠে যুদ্ধরত সৈনিকদের। যুদ্ধের ডেফিনিশনে এ ছিল ক্লাসিক্যাল যুদ্ধ। নিরস্ত্র কাশ্মীরিদের যুগ যুগ ধরে ভারতীয় বাহিনী কচুকাটা করে যাবে আর তারা হাসিমুখে তা মেনে নেবে এমনটা ভাবা হবে চরম বোকামি। খবরে প্রকাশ ২০ বছর বয়সী আত্মঘাতী আদিল দারকে কিছুদিন আগে ধরে নিয়ে চরম নির্যাতন করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। ওখান হতে বের হয়েই সে প্রতিজ্ঞা করে প্রতিশোধের।
কাশ্মীরিদের এ পথ আমাদের পথেরই প্রতিধ্বনি। পাকিস্তানি দখলদারিত্ব হতে মুক্তি পেতে আমরাও লড়াই করেছি। সুযোগ পেলে আমরাও হত্যা করেছি দখলদারদের। এ হত্যা অন্যায় কোন হত্যা ছিলনা। যতদিন মুক্তির আকাঙ্ক্ষা মনুষ্য হ্রদয়ে লালিত হবে কেউ না কেউ এগিয়ে আসবে অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে।