১৯ বছর আগের নিউজিল্যান্ড!

Submitted by WatchDog on Sunday, March 17, 2019

১৯৯৯ সালের শেষদিকেই আমি নিশ্চিত ছিলাম অলৌকিক কিছু না ঘটলে পরের বছর আমি অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে যাচ্ছি। পাঁচ বছর ধরে দেশটায় আছি অথচ তেমন কোথাও যাওয়া হয়নি। দেখা হয়নি অনেক কিছু। পাশের দেশ নিউজিল্যান্ডে বন্ধু সাইফুল থাকে সপরিবারে। ৭০'এর দশকে আমরা একসাথে একই কলেজে রাশিয়ায় লেখাপড়া করেছি। হলের একই রুম শেয়ার করেছি। একই হাড়িতে রান্না করে খেয়েছি অনেকগুলো বছর। ঢাকায় ফিরে যাওয়ার পর চাকরি জীবনের শুরুও একই জায়গায়। সেই সাইফুল হুট করেই একদিন পাড়ি জমায় আফ্রিকার দেশে জিম্বাবুয়ে। সেই হতে দেখা নেই। এত কাছাকাছি থাকার পর দেখা না হওয়ার দুঃখটা ঘোচানোর এটাই ছিল শেষ সুযোগ। সিডনি হতে অকল্যান্ডে তিন ঘণ্টার ফ্লাইট। পৃথিবীর বাতাস তখন গুঞ্জনে ভরপুর। ২০০০ সালকে ঘিরে চলছে হরেক রকম জল্পনা কল্পনা। মিলেনিয়াম বাগ নামের কল্পনার দৈত্য গ্রাস করে নিয়েছে উন্নত বিশ্বের সবকটা দেশ। পৃথিবী ধ্বংসের এটাই বোধহয় মোক্ষম ক্ষণ এমন ভবিষৎবাণী বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল। তো আমার ভাবনাটা ছিল অনেকটা কলা বেচা ও একই সাথে রথ দেখার মত। বিশ্বের যে স্থানগুলোতে ২০০০ সালের প্রথম প্রহর আসবে নিউজিল্যান্ড ছিল তার অন্যতম। সাইফুলকে দেখার পাশাপাশি ২০০০ সালকে বরণ করে এর পরিণতি দেখার ইচ্ছাটা কিছুতেই দমন করা গেলনা। ২৫ শে ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে'তে চেপে বসলাম অকল্যান্ড গামী এয়ার নিউজিল্যান্ডের প্লেনে।

১৯৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যরাত। টেবিল সাজিয়ে নতুন বর্ষকে বরণ করে নেয়ার অপেক্ষায় আছি আমরা। ঘড়ির কাটা শূন্যতে গড়াতে ঘরের বাইরে এসে পরখ করতে শুরু করলাম ভেঙ্গে পরেছে কিনা মানব সভ্যতা। সে রাতে কোথাও কিছু ঘটেনি আকাশে কিছু আতশবাজির ঝলকানি ছাড়া। শেষরাতের দিকে বিছানায় গেলাম। অন্ধকার চিড়ে নতুন সহস্রাব্দির প্রথম আলো ফোটার সাথে বাসার মূল দরজায় বেধড়ক ধাক্কায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। অবাক হয়ে গেলাম এত সকালে কে আসতে পারে! সাইফুল বিরক্ত হয়ে দরজা খুলতে এক ঝাঁক অকল্যান্ড বাসী বাংলাদেশী লম্বা সালাম দিয়ে অনেকটা জোর করেই ঢুকে পরল বৈঠকখানায়। ওরা এসেছে তাবলীগের দাওয়াত দিতে!

এক সপ্তাহের নিউজিল্যান্ড সফরের মেনুতে ছিল রটোরোয়া নামের ভল্কানিক এলাকায় যাওয়া। ওখানে হেলিকপ্টারে চড়ে নীচের অদ্ভুতসব কাণ্ডকারখানা অবলোকন করা। হেমিলটন শহর দেখা। দেশটার বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে অলস সময় কাটানো সহ অনেক কিছু।প্রকৃতির সাথে মনুষ্য সম্পর্কের নিবিড় লীলাভূমি এই দ্বীপে একটা জিনিষ দেখলে শিউরে উঠতে হয়; আর তা হচ্ছে দেশটার রক্তাক্ত রাস্তাঘাট। জংগল হতে বেরিয়ে এসে রাস্তা অতিক্রম করতে গিয়ে প্রাণ হারায় পশুর দল। এবং নির্দিষ্ট কোন জায়গায় নয়। বলতে গেলে গোটা দেশজুড়ে। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ার আক্রমণের পর মার্কিন মুলুক মুসলমানদের জন্যে নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছিল। চিন্তাটা তখন ঘুরপাক খাচ্ছিল; ফিরে যাই অস্ট্রেলিয়ায়...অথবা তাসমান সাগর পাড়ি দিয়ে নিউজিল্যান্ডে। ছোটখাটো কিছু একটা করে কাটিয়ে দেই বাকি জীবন। বাস্তবতা হচ্ছে, হিংসা বিদ্বেষের বিষাক্ত বাতাস এখন আর আটকে নেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্ণবাদী আমেরিকায়। এ বাতাস এখন গ্লোবাল। চাইলেও পালানোর উপায় নেই।

facebook.com/watchdog.bd

ভালো লাগলে শেয়ার করুন