সময়টা বিএনপি-জামাত জোটের সোনালী সময়। চারদিকে লুটপাটের মৌ মৌ গন্ধ। সবাই খাচ্ছে। হাটে-ঘাটে, বাজারে-বন্দরে, নদী-নালায় চুরি চামারির মহোৎসব। ফেইসবুক নামক এন্টি-সরকার প্রপাগান্ডা মেশিন তখনো পৃথিবীর মুখ দেখেনি। বাংলা ইউনিকোডও মাতৃগর্ভ হতে ধরণীতে পা রাখতে পারেনি। ব্লগ বলতে প্রিয় ডটকমের জননী ই-মেলা ডটকমের একক দাপট। চুটিয়ে সময় কাটাচ্ছি আমরা। ঝাল মিটিয়ে খালেদা-নিজামী গংদের ধোলাই করছি। তারেক-মামুন সিন্ডিকেটদের খাম্বা চুরি নিয়ে রামায়ন রচনা করছি। লেখালেখির কোন এক পর্যায়ে আবিস্কার করতে সক্ষম হই প্রতিবাদের মিছিলে আমি একা নই।
অনেকেই আছেন আমার সাথে। দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের হিং টিং ছট মিশিয়ে খালেদা-নিজামী গংদের শরীর হতে কাপড় খুলে নেংটা করার মিশনে অনেকেই নাম লেখাচ্ছে।
সেকি দেশপ্রেম!
সেকি আহাজারী!!
লুটপাট নিয়ে সেকি মাতম!!!
আমার জন্য ধাক্কাটা শুরু যেদিন দেখলাম মানবতার যে কাফেলা নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম যুদ্ধ করছি তাদের প্রায় সবাই হাততালি দিয়ে স্বাগত যানাচ্ছে লগি-বৈঠার পৈচাশিক তাণ্ডব। কালের চক্রে তত্ত্বাবধায়ক নামক মধ্যশক্তির আবির্ভাব হলো। যারা খালেদা-তারেকের মুণ্ডুপাত করার কাজে সকালে-বিকাল পান্তা খেয়ে লুঙ্গি কোচা দিতেন তারাই দেখি গণতন্ত্রের লেবাসে দেশের গলে পঁচে পুঁজ হয়ে যাওয়া রাজনীতির জন্য বায়বীয় কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন।
সেকি কান্না!
সেকি কষ্ট!!
সেকি মায়া!!!
কিন্তু হায়! সেও ছিল ক্ষণস্থায়ী!
নির্বাচন উত্তর আওয়ামী শাসনের উষালগ্নেই বদলে গেলে অনেকের চেহারা। গা হতে গণতন্ত্রের নকশিকাথা ছুড়ে নেমে গেলেন চেতনার সাগরে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, তাই দেশে কোন সমস্যাও নেই। যে কলম হতে আগুনের গোলা বের হতো সে কলম হঠাৎ স্ট্রোক করে পঙ্গু হয়ে গেল। দেশ হতে গণতন্ত্রকে চীর বিদায় করে আওয়ামী শাসন প্রতিষ্ঠা করাই যেন ছিল কলম যুদ্ধের আসল উদ্দেশ্য।
যে তত্ত্বাবধায়কের জন্য হাসিনার পশুর দল রাজপথে পশুত্ব করে রক্তমাংসের মানুষকে থেতলা করেছিল সে তত্ত্বাবধায়ক হয়ে গেল অপ্রয়োজনীয়। খাম্বা চুরির দেশে শুরু হলো চুরির সুনামী।
ব্যাংকের লাখ লাখ কোটি টাকা উন্মত্ত শকুনের মত খুলে-খাবলে খেতে শুরু করল।
শেয়ার বাজারের উপর হামলে পরলো ক্ষুধার্ত নেকড়ের মত।
মানুষ খুন হয়ে গেল রাজার দেশের মৃগয়া শিকারের মত।
গুম করে এতিম করা হলো হাজার হাজার শিশুদের।
এক কালের বীর কলম যোদ্ধারা কোন এক অলৌকিক শক্তিবলে কালা বোবা আন্ধা বনে গেলেন।
আওয়ামী কুশাসন আর অপশাসনের হিংস্র দাত যখন দেশের প্রতি ঘরে হায়েনার মত কামড় বসাচ্ছে তেনারা আমাদের সামনে হাজির হচ্ছেন ৭১'এর রনাঙ্গন নিয়ে।
শোনাচ্ছেন পাকিস্তানীদের অত্যাচারের কাহিনী।
কবিতা লিখছেন শেখ রাসেলকে নিয়ে। গল্প শোনাচ্ছেন ইসলামী জংগিবাদের।
হায় যোদ্ধা! আয়নায় কি নিজের চেহারা দেখেছেন ইদানিং?
না দেখে থাকলে দয়া করে দেখুন।
একজন যোদ্ধা নয়, বরং চার-পা ওয়ালা শ্রেফ একজন শুকরকে দেখতে পাবেন আয়নায়।
মুক্তিযুদ্ধের গান জাতি অনেক শুনেছে।
চুরি মহাসমুদ্রের মহাগর্জন রোধ করতে এসব গান এখন আর কাজ দেয়না।
মানুষ এখন বুঝতে শিখেছে। বুঝতে শিখেছে মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতা মানে কোন ব্যাক্তির পুজা নয়, বিশেষ পরিবারের দাসত্ব নয়।
এ মুহূর্তে জাতির জন্য মুক্তি হচ্ছে আওয়ামী শাসন হতে মুক্তি পাওয়া। জাতির বুকে চেপে বসা হাসিনা নামক হিংস্র পশুকে জঙ্গলে ফেরত পাঠানোর নামই এখন স্বাধীনতা।
অমিত সম্ভাবনার এ দেশ পশুদের থাবায় এখন ছিন্নভিন্ন। সে থাবার ক্ষত মুক্তিযুদ্দ্বের ট্যাবলেট দিয়ে উপসম করার জারিজুরি ইতিমধ্যে ফাঁস হয়ে গেছে।
হ্যালো খাম্বা-চুরি প্রতিরোধের সহযোদ্ধারা...
গোটা দেশ চুরি হয়ে যাচ্ছে এখন...
কোথায় আপনাদের সেই সিংহ গর্জন?