হতে পারে বাংলাদেশকে জানায় আমার ঘাটতি আছে। বেশ ক'বছর গ্যাপ দিয়ে দেশে যাই। বেশী হলে তিন সপ্তাহ হতে একমাস থাকি। পারিবারিক আদর আপ্যায়নেই কেটে যায় বেশীরভাগ সময়। যেসব বিস্ময়কর উন্নতির কথা বলা হচ্ছে হয়ত তা কাছ হতে দেখার সুযোগ হয়না। তাই অনেকসময় স্বঘোষিত মন্ত্রী এম্পিরা যা বলেন, দাবী করেন তা রূপকথার মত মনে হয়। নিজকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যে ইন্টারনেটে যাই। খুঁজে বেড়াই সভ্যতা বিবর্তনের এই অশ্রুত কাহিনী। মনে হয় আমার মত বাকি বিশ্বও যেন আন্ধা, কালা ও বোবা। তাই তারাও চোখ ফেরায় না বাংলাদেশ নামের এই উদীয়মান বাঘের দিকে। বিশ্ব মিডিয়া ঘাঁটলে যা পাওয়া যায় তা হল, বন্যা, খরা, সড়ক দুর্ঘটনা, ব্যাংক লুট, খুন, গুম আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের কালো কাহিনী।
'দশ বছরে আমেরিকাকে পেছনে ফেলবে বাংলাদেশ'...। পিলে চমকে যাওয়ার মত দাবী। জন্মসূত্রে দেশটার নাগরিক হওয়ার কারণে আমার মত লাখ লাখ প্রবাসীর গর্বে বুক গাজী ট্যাংক হয়ে যাওয়ার কথা। এমন দাবীর পক্ষে যদি সত্যতা প্রমাণ করা যায় তাহলে নিশ্চয় আগামী দশ বছর পর বদলে যাবে বিশ্ব রাজনীতির সমীকরণ। আমেরিকা, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ বাকি বিশ্বকে স্ট্রাটেজিক কারণে বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে হবে। হয়ত মার্কিন ও রুশ সম্পর্ক নতুন করে মূল্যায়ন করতে হবে, এবং বাংলাদেশকে মোকাবেলা করার জন্যে নিজেদের পুরানো শত্রুতা ভুলে একে অপরের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়াবে। আমরা বাংলাদেশিরা যেখানেই থাকি, যেভাবেই থাকি তৃপ্তি ও প্রাপ্তির হাসি হেসে জীবন ধন্য করবো।
দুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়াতে একটা কাহিনী পড়ে একটু খটকা লাগলো। কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসে জনৈক প্রবাসী গিয়েছিলেন ক্ষণিকের জন্য বিশ্রাম নিতে। কারণ বাইরের তাপমাত্রা ছিল সহ্যের বাইরে। কম করে হলেও ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। উন্নতির সুপারসনিক বিমানে উঠা দেশটার প্রতিনিধিরা মেনে নিতে পারেননি এমন অযাচিত ও অবৈধ প্রবেশ। তাই তাকে তাৎক্ষণিক ভাবে দূতাবাস ছাড়তে বল হল। ভদ্রলোক প্রতিবাদ করলেন। অগ্রযাত্রার অকুতোভয় সেনারা তা মানবেন কেন? তাই তাকে ধরে নিয়ে দূতাবাসের নির্জন কক্ষে পেটালেন। ম্যাসেজ দিলেন আমেরিকাকে পেছনে ফেলার।
গেল সহস্রাব্দর শেষ দশকটার একটা বিরাট অংশ কাটাতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। বাকি বিশ্বের মত পৃথিবীর এ অংশও ড্রাগের থাবা হতে রেহাই পায়নি। নিউ সাউথ ওয়েলস সরকার এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দিকে না গিয়ে গেলেন নিয়ন্ত্রণের দিকে। কারণ সরকার বুঝতে পেরেছিল এ গ্লোবাল সমস্যা একা একটা রিজিওনাল সরকারের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। অদ্ভুত একটা ব্যবস্থা নিলো বব কারের সরকার। সরকারী স্পন্সরে সিডনিতে বেশকটা ড্রাগ সেন্টার খোলা হল। উদ্দেশ্য, সরকারী মনিটিরিংয়ে ড্রাগ আসক্তরা শরীরে ড্রাগ পুশ করবে। সেন্টার কর্তৃপক্ষ ড্রাগের ডোজ মনিটর করবে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণের বাইরে গেলে তা আটকে দেবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিও এক প্রকার হাইডোজ ড্রাগ। রাজনীতি করতে চাইলে এই ড্রাগ দেশটার রাজনীতিবিদদের জন্যে বাধ্যতামূলক। অনেকটা সিডনি সমাধানের মত আমাদের দেশেও এ সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। গরুর খোঁয়াড়ের মত খোঁয়াড় বানিয়ে রাজনীতিবিদদের গলায় দড়ি ঝুলিয়ে তাদের কথা বলা নিশ্চিত করতে হবে। হয়ত কেবল তখনি 'দশ বছরে আমেরিকাকে পেছনে ফেলবে' এ জাতীয় হাই ডোজ ড্রাগ হতে মানুষ নামের এসব গরুদের মুখ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।