১৯৯৪ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর। আইরিশ প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ডাবলিন হতে ১৯২ কিলোমিটার দূরের শ্যনন এয়ারপোর্ট। ওখানে প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী আলবার্ট র্যানোল্ড সহ উচ্চপদস্থ অনেক সরকারী কর্মকর্তারা জমায়েত হয়েছেন বিশেষ অতিথিকে স্বাগত জানানোর জন্যে। অতিথি আর কেউ নন, পরাক্রমশালী রুশ দেশের প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন। আইরিশ সামরিক বাহিনীর বিশেষ কন্টিনজেন্টও হাজির সামরিক মর্যাদায় রাস্ট্রীয় অতিথিকে অভিবাদন জানানোর জন্যে। সবাই অধীর আগ্রহে চোখ রাখছে আকাশের দিকে। কিন্তু ইয়েলৎসিনকে বহনকারী বিমানের দেখা নেই। খবর পাওয়া গেল রুশ বিমান কাছাকাছি আকাশ সীমায় একঘণ্টা ধরে ঘুরছে। অতিথি অসূস্থ। আইরিশদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে অসূস্থ প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বিমান কেন ঘুরপাক খাচ্ছে। জরুরী অবতরনের মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়াটা যেখানে বাধ্যতামূলক সেখানে আকাশে সময় ক্ষেপনের সমীকরণ কোনভাবেই মেলাতে পারছেনা তারা। একঘণ্টা পর অবশেষে রানওয়ে স্পর্শ করলো এরোফ্লটের বিমান। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সবাই।
সময় গড়ায়। কিন্তু বিমান হতে বরিস ইয়েলৎসিন বের হচ্ছেন না। প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে চিন্তায় পরে গেল সবাই। অবশেষে জানানো হল সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট টারমাকে আসছেন না। তার স্থলে সোভিয়েত ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী দেখা করেবন র্যানোল্ডের সাথে। আইরিশ প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানানোর জন্যে বিমানে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। রুশরা সেটাও অস্বীকার করলো। রহস্যের ছায়া গ্রাস করে নিল শ্যানন এয়ারপোর্ট। শেষপর্যন্ত বরিস ইয়েলৎসিনকে ভেতরে রেখেই সারা হলো রাস্ট্রীয় অনুষ্ঠান। সফর সংক্ষিপ্ত করে বরিস ও তার সফরসঙ্গিরা ফিরে গেল মস্কো। বরিস ইয়েলৎসিনের এহেন আচরণের রহস্য উৎঘাটন হতে অবশ্য বেশী সময় লাগেনি।
মার্কিন শহর সিয়াটল হতে বিমানে বসার পর হতেই রুশ প্রেসিডেন্ট মদ্যপান শুরু করেন। তাও যেন তেন মদ নয়, ৪০% এলকোহলের রুশ ভদকা। ডাবলিন ল্যান্ড করার আগে তিনি এতটাই মাতাল হয়ে পারেন দাঁড়িয়ে বিমান হতে বের হওয়ার কোন উপায় ছিলনা। বিমান একঘণ্টার মত আকাশে চক্কর দেয় এই আশায় হয়ত এ সময়ে প্রেসিডেন্ট নেশা হতে বেরিয়ে আসতে পারবেন। তা আর হয়নি। অবশ্য সাবেক সোভিয়েত অথবা আধুনা রুশ দেশের নাগরিকদের এহেন মাতলামি গোটা জাতির চরিত্রের সাথে কনট্রাডিক্ট করেনা। কারণ, রুশ মানেই ভদকা, আর ভদকা মানেই মাতলামি। হোক তা নীচু স্তরের শ্রমিক অথবা রাস্ট্র প্রধান।
শিল্পোন্নত সাতটি দেশের ৪৫তম জি-৭ সামিট কেবল সমাপ্ত হলো ফ্রান্সের বিয়াররিজ শহরে। এক সময় জোটে রুশরাও ছিল। কিন্তু ইউক্রেইনের ক্রাইমিয়া আগ্রাসনের পর জোটের বাকি দেশ সর্বসম্মতিক্রমে রুশদের কিক আউট করে দেয়। ৪৫ তম সামিটে আমাদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্রান্সে পা রাখার আগেই ঘোষণা দেন এই জোটে রুশদের ফিরিয়ে আনা উচিৎ। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে ট্রাম্পের গোপন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। এমন প্রেক্ষাপটে এ ধরনের প্রস্তাব আগুনে ঘি ঢালার মত কাজ করেছে গোটা বিশ্বে।
পরিবেশ বিপর্যয় ও এর প্রতিকারের উপর সামিট চলছে। সাত দেশের প্রায় সব রাস্ট্র ও সরকার প্রধানরা জমায়েত হয়েছেন গ্লোবাল ওয়ার্মি এর সমাধান নিয়ে আলোচনা করার জন্যে। কেবল নেই ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সাংবাদিক সন্মেলনে ডোনাল্ড জানালেন ঐ সময়টায় তিনি ব্যস্ত ছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর মার্কেল ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেব্দ্র মোদির সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা নিয়ে। এবার সংবাদিকদের অবাক হওয়ার পালা। কারণ জনাব ট্রাম্প যে সময়টার কথা উল্লেখ করলেন ঠিক সে সময় ঐ দুই দেশের প্রধান অতিথিরাও উপস্থিত ছিলেন আলোচ্য সামিটে। এ মিথ্যার কোন জাস্টিফিকেশন দাঁড় করানোর তাগাদা অনুভব করেলন না তিনি।
চীনের সাথে ট্যারিফ যুদ্ধ শুরু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে উনার গর্বের শেষ নেই। চীনকে উচিৎ শিক্ষা দেয়ার এটাই নাকি মোক্ষম সুযোগ। কিন্তু নতুন ট্যারিফের সবটাই যে মার্কিনিদের বহন করতে হবে এমন উপলদ্বি হওয়ার পর ওয়াল স্ট্রীটে ধ্বস নামতে শূরু করেছে। খোদ ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকেই বলছেন রিসেশন আসন্ন। এর প্রভাব পরতে শুরু করেছে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায়। অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তার পুনঃনির্বাচনে। অবস্থা বেগতিক বুঝে পিছু হটার রাস্তা খুঁজছেন তিনি। এবং এখানেও বোমা ফাটালেন। সাংবাদিক সন্মেলনে এসে ঘোষণা দিলেন, চীনের প্রসিডেন্ট নাকি তাকে ফোন করে আপোষের আহবান জানিয়েছে, এবং তিনি সহসাই আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছেন। চীনাদের উত্তর আসতে বেশি সময় লাগেনি। ওরা সাফ জানিয়ে দিল ট্যারিফ নিয়ে দেশটার কেউ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করেনি। এটাও ছিল রাস্ট্রীয় মিথ্যাচার।
বরিস ইয়েলৎসিনের সাথে ট্রাম্পের প্যারালাল করলে এমন কিছু পাওয়া যাবে যা দুই প্রধানের চারিত্রিক কিছু বৈশিষ্টের মিল পাওয়া যাবে। ইয়েলৎসিন বিমান হতে নামতে পারেন নি মাতলামির কারণে। আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের নারী দুর্বলতার কারনেই কি পরিবেশ সন্মেলনে হাজির হতে পারেন নি এ নিয়ে প্রচুর গবেষনা চলছে।