বরগুনার মিন্নিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রকাশ্য দিবালোকে স্বামীকে কুপিয়ে মারার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। যার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়াবে, খুনি নয়ন বন্ডের সাথে জোটবেধে স্বামী রিফাতকে খুনের উদ্দেশ্যে মাঠে নিয়ে আসেন তিনি। এবং চাপাতি হাতে নয়ন ও তার সহযোগীরা যখন ভিক্টিমকে কোপাচ্ছিল নিখুত অভিনয়ের মাধ্যমে নিজকে আড়াল করার চেষ্টা করেছিলেন এই মহিলা। মার্কিন ক্যাবল নেটওয়ার্কে Lifetime নামের একটা ম্যুভি চ্যানেল আছে। এটা আমার অন্যতম প্রিয় চ্যানেল। এখানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা যেসব মুভি দেখানো হয় তার মূল থীম অনেকটা মিন্নি রিফাত কাহিনীর মত। জানিনা মিন্নি ও নয়ন গংরা যখন গোপন বৈঠক করে রিফাতকে খুনের পরিকল্পনা করছিল মার্কিন এই চ্যানেলের কোন প্রভাব ছিল কিনা। বটমলাইন ইজ, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক কনটেক্সটে আমার কাছে এ ধরণের ষড়যন্ত্র একেবারেই অশ্রুত, অবিশ্বাস্য। আনলেস মিন্নি নামের বরগুনার এইমেয়ে অর্গেনাইজড ক্রাইম সিন্ডিকেটের সক্রীয় সদস্য হয়ে থাকেন।
পুলিশ যেহেতু গ্রেফতার করেছে তাই মিন্নি খুনি। তার আর বিচারের দরকার নেই এবং রায় হচ্ছে, এখুনি তাকে ক্রসফায়ারে দেয়া হোক। সোস্যাল মিডিয়া এখন উত্তাল এই দাবীতে। সাথে চলছে মহিলার চরিত্রহনন। সন্দেহ নেই মিন্নি নয়ন বন্ডকে বয়ে করেছিল। যদিও তার নিজের ভাষ্য হচ্ছে, অস্ত্রের মুখে তাকে অপহরণ করে কাবিননামায় সই করতে বাধ্য করা হয়েছিল। নয়ন বন্ডের চেহারা, তার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড, সন্ত্রাষী সংশ্লিষ্টতা র অটোপসি করলে এমন সম্ভাবনা কি একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়?
ধরে নিলাম মিন্নি নয়ন বন্ডকে স্বইচ্ছায় বিয়ে করেছিল। এবং তালাক না দিয়েই রিফাতের সাথে সংসার পেতেছিল। এটা কি রাস্ট্রীয় কোন ক্রাইম, নাকি সোস্যাল ডিসঅবিডিয়েন্স? এর উপর নিশ্চয় দেশের বিচারব্যবস্থার রুলিং আছে, অথবা জনপ্রতিনিধি কর্তৃক আইন পাশ হয়েছে। আইন থাকলে সে আইন লংঘনের শাস্তি থাকাও বাঞ্ছনীয়। আছে কি আমাদের দেশে? থাকলে সেটাও কি ক্রসফায়ার?
আপনি পুরুষ। একটা বিয়ে ও আরও তিনটা সাংগা করার অধিকার উপভোগ করেন আপনি। ঘরে রাখেন স্ত্রী। বাইরে রাখেন প্রেমিকা অথবা রক্ষিতা। এই আপনি আবার মিন্নির বহুগামিতায় ভীষন রাগান্বিত। সমাজ সংসার ক্ষয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে তোলপাড় করছেন সোস্যাল মিডিয়ায়। কেন? কারণ ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে চলে গেছে বরগুনার ঐ মেয়ে? যে ধর্ম আপনাকে চার বিবির মালিক হওয়ার আধিকার দেয়, পাশাপাশি একজন মহিলাকে সারাজীবন ঘরবন্দী দাস বানিয়ে রাখার বৈধতা দেয়, তাহলে আমাদের প্রথমে হাঁটতে হবে সে পথে, যে পথে হাঁটলে একজম মহিলাকেও চার স্বামী রাখার অধিকার দেবে। আপনি পুরুষ। ইশ্বর প্রেরিত অবতার। নিজে চরিত্রহীন অথচ অন্য একজনের চরিত্র নিয়ে গাজী কালু চম্পাবতীর উপন্যাস লিখবেন, গলা ফাটাবেন, সোস্যাল মিডিয়া কাপাবেন...। কেন...?
কোন বিচারে আপনি বরগুনার মিন্নির চাইতে উন্নত জানতে চাইলে সংগোপনে আয়নার সামনে দাড়ান। নিজকে প্রশ্ন করুন। আপনার সব প্রশ্নের উত্তর ওখানেই পাবেন।