রহস্যময় শরতের রাত!
ইন্টারন্যাশনাল মনিটরিং ফান্ড (আইএমএফ) আজকের এক রিপোর্টে বলেছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে মন্দ ঋণের পরিমান দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার কোটি টাকা। যদিও এতদিন ধরে দেশটার সরকার বলে আসছে এমন ঋণের পরিমান এক লক্ষ দশ হাজার কোটি টাকা্র বেশী নয়। বাংলাদেশের সরকা্রী তথ্য বনাম আমাদের এক কালের সিদ্দিক ড্রাইভারের গাড়ির তেল চুরি সংক্রান্ত তথ্যকে যদি তুলনা করতে বলাহয়, আমি অনেক ক্ষেত্রে সিদ্দিক ড্রাইভারকেই বিশ্বাস করবো। তাই আইএমএফের তথ্যকে অবিশ্বাস করার কোন কারণ দেখিনা। অন্তত আমার বিচারে।
এবার আসুন সহজ বাংলায় অনুবাদ করি এই মন্দ ঋণ তত্ত্ব।
বাজারে মন্দ মাছ, মন্দ ফল, মন্দ মাংস পাওয়া যায়, যা ছুঁয়ে, নাকে গন্ধ শুকে আন্দাজ করা যায়। আপনি বলবেন ঋণ আবার মন্দ হয় কি করে, এবং কি করে তা ট্র্যাক করা যায়!
হ্যা, বাংলাদেশে মন্দের আওতায় সবকিছুই আনা যায়। ব্যাংক ঋণও এর বাইরে নয়।
সোজা ভাষায়, দেশের ব্যাংকগুলো হতে নেয়া দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার কোটি টাকার ঋণ এখন ইতিহাস। এর গ্রহিতারা হজম করে ফেলেছে এই অংক, যা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এবার আসুন মেলাই যুবলীগের ক্যাসিনো ব্যবসা বনাম ব্যাংক হতে উধাও হওয়া দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার কোটি টাকার সমীকরণ।
মনে আছে সর্বশেষ তত্ত্ববধায়ক সরকারের কথা? ঐ সরকার তার শুরুতেই বর্তমান সরকারের ক্যাসিনো হামলার কায়দায় রাজনীতিবিদদের অবৈধ সম্পদের সন্ধানে তাদের টয়লেটে পর্যন্ত হামলা করেছিল। তার ফলে বেরিয়ে এসেছিল চাঞ্চল্যকর সব কাহিনী। আমরা শিহরিত হয়েছিলাম সেসব কাহিনী পড়ে। ধিক্কার দিয়েছিলাম রাজনীতিবিদ ও এসব কাজে তাদের সহযোগী ব্যবসায়ীদের।
কিন্তু হায়! আজ ক্ষমতাসীন দলের অংগ সংগঠন যুবলীগের এক নেতার সিন্দুক হতে যে সব অংক বেরিয়ে আসছে তা তত্ত্ববধায়ক আমলে সবার কাছ হতে উদ্ধারকৃত মোট অংকের চাইতেও বেশী। এখানেই পার্থক্য আওয়ামী লীগের শাসন। ওরা যেমন জ্যান্ত মানুষকে রাস্তায় পশুর মত হত্যা করতে পারে, তেমনি পারে চুরির কাঞ্চনজংঘাও জয় করতে। এসব কাজে ওদের বুকের পাটা অনেক বেশী সুগঠিত, অনেকবেশি প্রসস্ত।
প্রশ্ন উঠবে, অর্থ সম্পদ আহরণের এই অসূস্থ দৌড়ে কেবল যুবলীগই কি ছিল একমাত্র প্রতিযোগীে? আমাদের কি বিশ্বাস করতে হবে, আওয়ামী লীগ নামের দানব সাইড লাইনে বসে উপভোগ করেছিল জাতীয় সম্পদ লুটপাটের এই মহোৎসব? নিশ্চয় না! যুবলীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন। লুটপাটের মাঠেও তা্রা সহযোগী্র ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে নিশ্চয়?
এসব বিশ্বাস করারও যথেষ্ট কারণ আছে।
রাতের অন্ধকারে ভোট চুরি, প্রতিপক্ষের নেত্রীকে ২ কোটি টাকা আত্মসাতের ফাঁদে ফেলে জেলে আটক, গণতন্ত্রের সবকটা প্রতিষ্ঠানকে গনধর্ষণের মাধ্যমে ক্ষমতা আকড়ে ধরার মধুটা কোথায় তার কিছুটা হলেও নমুনা আমরা পাচ্ছি যুবলীগের সিন্দুকে। প্রশ্ন উঠবে, তাহলে মূল দল আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাণ্ডারগুলো কোথায়?
এ রহস্য সমাধানে চলুন দেশের ব্যাংকগুলো হতে একটু ঘুরে আসি।
সমসাময়িক আওয়ামী রাজনীতির খাঁটি মধু লুকানো আছে আসলে ব্যাংকের ভল্টে। যুবলীগের লুটপাটের আখড়া যদি ক্যাসিনো হয়ে থাকে, আওয়ামী লুটপাটের ভাগাড় হচ্ছে ব্যাংক।
ব্যাংকের দুই লাখ চল্লিশ হাজার কোটি টাকার মন্দ ঋণের প্রায় সবটাই চলে গেছে আওয়ামী নেতাদের উদরে। ওরা হজম করে ফেলেছে ঐ অংক। ওরা শকুনের কায়দায় চেটেপুটে খেয়ে নিয়েছে অথবা খাচ্ছে ব্যাংক নামের মরা গরুর গোশত। ক্যাসিনো হচ্ছে সে গরুর চামড়া মাত্র, যার বাজার মূল্য যৎসামান্য।
ব্যাংকের ট্রেইল অনেক লম্বা হলেও ক্যাসিনোর তুলনায় অনেক মসৃণ। ক্যাসিনোওয়ালাদের অর্থ আহরণে তাও প্রতিদিন সময় দিতে হয়, শারীরিকভাবে খাঁটতে হয়। ব্যাংক খেয়ে ফেলতে এসবের কিছুই দরকার হয়না। কেবল গায়ে একটা বংগবন্ধু কোট, মুখে মুক্তিযুদ্ধের কাওয়ালী আর নেত্রীর সুনজর থাকলেই যথেষ্ট।
ছবিটা কিছুক্ষণ আগে তোলা। আজ রাতের ছবি। উপরে শরতের খোলা আকাশ। রহস্যময় রাত। অনেকটা শেখ পরিবারের সবার আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠার মতই রহস্যময়!