তিস্তা নামের একটা নদী ছিল

Submitted by WatchDog on Saturday, January 25, 2020

নদী কখনো আত্মহত্যা করেনা।বরং তাকে হত্যা করা হয়। ধর্ষণের পর একজন ধর্ষিতাকে যেভাবে খুন করা হয় একই কায়দায় নদীও ধর্ষিতা হয়ে খুন হয় তিলে তিলে। তিস্তা ছিল তেমনি একটা নদী। এক সময় এর যৌবন ছিল। কল কল শব্দে মুখরিত হতো এর কুল উপকুল। তাকে ঘিরে গড়ে উঠতো জনপদ। জমতো হাট-বাজার। কৃষক তার পণ্য নিয়ে রওয়ান দিতো গঞ্জের দিকে। মানুষের সুখ-দুখের সাক্ষী হয়ে টিকেছিল অনাদিকাল ধরে। আনটিল একদল বর্গী এসে হামলে পরে নদীবক্ষে।

তিস্তা এখন বেঁচে নেই। মরে গিয়ে ধীরে ধীরে ঠাঁই নিচ্ছে ইতিহাসের পাতায়। এমনি এমনি মরেনি উত্তর বাংলার খরস্রোতা এই নদী। ওকে মেরেছে। সুন্দরীর নারীর মতই একে ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষক আমাদের প্রতিবেশী। আর এই ধর্ষণের যোগানদার হিসাবে কাজ করেছে ক্ষমতা-লিপ্সু একদল দেশীয় দালাল। আরও অনেক নদীর মত তিস্তাকেও ওরা ভোগের সামগ্রী হিসাবে উঠিয়ে দিয়েছে প্রতিবেশীর কোলে। কামার্ত প্রতিবেশী তিস্তাকে চেটেপুটে খেয়ে ছুড়ে ফেলেছে পরিত্যক্তা নারীর মত।

ভারত। বিশাল এক দেশ। আমাদের তিনদিকের প্রতিবেশী। আমাদের কথিত স্বাধীনতার একক ঠিকাদার। এর মূল্য দিতে গিয়ে বাংলাদেশ নিজকে তাদের জন্যে বিনামূল্যের পতিতালয় হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। ওরা আসে। উপভোগ করে। এবং দিনশেষে ঘরে ফিরে ভুলে যায় পতিতাদের কথা। তিস্তাকে ওরা ধর্ষণ করছে অনেকদিন ধরে। উজান হতে নেমে আসা এর যৌবনকে দুমড়ে মুচরে আহত করেছে। একে একে ৩৬ জায়গায় বাধ দিয়ে তৈরি করেছে নিজেদের ভোগের সামগ্রী। এ সামগ্রী তিস্তার অববাহিকায় কেড়ে নিয়েছে মানুষের জীবন। তৈরি করেছে মরুময়তা। ধ্বংস করেছে জৈব বৈচিত্র্য। কেড়ে নিয়েছে অঞ্চলের দুই কোটি মানুষের স্বপ্ন।

ওরা আমাদের প্রতিবেশী। ক্ষমতা-লিপ্সু স্থানীয় দালালদের ভাষায় আমাদের স্বামী। আইনের চোখ স্বামী স্ত্রীকে ধর্ষণ করতেই পারে। উন্নত বিশ্বে এ নিয়ে অনেক তর্ক আছে। কিন্তু আমাদের অধুনা রাজাকারের দল যখন উলঙ্গ হয়ে ঘোষণা দেয় ধর্ষক খুশি হলে ধর্ষিতাও খুশি, তখন আর তর্কের কিছু থাকেনা।

স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই। ক্ষমতাসীনদের কাছে স্বাধীনতার বাজারমূল্য এখন অনেকটা লাইফ সাপোর্টিং কোরামিনের মত। জাতির ষণ্মুখ ও পশ্চাৎ-দেশ হতে ঢুকানো হচ্ছে এর প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা। যাদের হজম করতে অসুবিধা হচ্ছে তাদের গায়ে এঁটে দেয়া হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধীর তকমা। যারা এর বিরুদ্ধে মুখ খুলছে তাদের রাতের অন্ধকারে নাই করে দেয়া হচ্ছে। অনেককে লাশ বানিয়ে সতর্কবাণী পৌঁছানো হচ্ছে বাকিদের কাছে। উন্নতির বহুরাঙ্গা ঘুড়ি উড়িয়ে জাতিকে শোনানো হচ্ছে ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসির গান। জাতি এখন ঘুমাচ্ছে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে কি করে ক্ষমতাসীনদের স্লাইস অব কেক ভক্ষণ করা যায়। পঙ্গু ও অথর্ব হয়ে আঁকড়ে ধরছে ভণ্ড হুজুরদের ওয়াজ, মেতে উঠছে ক্রিকেট খেলায়।

প্রতিবেশী ভারতের কাছে শেখ হাসিনার অনেক দেনা। দুঃসময়ে ঠাঁই দেয়ার দেনা। নিজ ছেলের প্রথম স্ত্রীর শ্বশুড়বাড়ি। ওরা অনেকটা কোলে উঠিয়ে বসিয়েছিল ক্ষমতায়। খালেদা-ফখরুলদেরও ভারতের কাছে প্রত্যাশা কম নয়। তারাও আশায় আছে শেখ হাসিনার মত তাদেরও একদিন ক্ষমতাসীন করে দিবে। তারপর তারাও লীগের মত জাতির সর্বাঙ্গ হতে মধু খেতে পারবে। রাজনীতি এখন ভোগের পণ্য, তাই ভোগেই মুক্তির রাজনীতি এখন বল্গাহীন। যার প্রতিফলন দেখছি হাটে-মাঠে-ঘাটে। আমরা এখন আর অবাক হইনা যখন শুনি ব্যাংকের প্রধান-কর্তা ৫০০০ কোটি টাকা লোপাট করে সগৌরবে চেতনার বাণী শোনাচ্ছেন। অবাক হইনা যখন শুনি দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গনে যেসব গবেষণা হচ্ছে তার শতকরা ৯৮ ভাগই ভুয়া। বিস্মিত হইনা যখন শুনি কেবল রাজনৈতিক ভিন্নতার কারণে একদল ছাত্র অন্যদলকে হাতুড়ি পেটা করে তুলে দেয় পুলিশের হাতে। এবং পুলিশ আইন অমান্য কারীদের না ধরে খাঁচা-বন্দী করে ভিক্টিমদের।

জাতি হিসাবে ভারতের কাছে আদৌ কি আমাদের কিছু চাওয়ার আছে? আমরা দেওয়ার জাতিতে পরিণত হয়েছি, নেওয়ার জাতিতে না। নইলে এক সপ্তাহে আমাদের ১৫ জনকে যখন পশুর মত গুলি করে মারা হয়, আমরা নির্বিকার। এ মৃত্যু যেন আমাদের পাওনা হয়ে গেছে। এ যেন শেখ হাসিনার দেনা শোধের অংশ মাত্র। অথচ পাশের দেশ নেপালও রুখে দাঁড়ায়। সীমান্তে তার এক নাগরিককে হত্যা করার কারণে দিল্লী হতে উঠিয়ে নেয় তার রাষ্ট্রদূতকে। একই হত্যায় আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, গরু হিন্দুদের মাতা। তাদের কেন অবৈধ পথে সীমান্তের এপারে নিয়ে আসবো। অথচ পরিসংখ্যান বলে, গোমাতার মাংস রপ্তানিতে আমাদের প্রতিবেশী পৃথিবীর শীর্ষে।

ওরা আমদের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যায় আদম রপ্তানি বাণিজ্যে। সীমান্তে আমাদের নাগরিক হত্যা ওদের কাছে মৃগয়া শিকারের মত। ওদের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি আকাশ সম। আমাদের শিল্প, শিক্ষা, বাণিজ্য সবকিছু পরাভূত তাদের আগ্রাসনের কাছে। ধীরে ধীরে ওরা বদলে দিচ্ছে আমাদের হাজার বছরের মূল্যবোধ।

শেখ হাসিনা অথবা ফখরুল-খালেদার দলে আমাদের মুক্তি নেই। মুক্তি আমাদের নিজদেরই খুঁজতে হবে। এবং তা যতটা সম্ভব দ্রুত। তিস্তা মরেনি। তিস্তাকে খুন করা হয়েছে। খুনি আমাদের প্রতিবেশী। এবং তার স্থানীয় দালাল শেখ হাসিনা এন্ড গং। নদী প্রবাহের উপর আন্তর্জাতিক আইন আছে। প্রতিবেশী ধর্ষকদের সে আইনের আওতায় আনা গেলে তিস্তা ফিরে পাবে তার যৌবন।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন