সব মহামারিই এক সময় বিদায় নেয়, এবং মানুষও ফিরে যায় তার স্বাভাবিক জীবনে। এমনটা হয়ে আসছে হাজার বছর ধরে। মানব সভ্যতার ধাপে ধাপে মহামারি এসেছিল এবং সামনে আরও আসবে। এ ধরণের মহামারী উলট পালট করে দেয় মানব সভ্যতা। উপড়ে ফেলে মানচিত্র। লাখো মানুষ মারা যাওয়ার পাশাপাশি আরও লাখ লাখ আশ্রয়ের সন্ধানে ডিসপ্লেসড হয়। বদলে যায় ভূ-রাজনীতির গতি প্রকৃতি। কভিড-১৯ তেমনি এক মহামারী। এর শুরু হতে শেষ সভ্যতা বিবর্তনে নতুন এক অধ্যায়ের সংযোজন করবে। দুর্ভাগ্য আর সৌভাগ্য যাই বলি, বাস্তবতা হচ্ছে আমরা এই মহামারীর চলমান সাক্ষী। হাজার বছর পর হলেও মানুষ ইতিহাসের পাতা ঘাটতে গিয়ে গভীর আগ্রহ ও ভারাক্রান্ত মনে পড়বে আজকের কাহিনী। প্রত্যেক মহামারীরই ধর্মীয় অথবা সামাজিক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি থাকে বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপট। কভিড-১৯'ও এর বাইরে নয়।
বলাহয় চীনের উহান (Wuhan) শহরের হুনান (Huanan) সী-ফূড মার্কেট হচ্ছে কভিড-১৯'এর সূতিকাগার। এখানেই জন্ম নিয়েছিল ভয়ংকর এই ভাইরাস। এ ধরণের মার্কেটকে অনেকে ওয়েট মার্কেট হিসাবে চেনে। অনেক সূত্রের মতে চীনের হুবেই প্রভিন্সের ৫৫ বছর বয়স্ক জনৈক ব্যক্তি তেমনি এক ওয়েট মার্কেটে প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওয়েট মার্কেটের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে জীবন্ত কুকুর, বেড়াল, বাদুর, লিজার্ড, সাপ সহ হাজার রকমের জীবজন্তু বিক্রির জন্যে সাজানো হয়। ক্রেতাদের সাথে ডিল চূড়ান্ত হলে ওখানেই খণ্ড খণ্ড করে তুলে দেয় গ্রাহকদের ঝুড়িতে। কুকুরের মাথা নিয়ে একজন চীনা মহিলা ঘরে ফিরছে এমনটা অচেনা দৃশ্য নয় চীনের জন্যে। অথবা একই মার্কেটের মোবাইল রেস্টুরেন্টে বসে আস্ত বাদুর চিবিয়ে খাচ্ছে এমনটাও অস্বাভাবিক নয়। বাদুরের পেট হতে কভিড-১৯'এর মত মারাত্মক ভাইরাস সৃষ্টি হতে পারে বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে অনেক আগেই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। কিন্তু 'যা নড়েচড়ে তাই খাওয়ার উপযুক্ত' এমন বিশ্বাস হতে চীনারা সড়ে আসেনি। এর ফলাফল আজ আমাদের সামনে।
সস্তা শ্রম আর ডাণ্ডার জোরে চীনারা এমন এক শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে যার সাথে বিশেষকরে উন্নত বিশ্ব পেরে উঠছেনা। কর্পোরেট গ্রিড এ বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের চুম্বকের মত টানছে চীনা শ্রম। যুক্তরাষ্ট্র সহ উন্নত বিশ্বের প্রায় সব দেশে এখন অনেক কিছুতেই চীনের উপর নির্ভরশীল। আই-ফোনের ম্যানুফেকচ্যারার আইবিএম তার ইকুইপম্যান্টের জন্যে শতভাগ চীনের উপর নির্ভরশীল। ফলাফল, পৃথিবীর অন্যতম ধনী এই কোম্পানি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে তার আমদানি। যার চিত্র ফুটে উঠেছে বাজারে। চীনের অর্থনীতি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশও অনেকক্ষেত্রে চীনের উপর নির্ভরশীল।
বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা জুন-জুলাইয়ের দিকে স্বাভাবিক হয়ে আসবে পৃথিবী। মানুষ কাজে ফিরে যাবে। অর্থনীতির চাকা নতুন করে সচল হবে। যদিও খবর আসছে চীনা অর্থনীতি প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে চেষ্টা করছে উঠে দাঁড়ানোর। সমস্যাটা বোধহয় এখানেই। চীনের হুবেই প্রদেশের ৫৫ বছর বয়স্ক কোন এক ব্যক্তি বাদুরের স্যুপ খেয়ে কভিড-১৯'এ আক্রান্ত হয়ে বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে, অথবা লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছে। চীনারা ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং শুরু করছে তাদের বাণিজ্য। বাকি বিশ্ব যেদিন মুক্তি পাবে সেদিন কোটি কোটি মানুষ পথের ফকির হয়ে ঘুরে বেড়াবে। লাখ লাখ ব্যবসা দেউলিয়া হবে। পৃথিবীর অনেক দেশ তার রাজনৈতিক ভারসাম্য হারাবে। এবং দিন শেষে তড়িৎ রিকোভারির জন্যে আবারও হানা দেবে চীনে।
চীনের মানুষ বদলাবেনা তার কুকুর, বেড়াল, সাপ-কচ্ছপ খাওয়ার অভ্যাস। হয়ত কোন এক সুন্দর সকালে আমরা শুনতে পাবো দেশটার কোন এক প্রভিন্সে নতুন এক ভাইরাসের জন্ম হয়েছে। আমরা ভাববো চীন অনেক দূরের দেশ। ওখানে কি-হচ্ছে এনিয়ে আমাদের বিচলিত হওয়ার কারণ নেই। আমরা ঘুমিয়ে থাকবো। পাশাপাশি পৃথিবীর অলিগলিতে পিপীলিকার মত ছড়িয়ে থাকা চীনারা জন্মভূমিতে বেড়াতে গিয়ে আমদানি করবে নতুন এই ভাইরাস। মাকড়শার জালের মত জাল বিস্তার করবে মহামারী। আমি আপনি হারাবো আমাদের মা-বাবা, ভাই-বোন, সন্তান আর বন্ধু-বান্ধবদের। পাশাপাশি আমাদের অশ্রু নদীতে জন্ম নেবে চায়নিজদের নতুন বাণিজ্য ভাণ্ডার। ওদের মাটি ফুঁড়ে আকাশে উঠবে স্কাই-স্ক্যাপ্রার গুলো। দেশটার জনসংখ্যায় কোন সমস্যা হবেনা। কারণ বন্দুকের নলের মুখ একটু ঢিলা করলেই জনসংখ্যার ঢল নামবে। বাড়বে আরও বাদুর খাদক।
আমাদের বোধহয় সময় এসেছে বাস্তবতা উপলব্ধি করার। সময় হয়েছে এই ঘাতকদের সামনা সামনি মোকাবেলা করার।