গতকাল ছিল আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস। কভিড-১৯ পেন্ডেমিকের কারণে দিবসটা পালনে ছিল বিষণ্ণতা। ১ লাখ ৩২ হাজার মানুষের মৃত্যুর মিছিলে স্বাধীনতার উৎসব ছিল বিবর্ণ। চারদিকে মৃত্যু ভয়। মানুষ স্বাভাবিক জীবন হতে পালাচ্ছে। নতুন করে লিখতে চলছে নিজেদের বেঁচে থাকার কাহিনী।
অনিশ্চয়তার মিছিলে এই প্রথম আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসে সংযোজিত হয়েছে এমন কিছু যা কিছুদিন আগেও ছিল অবিশ্বাস্য। কনফেডারেসিকে ধীরে ধীরে বিদায় জানাচ্ছে দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলো। আমেরিকা স্বাধীন হলেও দক্ষিণের মানুষগুলো মনে-প্রাণে স্বাধীন ছিলনা। ওরা ভুলতে পারেনি দেশটার গৃহযুদ্ধ পূর্বক সময়গুলোর কথা। দাসপ্রথা টিকিয়ে রাখার জন্যে ওরা রক্ত দিয়েছিল। আফ্রিকার জংগল হতে পশু শিকারের মত শিকার করে আনা কৃষ্ণবর্ণের মানুষগুলো আজীবন তাদের সেবাদাস হয়ে থাকবে এমনটাই ছিল তাদের কামনা বাসনা। গৃহযুদ্ধে পরাজিত হয়ে দক্ষিণের ১১টা অঙ্গরাজ্য ইউনিয়নে ফিরে আসলেও তাদের মন ফিরে আসতে পারেনি হোয়াইট সুপ্রেমেসি হতে। স্বাধীনতার ছায়াতলে বছরের পর বছর ধরে প্রমোট হয়েছে তাদের এই অহংকার। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত বাই বর্ন একজন হোয়াইট সুম্প্রেমিষ্টের হোয়াইট হাউসে বসা ছিলে তাদের জন্যে বিশাল এক বিজয়। কিন্তু এ বিজয়ে প্রথমবারের মত বাধা হয়ে দাঁড়ায় জর্জ ফ্লয়েড নামের একজন আফ্রিকান আমেরিকানের মৃত্যু।
পুলিশ কাষ্টেডিতে কালো আমেরিকানদের মৃত্যু অনেকটা ছেলেখেলা হয়ে দাঁড়িয়েছিল দেশটায়। এক দেশে দুই আইন এমনটাই ছিল এ দেশের স্বাধীনতার সনদ। এমনকি পুলিশদের ট্রেনিং পিরিয়ডে হাতে-কলমে শেখানো হতো কালো আমেরিকানদের হত্যার কৌশল। জর্জ ফ্ল্যয়েড ছিল তেমনি এক ভিক্টিম। খোলা আকাশের নীচে হাঁটু দিয়ে গলা চেপে কালো আমেরিকানদের হত্যা করা ছিল পুলিশের জন্যে এক ধরণের নেশা। অতীতে এমন কাজ যারা করেছে ওরা যেমন আইনের বাইরে থেকেছে তেমনি অনেকক্ষেত্রে আদায় করে নিয়েছে প্রমোশন।
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু ছিল টার্নি পয়েন্ট। কালো আমেরিকা রুখে দাঁড়ায়। প্রতিবাদ প্রতিরোধে ফেটে পরে। সাথে যোগদেয় নতুন প্রজন্মের সাদা আমেরিকা। অচল হয়ে পরে বড় বড় শহর। প্রতিরোধের চাপে পরে প্রতিবাদের মিছিলে যোগদেয় কর্পোরেট আমেরিকা। বড় বড় কোম্পানিগুলো জানিয়ে দেয় হোয়াইট সুপ্রেমেসী প্রমোট করে এমন কারও সাথে তারা লেনাদেনা করবেনা। ফেইসবুক নিজেও সহযোগীতা না করায় অল্প কয়েকদিনে হারায় বিলিয়ন ডলারের বিজ্ঞাপন। বড় বড় শহরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা কনফেডারেসির হোয়াইট সুম্প্রেমিষ্টদের মূর্তিগুলো জনতা জোর করে নামিয়ে ফেলে। শুরু হয় নাম পরিবর্তনের পালা। চোখের সামনে বদলে যেতে শুরু করে অতীতের আমেরিকা।
মিসিসিপি ছিল এ মিছিলের বাইরে। এই অঙ্গরাজ্য ছিল কনফেডারেসির নিউক্লিয়াস। ওরা গণভোটের মাধ্যমে বৈধতা দিয়েছিল রাজাকারীয় ফ্ল্যাগের। বেঁকে বসে কর্পোরেট আমেরিকা। তারা শর্ত দেয় পরিবর্তন না আনলে ঐ অঙ্গরাজ্যের কোন ন্যাশনাল ইভেন্টে তারা স্পন্সর করবেনা। এমনিতে দারিদ্রের তলানিতে থাকা এই অঙ্গরাজ্য টিকে থাকার ষ্ট্রাগলে ছিল বিপর্যস্ত, তার উপর কর্পোরেট দুনিয়ার চাপ তাদের অর্থনীতিতে ধ্বস নামানোর সব আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলে। নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় হোয়াইট সুপ্রমেসির এই ঘাঁটি। আইন পাশ করে ফ্ল্যাগ হতে কনফেডেরাসির চিহ্ন নামিয়ে ফেলতে।
এবারের স্বাধীনতা দিবস বিষণ্ণময় হলেও, এই প্রথম বারের মত আসল স্বাধীনতার কিছুটা হলেও ঝলক দেখা গেছে। সময়ই জায়গা করবে আমেরিকান ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার হোয়াইট সুপ্রেমেষ্টিদের স্থান।
ফুটনোটঃ আমেরিকার দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলো ট্রাম্পের দল রিপাব্লিকানদের স্বর্গভূমি। দলটার ভোটব্যাংক।