সূর্য অনেকটাই হেলে পরেছে ততক্ষণে। ভাটা লাগতে শুরু করেছে উত্তপ্ত বাতাসে । বাসা হতে ট্রেইলটার দূরত্ব ১ মাইলের মত। পাঁচ মিনিটের ড্রাইভ। অনেকবার প্লান করেছি ট্রেইলটা ধরে উপরে উঠবো, পাহাড়ের ওপারে কি আছে দেখতে যাবো। কিন্তু সময় করে যাওয়া হয়নি। সময়টা এখন করোনাময়। ইচ্ছা করলেও যেখানে সেখানে যাওয়া যায়না। সোশ্যাল ডিসটেন্টিং এখন ডিসাইসিভ ফ্যাক্টর। দোকানপাট বলতে যা কিছু খোলা আছে সেখানে ডিসটেন্টিং মেনে চলা বাংলাদেশের মতই জটিল। নিজের অজান্তেই হয়ত অনেকে নির্ধারিত দূরত্ব অতিক্রম করে ফেলে।
এমনিতে ঊইকএন্ড ছাড়া বাকি দিনগুলো প্রায় ফাঁকা থাকে ট্রেইলটার আঁকাবাঁকা পথ। উলটো পথে কেউ আসলে তাকে পথ ছেড়ে দেয়া কোন জটিল কাজ না। বাইরে যাওয়ার ইচ্ছাটা চাইলেও মাটি চাপা দেয়া যায়না। বিশেষকরে বাচ্চাদের জন্যে। ওরা অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছে কবে বাইরে যাবো, শুরু করবো স্বাভাবিক জীবন। খোলা আকাশের নীচে ঘোরাফেরার জন্যে ট্রেইলটাকেই বেছে নিলাম এ যাত্রায়। রিনকোনাডা ক্যানিয়ন ট্রেইল। লম্বায় ১ মাইলের কিছু উপরে। আঁকাবাঁকা, উঁচু নিচু ও অসমতল পথ পেরিয়ে ট্রেইলের শেষ মাথায় গিয়ে ফিরে আসলে তা দাঁড়ায় ২ মাইলের কিছু উপরে। এক দিকে ভলকানিক পাথরে আচ্ছাদিত পাহাড়, পূব দিকে তাকালে দিগন্ত-জুড়ে ভেসে উঠবে শহরের প্যানোরমা। নির্মল বাতাস পরিবেশটাকে কাব্যময় করে তুলে। তবে হাঁটতে গিয়ে অন্যমনস্ক হওয়ার উপায় নেই। কারণ রেটল স্নেইক ও কাইয়োটিদের আনাগোনা আছে। ট্রেইলের শুরুতে গাড়ির পার্কিং লটে সবসময় রেঞ্জাররা প্রস্তুত থাকে প্রাথমিক সাহায্যের জন্যে।
অদ্ভুত সুন্দর একটা বিকাল কাটল। বাতাসের তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছিল। সাথে হাল্কা মরুঝড়। গোটা এলাকাটা ভল্কানিক। লাভা জমে রূপান্তরিত হয়েছে নিকস কালো পাথরে। উঁচু পাথারগুলোতে খুঁজলে আদিবাসী আমেরিকানদের হস্ত কর্মের সন্ধান পাওয়া যায়। এলাকাটা রেড ইন্ডিয়ানদের কোন পুয়েবলোর অন্তর্ভুক্ত নয়। এসব আর্টের নিশ্চয় একটা ইতিহাস আছে তার গোঁড়া হয়ত আমাদের শত শত বছর পিছনে নিয়ে যাবে। সন্ধ্যা নামতে কিছুটা ভয় এসে ভর করলো আমাদের। একদিকে কালো পাথারে আচ্ছাদিত পাহাড়, বাতাসের বিরামহীন হিস হিস শব্দ, সাপ আর কায়োটির ভয়, সব মিলিয়ে ঘরে ফেরার তাগাদা অনুভব করলাম। বাচ্চার মনের আনন্দে অনেকটা দৌড়েই অতিক্রম করলো ফেরার ১ মাইল। গাড়ির কাছে আসতেই রেঞ্জারটা হাসিমুখে আজকের মত বিদায় জানালো।