এমন একটা দিন পৃথিবীর এ প্রান্তে আসতে পারে স্বপ্নেও কেউ কল্পনা করেনি। জানুয়ারীতে করোনাভাইরাস ছিল চীন দেশের গল্প। দূরে অনেক দূরে এশিয়ার এক কোনায় চীনের এক প্রদেশে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল এই ঘাতক। কেউ ভাবতেও পারেনি সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে একদিন এই ভাইরাস ১৬৫ দেশে পৌঁছতে পারেব। কিন্তু পৌঁছেছে। এবং তা কোটি কোটি মানুষের দুয়ারে। ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ ঘরে ফিরছে, নিজদের লুকিয়ে রাখছে। অনেক দেশের রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। সেনাবাহিনী চোখ রাখছে মানুষের চলাফেরায়। কাউকে রাস্তায় পেলেই গ্রেফতার করছে। সন্ত্রাষী ভাইরাসের কোন ভ্যাক্সিন নেই। নেই কার্যকর কোন চিকিৎসা। সামাজিক দূরত্ব রক্ষাই এখন একমাত্র ডিফেন্স।
দু'দিন আগেও আমার জন্যে এ ভাইরাস ছিল পশ্চিমের অঙ্গরাজ্য ওয়াশিংটনের ট্রাজেডি। কিন্তু এ মুহূর্তে ভাইরাস এখন দোরগোড়ায়। স্থানীয় সরকার নাগরিকদের বার বার সাবধান করছে। অনুরোধ করছে ঘরে বাইরে পা না রাখতে।
হাইলেভেল কনফারেন্স কলের মাধ্যমে আমার অফিসও তার এমপ্লোয়িদের জানিয়ে দিয়েছে অফিসে আসার বিপদ। দ্রুতই সিদ্বান্ত নিতে হয়েছে আমাকে। বাড়িতে ট্রান্সফার করতে হয়েছে অফিস। গেল ১৩ বছর সপ্তাহের পাঁচ দিন হাইওয়ে ধরে ড্রাইভ করেছি। কি বৃষ্টি, কি তুষারপাত, কি মরু বাতাস...কোন কিছুই বাধা হতে পারেনি। কিন্তু সোমবার হতে সে বাধাই সামনে আসবে। এবং তা করোনাভাইরাস বাধা।
অফিসের পাকিংলট ইতিমধ্যে খা খা করছে। সোমবার হতে আমার গাড়িকেও দেখা যাবেনা সেখানে। সবচেয়ে কষ্টের ব্যপার হচ্ছে কবে ফিরে যেতে পারবো তা কেউ জানেনা। অনেক কিছুই মিস করবো। মিস করবো কলিগদের, মিস করবো হাই-টেনশন, হাই-প্রোফাইল মিটিং গুলো, মিস করবো দুপুর ১২টায় লাঞ্চ রুমের আড্ডা। এ মুহূর্তে আমারা হেরে গেছি। করোনভাইরাস তার আপার হ্যান্ড দিয়ে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু সময় আসবে যখন এ সময় ইতিহাসে ঠাঁই নেবে। আজ হতে একশ বছরে পরেও মানুষ ইতিহাস ঘাটলে জানতে পারবে কি ঘটেছিল একবিংশ শতাব্দির শুরুতে।