হঠাৎ করে দূরের দেশ আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার যুদ্ধে বাংলাদেশিদের আজারি সমর্থন লক্ষ্য করার মত। এক অর্থে দুঃখজনকও। নাগারনো কারাবাখ নিয়ে দুই দেশের বৈরিতা নতুন নয়। এর আগেও এ অঞ্চল নিয়ে যুদ্ধ হয়েছে। নাগোরনো একটি রুশ শব্দ, যার অর্থ পাহাড়ি। কারাবাখ নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের টান পোড়নের একটা ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। সহজ ভাষায় বুঝাতে গেলে ভারতীয় কাশ্মির হবে এর নিকটতম তুলনা।
নাগোরনো কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর স্বীকৃতি আছে। সমস্যা অন্য জায়গায়। কারাবাখের অধিকাংশ বাসিন্দা আর্মেনিয়ান। এবং বছরের পর বছর ধরে আজারবাইজান হতে আলাদা হতে চাইছে। আজারবাইজানের অংশ হলেও নাগরনো কারাবাখ অনেকদিন ধরে স্বাধীন ডি-ফেক্টো দেশ হিসাবে নিজেদের অস্বিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। এক সময় নাগরনো-কারাবাখ রিপাব্লিক হিসাবে পরিচিত ছিল। বর্তমানে এর নাম রিপাব্লিক অব আর্টশাখ। ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিচারে ওখানে আর্মেনিয়ানদের আধিপত্য। যেমনটা ভারতের কাশ্মীরে মুসলমানদের। ভারত হিন্দু প্রধান দেশ। মুসলিম প্রধান কাশ্মীরকে ওরা গায়ের জোরে নিজেদের কাছে রেখেছ। নাগারনো কারাবাখের বেলায় পাকিস্তানের ভূমিকায় আছে আর্মেনিয়া।
ককেসাস পাহাড়ের পাদদেশ অবস্থিত এ অঞ্চল নিয়ে সোভিয়েতদেরও কম ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। আজ যদি কারাবাখীয়দের আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকার দেয়া হতো নিশ্চিতভাবে ওরা স্বাধীন দেশ হিসাবে বেঁচে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করতো। অথবা যদি আজারবাইজান অথবা আর্মেনিয়াকে বেছে নেয়ার পছন্দ দেয়া হত, নিশ্চিতভাবে আর্মেনিয়ায় যোগ দিত।
একটা জাতির ইচ্ছাকে বন্দুকের নলের মুখে আটকে রেখে নিজদের আধিপত্য বিস্তার করা উদাহরণ খুঁজতে আমাদের বেশিদূর যেতে হবেনা। প্রতিবেশী ভারতের দিকে তাকালেই যথেষ্ট। কাশ্মী্রিদের মত নাগারনো কারাবাখিদের লড়াইও ধর্মীয় লড়াই নয়, এ লড়াই একটা জাতির অস্বিত্বের লড়াই। এখানে মুসলমান খ্রীষ্টান প্রসংগ টেনে আজারিদের সমর্থন করা এক অর্থে ধর্মীয় উন্মাদনারই বহিঃপ্রকাশ। আপনি কাশ্মীরিদের বৈধ লড়াইকে সমর্থন করলে নাগরনো কারাবাখের স্বাধীনতার জন্যে আর্মেনিয়ানদের লড়াইকেও সমর্থন করতে হবে।