বাংলাদেশের দূর্নীতি নিয়ে লিখতে গেলে এ বিষয়ে নিজের জ্ঞান ও ইমাজিনেশনকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে এতদিনের জ্ঞান এখন আর কাজে আসবেনা কারণ এ ফ্রন্টে আবিস্মরনীয় বিপ্লব ঘটে গেছে। দশবছর আগেও কি আমার মত একজন সাধারণ পাব্লিক কল্পনা করতে পারতো দেশটার সেন্ট্রাল ব্যংকের ভোল্টের সিঁদ কাটা যায়!
বাংলাদেশকে পিছনে ফেলে দুর্নীতির দৌড়ে যে গুটিকয়েক দেশ এগিয়ে আছে ওখানে খিচুরি রান্নায়ও যে রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি করা সম্ভব তা বুঝানো যাবেনা। বাংলাদেশের দূর্নীতি আসলেই ইউনিক। বাকি বিশ্বের দুর্নীতিকে যদি চুরি বলা যায়, বাংলাদেশের চুরি সে তুলনায় ডাকাতি। চোরেরও কিছু চক্ষু লজ্জা থাকে। সে কারনেই হয়ত সে চুরি করে। এবং তা করে লুকিয়ে এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে। বাংলাদেশের চুরি কিন্তু চুরিই, তবে তা ডাকাতির ফর্মাটে। দূর্নীতি নিয়ে কেউ পিএইচডি করতে চাইলে বাংলাদেশ হবে তার গবেষণার উর্বর ভূমি।
গল্পটা বেশ পুরানো। তবে অনেকেরই হয়ত মনে নেই। নতুন প্রজন্মের কাছে গল্পটা তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। কারণ অনেক কিছুর মত এটা নিয়েও আমাদের গর্ব করতে হবে।
বাংলাদেশের কোন এক উপজেলার কাহিনী। চেয়রাম্যান ও নির্বাহী অফিসার মিলে ঢাউস টাইপের একটা উন্নয়ণ পরিকল্পনা তৈরী করলেন। কমপ্লেক্স প্রোগ্রাম। এর অংশ হিসাবে উপজেলার কোন এক স্থানে বিশাল একটা পুকুর খননেরও প্রস্তাব ছিল। উন্নয়নের সবকটা দুয়ারে নক পূর্বক এই দুই আদম সরকার মহাশয়ের মন গলাতে সক্ষম হলেন। বছর না ঘুরতে বিশাল অংকের টাকা এলো। পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক কোন কিছু খনন না করে বরাদ্দের প্রায় সবটাই নিজেরা ভাগাভাগি করে নিলেন। উচ্ছিষ্ট কিছু বাকিদের পকেটে যায়নি তা নয়।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়।
টার্ম শেষে উপজেলা চেয়ারম্যান ভোটে পরাজিত হলেন, যার মূলে ছিল সেই দূর্নীতি। বছর না ঘুরতে উপজেলায় নতুন চেয়ারম্যান এলেন। যথারীতি দূর্নীতি ফ্রণ্টে নতুন দিগন্ত আবিস্কারের সন্ধানে নামলেন। এবং এখানে আবারও এগিয়ে এলেন সেই নির্বাহী কর্মকর্তা। মোটা মাথার চেয়ারম্যনের কানে তুলে ধরলেন চিকন পরিকল্পনা।
নতুন প্রস্তাব তৈরী হলো। প্রস্তাবে বলা হলো, আগের চেয়ারম্যান জনস্বার্থে যে পুকুর খনন করে গেছেন তা উপকারের বদলে বড় ধরণের অপকার করছে। এই পুকুর ভরাট না করলে জীবন নাশেরও আশংকা আছে। সরকার মহাশয় আবারও টাকা পাঠালেন। তবে এ যাত্রায় ইতিপূর্বে 'খনন করা' পুকুর ভরাটের জন্য।
ঘটনার বাকিটা আশাকরি কারও বুঝতে অসুবিধা হবেনা। ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল বুদ্বি। পুকুর চুরি প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে যারা জড়িত ছিলেন তারা নিশ্চয় প্রশংসার দাবি রাখেন।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে গোটা বাংলাদেশ এখন চুরির নতুন নতুন দিগন্ত আবিস্কারের সন্ধানে নেমে গেছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় হতেই হয়ত এর প্রসার ঘটানো হচ্ছে। কারণ? আমার জন্যে এর কারণ খুঁজতে খুব একটা গভীরে ঢুকতে হয়না। জাতিকে চুরি ধান্ধায় রাখতে পারলে সরকারের পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা সহজ। ঘুম হতে উঠিয়ে জাতিকে যদি চুরির চক্রে ব্যস্ত রাখা যায় তাহলে অবৈধ নির্বাচন সহ উপর দিকের ডাকাতিও লুকানো সহজ হবে। প্রতিবাদ প্রতিরোধকে ঠাঁই করানো যাবে ইতিহাসের পাতায়।
খিচুড়ী রান্না শিখতে বিদেশ ভ্রমণ, হাতধোয়া প্রকল্প হতে কোটি কোটি হাতিয়ে নেয়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট হতে হাজার হাজার কোটি লোপাট করা, এসব আমাদের জন্যে এখন ডাল্ভাত।
চোরদের দল চুরি করবেই। এটাই তাদের ধর্ম। সবচাইতে ভয়ংকর বাস্তবতা হচ্ছে, ধীরে ধীরে আমরা এসব হজম করতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি।