একান্তই নিজস্ব মতঃ
আমেরিকায় ঘটে যাওয়া ৯/১১'এর ঘটনা নিয়ে বাজারে অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব চালু আছে। তার অন্যতম হচ্ছে, আমেরিকা নিজেই নাকি ছিল এই আক্রমনের উদ্যোক্তা। উদ্দেশ্য? এ প্রশ্নের উত্তর ১৬ কোটি বাংলাদেশির কাছে জানতে চাইলে সন্দেহ নেই প্রায় ১৬ কোটি ভিন্নমত পাওয়া যাবে। তবে জনমতের অধিকাংশই বলবে ইসলাম ধ্বংসের জন্যেই সাজানো হয়েছিল এ নাটক। তারপর হয়ত আসবে ইসরায়েলের স্বার্থ। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সভ্যতা বিকাশের অন্যতম পূর্বশর্ত। পৃথিবীর অনেক দেশে এই স্বাধীনতা আইনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা আছে। বাস্তবেও এর চর্চা হচ্ছে। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর চমৎকার উদাহরণ। কারণ এ দেশেও অনেকে বিশ্বাস করে ৯/১১'এর ঘটানার মূল আর্কটেক্ট ছিল মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনী।
মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্রে ২০ বছর ধরে বাস করছি। এ জাতির স্পন্দনের সাথে মিশে আছি। রাজনীতিতে নাম লিখয়েছি। অন্তত নিজের নিরপেক্ষ সত্ত্বা হতে এটা বলতে পারি, দেশটার সরকার অথবা নিরাপত্তা বাহিনী তার ৩ হাজার নাগরিককে দিন-দুপুরে খুন করে পার পেয়ে যাবে এটা এমন দেশ না। এ দেশে প্রেসিডেন্ট অথবা সরকারই সব না। ব্যালেন্স অব পাওয়ার নিশ্চিত করার জন্যে এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চের বাইরেও আছে বিচার ও শাসন ব্যবস্থা। তিন ব্যবস্থা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। এখানে সবাইকে তার কর্মের জবাব দিতে হয়। প্রেসিডেন্টও এর বাইরে নন। জবাবদিহিতার এতগুলো স্তর ফাঁকি দিয়ে কোন বিশেষ ব্যক্তি অথবা গ্রূপের ষড়যন্ত্রের কাছে আমেরিকানরা মাথানত করবে এমনটা অনেকে বিশ্বাস করলেও আমি করিনা।
সন্দেহ নেই ৯/১১ আক্রমণের মূল বেনিফিশিয়ারী ইসরায়েল। এর জন্যে এককভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করলে নিশ্চয় অবিচার করা হবে। ঘটনা ঘটিয়েছে ওসামা বিন লাদেন ও তার জংগী সংগঠন আল কায়েদা। আক্রমণের উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনার সাথে আমরা কমবেশী সবাই পরিচিত। রুশ দখলদারিত্ব হতে আফগানিস্তানকে মুক্ত করতে মার্কিনিরাই জন্ম দিয়েছিল ওসামা বিন লাদেন ও তার দলকে। নগদ অর্থ, অস্ত্র ও মাঠ পর্যায়ের ট্রেনিং দিয়ে তাদের সাহায্য করেছিল। সোভিয়েতদের শোচনীয় পরাজয়ের সাথে আমেরিকানরা ঐ অঞ্চল ত্যাগ করে। তারা ত্যাগ করলেও ত্যাগ করেনি ওসামার মত কট্টর জংগীরা। ওরা আফগানিস্তানে থেকে যায়। এবং মোল্লা ওমরদের মত কসাইদের নিয়ে ইসলামী হুকুমত কায়েমের অলীক স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। বলা হয় মার্কিনিরা যখন আফগানিস্তান ত্যাগ করে ওসামা বিন লাদেনের নিজস্ব পকেটে তারা নগদ ২০০ মিলিয়ন ডলার রেখে যায়।
ধর্মীয় উন্মাদদের উন্মাদনা কেবল মার্কিন মাটিতেই সীমাবদ্ধ ছিল তা নয়। রক্ত ঝড়েছে লন্ডন, মাদ্রিদ সহ ইউরোপের অনেক শহরে। ৯/১১'র পর লক্ষনীয় যে পরিবর্তনটা সহজেই অনুমেয়, তা হচ্ছে ইউরোপ সহ বাকি অমুসলিম বিশ্ব প্যালেষ্টাইনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি হতে সমর্থন উঠিয়ে নিয়েছে। এটাই ছিল ইসরায়েলের মূল বেনিফিট। এ জন্যে ইসরায়েলীদের কিছু করতে হয়নি। বরং আল কায়েদার বোমাবাজি তাদের হয়ে কাজ করেছে। একটা সময় ছিল যুক্তরাষ্ট্র বাদে প্রায় গোটা পশ্চিমা বিশ্ব ছিল কট্টর ইসরায়েল বিরোধী। অবস্থা বদলেছে। এখন আমিরাত, বাহরাইনের মত দেশগুলো ঝুকছে ইসরায়েলের দিকে। এরও অন্যতম কারণ বিন লাদেনের বোমাবাজী। আরব দেশগুলোও বুঝে গেছে প্যালেষ্টাইনের ভবিষৎ অনিশ্চিত। নিজেদের রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে ইসরায়েল তথা মার্কিন সরকারকে হাতে রাখা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
৯/১১;র আক্রমণ হয়ত মার্কিনিদের জন্যে সাময়িক বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। কিন্তু তা ছিল অস্থায়ী। ম্যানহাটনে এখন টুইন টাওয়ারের চাইতেও উঁচু টাওয়ার মাথা উঁচুকরে দাঁড়িয়ে আছে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ৯/১১'র কোন ছায়াই এখন আমেরিকায় নেই। কিন্তু এর ছায়া স্থায়ী হয়ে গেছে মুসলমানদের পরিচয়ে।